কোন উপদেষ্টা ব্যবহার করেন কয়টি গাড়ি
Published: 4th, February 2025 GMT
মন্ত্রীদের সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহারের বদনাম বেশ পুরোনো। ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারি গাড়ি নিয়ে মন্ত্রীদের ‘বাহাদুরি’ সে সময় কুড়িয়েছিল তিরস্কার। সবকিছু আমূল বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা এখন একই পথের পথিক। সরকারি গাড়ি ব্যবহারে তারাও নিয়ম-নীতির ধার ধারছেন না। বিধি অনুযায়ী, উপদেষ্টাদের একটি করে সরকারি গাড়ি পাওয়ার কথা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো কোনো উপদেষ্টা নিজের ও দপ্তরের নামে তিন থেকে চারটি সরকারি গাড়ি দখলে রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা পরিবারের সদস্যরা সেই গাড়িতে সওয়ার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (পিএস), সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), জনসংযোগ কর্মকর্তারাও (পিআরও) কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাড়ি হাঁকাচ্ছেন।
সমকালের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি গাড়ি ব্যবহারের দিক থেকে এগিয়ে আছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। প্রভাব খাটিয়ে এই উপদেষ্টা দুটি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থেকে নিয়েছেন একটি (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪৫২৩৩), অন্যটি সরকারি পরিবহন পুল (ঢাকা মেটো-ভ-১১১৮৩৯) থেকে নেওয়া। পরিবহন পুলের গাড়িটি বেশির ভাগ সময় উপদেষ্টার পরিবারের কাজে ব্যবহার হয়। ওই গাড়ির চালক আলমগীর বলেন, উপদেষ্টা স্যারের চালক তিনজন। দু’জন স্যারের ডিউটি করি। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের চালক টিটু সবসময় স্যারের বাসায় ডিউটি করেন।
ফারুক-ই-আজমের দপ্তরের নামে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে আরও দুটি গাড়ি। সেগুলো তাঁর পিএস ও পিআরও ব্যবহার করছেন। এই মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী পিএস লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.
এ ব্যাপারে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জিপটাই বেশি ব্যবহার করি। জ্বালানি খরচও মন্ত্রণালয় দেয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া পরিবহন পুলের গাড়িটা বাসায় থাকে। দুজন চালক আছে।’ নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের গাড়ি এভাবে ব্যবহার করা যায় কিনা– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ওইভাবে দেখিনি। মন্ত্রণালয়ের সচিব দিয়েছেন, তাই ব্যবহার করছি।’ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গাড়ি পিএস-পিআরও ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে থেকে যেভাবে ব্যবহার হয়ে আসছিল, সেভাবেই ব্যবহার হচ্ছে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ একাই ব্যবহার করছেন তিনটি গাড়ি। এর মধ্যে পাজেরো স্পোর্ট বড় জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ- ১৪৭৪০৪), প্যারাডো (ঢাকা মেট্রো ঘ- ১৮৪৭৫৭) এবং পরিবহন পুল থেকে নেওয়া টয়োটা ক্যামরি। এসব গাড়ি উপদেষ্টা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মিলেমিশে ব্যবহার করছেন। অর্থ উপদেষ্টার পিএস ব্যবহার করেন জনতা ব্যাংকের একটি জিপ (ঢাকা মেট্রো গ-১৫৭২৮৭), সঙ্গে চালকও ফ্রি।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৫৯১৫) ও পরিবহন পুলের ক্যামরি ব্যবহার করতেন। তাঁর পিএস ব্যবহার করতেন চালকসহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের গাড়ি। স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার পর উপদেষ্টা সজীব (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৯১০০) ও তাঁর পিএস (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৫৩২৮), এপিএস (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৫৩২৬) ব্যবহার করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাড়ি ও চালক। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এপিএসদের গাড়ি ব্যবহার বৈধও না, অবৈধও না। কারণ, পদবি অনুযায়ী গাড়ি ব্যবহার করা যায় না। তবে যখন উপদেষ্টার জরুরি কাজ করতে হয়, তখন এই গাড়ি ব্যবহার করি। আবার উপদেষ্টার সঙ্গে থাকলে তাঁর গাড়িতেই উঠি।’
