মোদিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানালেন ট্রাম্প
Published: 4th, February 2025 GMT
আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে সফরের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই আমন্ত্রণ এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি সামরিক বিমান ভারতের অভিবাসী প্রত্যাশীদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। খবর রয়টার্সের।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এই সফরের বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্ভবত আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর এক সপ্তাহ পরে ২৭ জানুয়ারি মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মোদি। ওই ফোনকলে বাণিজ্য, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর ফোকাস-সহ উভয় দেশের “বিশ্বস্ত” অংশীদারিত্বের দিকে কাজ করতে সম্মত হন মোদি এবং ট্রাম্প। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পর এটাই হবে মোদির প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।
ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুসারে, মোদি তার দুই দিনের প্যারিস সফরের পরে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে এই বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। আগামী ১০ এবং ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাকশন শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্সের প্যারিস যাবেন তিনি।
যদি প্যারিস থেকে মোদি যুক্তরাষ্ট্রে যান, তবে এই সফর অভিবাসন এবং শুল্ক নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভারতের উদ্বেগের মধ্যেই হবে। এদিকে নথিবিহীন ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো শুরু করেছে ওয়াশিংটন। মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি সি-১৭ উড়োজাহাজ বেশ কয়েক জন ভারতীয়কে নিয়ে রওনা যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস বিষয়ক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন অঙ্গরাজ্য থেকে উড়োজাহাজটি ছেড়েছে, ভারতের কোথায় সেটি অবতরণ করবে এবং উড়োজাহাজটিতে কতজন ভারতীয় রয়েছেন— এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি, তবে আইসিই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পর ভারতের ভূখণ্ড স্পর্শ করবে বিমানটি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাথমিকভাবে ১৮ হাজার ভারতীয় নথিবিহীন অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদেরই প্রথম ব্যাচটিকে তোলা হয়েছে বিমানে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত দলটিই নেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) হয়ে এই সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না। এ ছাড়া নির্বাচনে কে অংশ নেবে, তা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আমাকে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে ‘হতচকিত’ বোধ করেছিলাম। আমার ধারণা ছিল না, সরকারের নেতৃত্ব দেব। আগে কখনও সরকার চালাইনি। অথচ আমাকেই প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাপারটি যখন ঠিক হয়ে গেল, তখন আমরা কাজগুলো সংগঠিত করতে শুরু করি। আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, দেশের জন্য অর্থনীতি ঠিক করা আমাদের অগ্রাধিকার ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় তাঁর সরকারি বাসভবনে বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া সংবাদদাতা সামিরা হুসেইনকে সাক্ষাৎকারটি দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যাপক ইউনূস এ বছরের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজনের আশা করছেন। ভারতে পালিয়ে গিয়ে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা ও তাঁর দল এতে অংশ নেবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি রয়েছে। তবে ভারত এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এবং অর্থনীতিও। এটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া অর্থনীতি, একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি। এটি এমন যেন ১৬ বছর ধরে কিছু ভয়ংকর টর্নেডো বয়ে গেছে এবং আমরা টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পর তিনি কঠোরভাবে দেশ শাসন করেন। তাঁর আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্যরা নির্মমভাবে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালান। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা ও জেলে পাঠানোর ব্যাপক অভিযোগ ছিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পর আন্দোলনকারীদের অনুরোধে অধ্যাপক ইউনূস নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে দেশে ফিরে আসেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চলতি সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। বিষয়টি নির্ভর করবে সরকার কত দ্রুত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে পারে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ সংস্কার প্রয়োজনীয়।
শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যদি আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত সংস্কার করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে আমরা নির্বাচন করতে পারব। যদি সংস্কারের দীর্ঘ সংস্করণ থাকে, তাহলে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।
গত গ্রীষ্মে বাংলাদেশে হওয়া সহিংস বিক্ষোভের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা থেকে এসেছি। তখন মানুষকে গুলি করা হচ্ছিল, হত্যা করা হচ্ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে প্রায় সাত মাস চললেও ঢাকার মানুষ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি। পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ভালো একটি আপেক্ষিক শব্দ। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে তা ঠিক আছে। এখন যা ঘটছে, তা অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
দেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য আগের সরকারকে দায়ী করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এসব জিনিস ঘটুক, তা সমর্থন করছি না। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, আমরা কোনো আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর নই, যা আমরা হঠাৎ তৈরি করেছি। এটি সেই দেশের ধারাবাহিকতা, যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি; এমন একটি দেশ, যা বহু বছর ধরে একইভাবে চলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার নৃশংস শাসনের শিকার মানুষ এখনও ক্ষুব্ধ। ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী দমনপীড়নের জন্য তাঁর বিচার দাবিতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামেন। এখন অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ হাসিনার প্রয়াত বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের সদস্যদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা ইউটিউবে বক্তব্য দেবেন বলে তাঁর সমর্থকদের বলার পর এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
অন্তর্বর্তী সরকার সহিংসতাকে ন্যায্যতা দিচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে আওয়ামী লীগের সদস্যদের দাবির বিষয়ে বিবিসি জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সরকারের সমর্থনে কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে আদালত আছে, আইন আছে, থানা আছে। তারা গিয়ে অভিযোগ করতে পারে। মামলা করতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনি অভিযোগ করার জন্য শুধু বিবিসির সংবাদদাতার কাছে যাবেন না। আপনি অভিযোগ করতে থানায় যান এবং দেখুন আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে কিনা।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের বিদেশি সহায়তায় কাটছাঁট এবং তাদের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অর্থায়নের প্রায় সব কর্মসূচি কার্যকরভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মতো দেশে প্রভাব ফেলবে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এটি উপকারী ছিল। কারণ, তারা এমন কিছু করে এসেছে, যা আমরা করতে চেয়েছিলাম। যেমন– দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো বিষয়, যা সঠিকভাবে করার সামর্থ্য এখনও আমাদের হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তৃতীয়। দেশটি গত বছর বাংলাদেশকে ৪৫ কোটি মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা হবে– অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যখন এটা ঘটবে, আমরা তা পূরণ করব।