দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কর্তন
Published: 4th, February 2025 GMT
গোপালগেঞ্জর কোটালীপাড়ায় দ্বিতীয় বিবাহ করায় স্বামী রুবেল সরদার (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীর পুরুষাঙ্গ কেটে দিয়েছে স্ত্রী। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের বিরামেরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত রুবেল সরদার বিরামেরকান্দি গ্রামের মনজেল সরদারের ছেলে ও ঘাঘর বাজারের থাই অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রুবেল সরদার ১২ বছর আগে বিরামেরকান্দি গ্রামের আমির আলী ফরাজীর মেয়ে রেশমা বেগমের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে বিবাহ করেন। অভিযোগ রয়েছে, বিয়ের পর থেকেই রুবেল সরদারের অন্য নারীদের সাথে পরকীয়া থাকায় রেশমা বেগমের সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো।
গত ৩ মাস আগে হিন্দু ধর্মের এক নারীকে বিয়ে করেন রুবেল সরদার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রেশমা বেগম সোমবার গভীর রাতে ঘুমের ঘরে নাইফ কাটার ব্লেড দিয়ে স্বামী রুবেলের পুরুষাঙ্গ কেটে দেয়।
এ সময় রুবেল সরদারের চিৎকারে বাড়ির লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা রুবেল সরদারকে ঢাকার পপুলার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টার ধানমন্ডি শাখায় পাঠান।
রুবেল সরদারের মা সাফিয়া বেগম বলেন, “আমার ছেলে রুবেল রাতে বাড়িতে আসার পরে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে রুবেলের চিৎকার শুনে আমিসহ বাড়ির লোকজন আসলে রুবেলের স্ত্রী দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে রুবেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করি।”
এ ব্যাপারে রুবেলের স্ত্রীর রেশমা বেগমের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বোন ফতেমা বেগম বলেন, “আমার বোনের ২টি সন্তান রয়েছে। এর পরেও গত ৩ মাস আগে রুবেল হিন্দু ধর্মের এক নারীকে বিয়ে করে অন্য স্থানে চলে যায়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রেশমা এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ঘটনার সাথে আমরা কেউ জড়িত নই।”
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
ঢাকা/বাদল/ইমন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব ল সরদ র ল সরদ র র এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি সেই শিশুর, কাটেনি শঙ্কা
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুর জ্ঞান পাঁচ দিনেও ফেরেনি। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ।
সিএমএইচের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়ায় শিশুটির ফুসফুসের বিভিন্ন জায়গায় বাতাস জমে গেছে। রোববার দুপুরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অতিরিক্ত বাতাস বের করে বুকে টিউব বসানো হয়েছে। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তার মস্তিষ্কেও ক্ষতি হয়েছে।
শিশুটির মা ফোনে সমকালকে জানান, হাসপাতালে মেয়ের শয্যাপাশে আছেন তিনি। কোনো নড়াচড়া নেই। সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
গতকাল রোববার সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শিশুটিকে দেখতে সিএমএইচে যান। খোঁজখবর নিয়ে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। দোষীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন উপদেষ্টা।
জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ
ধর্ষণে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গতকাল মাগুরা আদালত চত্বরের সামনে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করেন। ফলে নিরাপত্তা শঙ্কায় আসামিদের আদালতে হাজির এবং রিমান্ড আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব হোসেন।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, বোনের স্বামী, ভাশুর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে জেলা আদালত চত্বরের সামনে অবস্থান নেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটকে অবস্থান নেন। তারা আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মূল ফটকে তারা বিক্ষোভ করেন। যৌথ বাহিনীর আশ্বাসে বেলা ৩টার দিকে সেখান থেকে সরে ভায়নার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এখানে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে কর্মসূচি।
আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। এর ব্যত্যয় হলে আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
শিশুটির ছবি-ভিডিও অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশ
হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম, অনলাইন পোর্টালসহ যেসব জায়গায় শিশুটির ছবি ও ভিডিও ছড়িয়েছে, তা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব মাধ্যমে শিশুটির ছবি প্রকাশ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও তিন দিনের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ১৩ মার্চের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এসব নির্দেশনা দেন। আদেশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই আদেশে ভুক্তভোগী শিশু ও তার ১৪ বছর বয়সী বড় বোনের স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আট বছরের শিশুটি গত বুধবার (৫ মার্চ) বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। শিশুটিকে আরও উন্নত চিকিৎসার শনিবার বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) স্থানান্তর করা হয়।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম সমকালকে জানান, শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার ৪ আসামি আগেই হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত শনিবার (৮ মার্চ) দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে শিশুটির মা উল্লেখ করেন, বড় মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি হিটুর স্ত্রী ও আরেক ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, চার মাস আগে বড় মেয়ের সঙ্গে সজিবের বিয়ে হয়। এর পর থেকে বড় মেয়েকে তার শ্বশুর অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি ওই পরিবারের সবাই জানলেও প্রতিবাদ করেননি।
মামলায় বলা হয়েছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে শিশুটি ঘুমায়। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই। মেঝেতে পড়ে আছে। তখন সে বড় বোনকে জানায়, গোপনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। বিষয়টি হালকাভাবে নেন তিনি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে একই কথা জানান। তখন তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে শিশুটি জানায়, রাতে দুলাভাই দরজা খুলে দিয়েছিল। তখন তার বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় চিৎকার করার চেষ্টা করলে গলা চেপে ধরা হয়েছিল। পরে তাকে বোনের কক্ষে ফেলে রেখে যায় হিটু শেখ। বোন বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মাকে জানাতে গেলে সজীব ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন। পরে দুই বোনকে দুই কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে সজিবের মা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তিনি।
মেয়েটির বড় বোন সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার ২০ দিন আগে সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। তিনি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যান। সেখান থেকে ফিরে দেখেন ঘরে আলো বন্ধ। এ সময় হঠাৎ একজন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে তিনি বুঝতে পারেন, জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি তার শ্বশুর হিটু শেখ। বিষয়টি স্বামী সজিবকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। পরে বাবার বাড়ি চলে যান। আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন না। বাবা-মা বুঝিয়ে ছোট বোনকে সঙ্গে করে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়ি।