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ব্যবহার করছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮২২৮০) ও পরিবহন পুলের একটি টয়োটা ক্যামরি গাড়ি। তাঁর পিএস ব্যবহার করছেন আরেকটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-২১৯২০৯)। এ ছাড়া খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ব্যবহার করছেন খাদ্য অধিদপ্তরের প্রকল্পের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১২৯৯২১) ও পরিবহন পুলের ক্যামরি। আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমি একজন উপদেষ্টা, মানে মন্ত্রী। আমি খাদ্য অধিদপ্তরের একটা জিপ ব্যবহার করছি, আর পরিবহন পুলের গাড়িটা বাসায় থাকছে।’ এতে নিয়মের ব্যত্যয় হচ্ছে কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘকাল থেকে এটা হয়ে আসছে। সচিবরাও দুইটা করে গাড়ি ব্যবহার করছেন।’
উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ব্যবহার করছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৯৪৯৬) এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন চড়ছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো ঘ-২১০৪১১)। তাদের দু’জনের পুলের গাড়ি ব্যবহার করছেন পরিবারের সদস্যরা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ব্যবহার করছেন নম্বরহীন একটি জিপ গাড়ি। বাড়তি গাড়ির জন্য চালকের বেতন থেকে শুরু করে তেল খরচ সবই বহন করছেন উপদেষ্টা ও তাদের দপ্তরের কর্মকর্তারা।
এদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম শুধু পুলের একটি গাড়ি বরাদ্দ নিলেও চালক পেয়েছেন দু’জন। তারা হলেন হাবিবুর রহমান ও সুকান্ত কুমার উজ্জ্বল। চালক হাবিবুর বলেন, ‘আমরা দুইজনই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ডিউটি করি।’
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমরা ২২ উপদেষ্টাকেই একটি গাড়ি ও একজন চালক বরাদ্দ দিয়েছি। শুধু বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পুলের গাড়ি নেননি।’ স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে দু’জন চালক দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবহন পুলে চালক সংকট আছে। উপদেষ্টাদের একাধিক চালক দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
উপদেষ্টাদের বাড়তি গাড়ি দেন সচিবরা
আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর নামে বরাদ্দ ছিল তিন থেকে চারটি গাড়ি। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ওইসব গাড়ি বিভিন্ন দপ্তরে জমা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপদেষ্টাদের সেসব গাড়ি নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ জোগান। সচিবদের এমন প্রস্তাবে রাজি হয়ে অনেক উপদেষ্টা এখন বাড়তি গাড়ি ব্যবহার করছেন।
এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, প্রকল্পের গাড়ি উপদেষ্টাদের দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করেছে প্রশাসন শাখা। আগের মন্ত্রীরা প্রকল্পের এসব গাড়ি ব্যবহার করতেন, সেই নিয়মে বর্তমান উপদেষ্টাদের তা দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ব যবহ র করছ ন কল য ণ ট র স ট উপদ ষ ট দ র উপদ ষ ট র য উপদ ষ ট প রকল প র র উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট ব যবহ র র পর ব র র ক মন ত র সরক র র র পর ব র প এস প আরও র একট
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মঈন খানের বৈঠক
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। আজ বুধবার রাজধানীর বারিধারায় দেশটির দূতাবাসে এ বৈঠক হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের এক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক নিয়ে কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
তবে সূত্র জানায়, চলতি মাসের ২৫ ফেব্রুয়ারি ড. আব্দুল মঈন খান এর নেতৃত্বে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো সমন্বয়ে একটা টিম টিম চীন সফর করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ ইস্যুতে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে।