কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার নাম পরিবর্তন করে ‘ঝাউদিয়া থানা’ করা এবং সেটি ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তরের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী।

ঝাউদিয়া থানা বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বৃত্তিপাড়া বাজারে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় স্থানীয়রা সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলে।

মহাসড়ক অবরোধের ফলে কুষ্টিয়ার সঙ্গে ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
ঝাউদিয়া থানা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হায়াত আলী বিশ্বাস বলেছেন, “ঝাউদিয়া থানা বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম সমাপ্ত হলেও থানা উদ্বোধনে নানা গাফিলতি করা হচ্ছে। তাই, আজ আমরা ঝাউদিয়া থানা উদ্বোধনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে।”

ঝাউদিয়া থানা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য শাহরিয়া ইমন রুবেল বলেন, “ঝাউদিয়া থানা স্থাপনের সব বিষয় নির্ধারণ হওয়ার পরও পুলিশ সুপার দিনের পর দিন বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখছেন। আজকের আন্দোলনের দায় তাদেরকেই নিতে হবে।”

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, “থানা স্থানান্তরের জন্য বেশকিছু প্রক্রিয়া আছে। এর মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপারও আছে। রাতারাতি সবকিছু করা সম্ভব হয় না। এর জন্য সময় প্রয়োজন।”

ঢাকা/কাঞ্চন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের ১০৪ শতাংশের জবাবে চীনে ৮৪ শতাংশ শুল্ক, টালমাটাল বিশ্ববাজার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। সেই শুল্কের একাংশ সেদিন থেকেই কার্যকর হয়ে যায়। বাকি অংশ ৯ এপ্রিল কার্যকর হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ পুরোদমে শুরু হয়ে গেল। ফলে ২ এপ্রিলের পর ৯ এপ্রিল ছিল আরেকটি ঘটনাবহুল দিন।

৯ এপ্রিল সকাল (বাংলাদেশ সময়) থেকেই বৈশ্বিক গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই জানা যায়, চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কে খেপে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন। ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক আরোপের জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ। ১০ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ককে নিপীড়নমূলক আখ্যা দিয়ে তারা এই শুল্ক আরোপ করেছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতে হতেই বড় ধরনের পতন হয়। এরপর ইউরোপের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরপরই সূচকের পতন হয়। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আঞ্চলিক সূচক প্যান-ইউরোপীয় স্টকস ৬০০ কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আঞ্চলিক এই সূচকের অন্তর্ভুক্ত সব খাতের শেয়ারের দামেই নেতিবাচক প্রবণতা চলছে।

আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা, খনি ও তেল ও গ্যাস খাতের সূচকগুলো ব্যাপক হারে পড়ে গেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, খনি, তেল ও গ্যাস খাতের শেয়ারের দাম যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।

সেই সঙ্গে দাম কমেছে জ্বালানি তেলের। চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম নেমে এসেছে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। দর কমেছে ডলারের। সব মিলিয়ে মন্দার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ভারতের এনডিটিভির সংবাদে নতুন কিছু খাতে শুল্ক আরোপের তথ্য দেওয়া হয়েছে। ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের আওতার বাইরে কিছু খাত রয়ে গেছে, যেমন ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর। তবে তারাও বেশি দিন আওতার বাইরে থাকতে পারবে না। সংবাদে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই ওষুধ খাতে বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করতে পারেন। সেই শুল্কবাণে রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত হতে পারে ভারতের ওষুধশিল্প।

ভারতের ওষুধ রপ্তানির মূল বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত যত ওষুধ রপ্তানি করেছে, তার ৩১ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে; অর্থের পরিমাণের দিক থেকে যা ৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৮৭০ কোটি ডলার।

গতকাল মঙ্গলবার ন্যাশনাল রিপাবলিকান কংগ্রেশনাল কমিটির সভায় ট্রাম্প বলেন, এমনভাবে ওষুধশিল্পে শুল্ক আরোপ করা হবে যে কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘটনায় শুরু থেকেই যুদ্ধংদেহী ছিল চীন। ২ এপ্রিলের পর চীনও মার্কিন পণ্যে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে। এরপর ট্রাম্প আরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন চীনের পণ্যে। সব মিলিয়ে চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে চীন জানিয়েছে, এই দ্বন্দ্ব সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক। যদিও তারা একই সঙ্গে বলেছে, এই বাণিজ্য ঘাটতি অনিবার্য ও কাঠামোগত বিষয়। ট্রাম্প চীনকে এ রকম আঘাত করতে থাকলেও বা পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করতে চাইলে তারাও প্রস্তুত। সে কারণে তারাও আবার ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

আজ বুধবার চীন বাণিজ্যবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলেছে, চীন সব সময়ই চেষ্টা করেছে মার্কিন-চীন বাণিজ্য যেন সব সময় উভয়ের জন্য লাভজনক হয়। শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পাল্টা শুল্কে বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইউরোপ প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটছে। আজ বুধবার ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জবাবে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্য সমন্বয় করে ইউরোপীয় কমিশন। তারা বিভিন্ন ধরনের মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে, যেমন মোটরসাইকেল, মুরগি, ফলমূল, কাঠ, পোশাক ও ডেন্টাল ফ্লস। এ–সংক্রান্ত একটি নথি রয়টার্সের হাতে এসেছে।

ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের যে প্রভাব ইউরো অঞ্চলে পড়বে বলে আগে হিসাব করা হয়েছিল, এখন তারা মনে করছে, প্রভাব তার চেয়ে বেশি হবে। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত চারটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থায়ন সচল রেখে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা হবে বলে জানিয়েছে।

মন্দার আশঙ্কা

বিবিসি জানিয়েছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি জরিপে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬২ শতাংশ আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শ্লথ হবে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মনে করছে, বিশ্ব এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সতর্ক।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্যে জানা যায়, সে দেশে দেউলিয়া ঘোষণার হার বাড়ছে। গত বছরের মতো চলতি বছরেও এই আবেদন বৃদ্ধির হার অব্যাহত। সাধারণ মানুষ তেমনভাবে অবসর বা বিনোদনে অর্থ ব্যয় করছেন না। তার ওপরে আমদানি পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার আবারও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিশোধমূলক শুল্কে দেশটির রপ্তানিও মার খেতে পারে।

ওয়াশিংটন পোস্টের সংবাদে বলা হয়েছে, কানাডার মতো প্রতিবেশী দেশের পর্যটকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির একাংশ নির্ভরশীল, শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েনের জেরে সেই দেশ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটক আসা কমেছে। সব মিলিয়ে মন্দার আশঙ্কা গত সপ্তাহের ৩৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চলতি সপ্তাহে ৪৫ শতাংশ করেছে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্স।

জেপি মর্গান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল—সবাই যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা করছে। জেপি মর্গান আরও জানিয়েছে, বছর শেষে মূল্যস্ফীতির হার এখনকার ২ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে উঠতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ আটলান্টার পূর্বাভাস, জানুয়ারি-মার্চে জিডিপি কমতে পারে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে আজ বুধবার সোনার দাম বেড়েছে। এই ঘোর অনিশ্চয়তার সময় সোনার দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। যদিও ২ এপ্রিলের পর সোনার দামও পড়ে গিয়েছিল। আজ আউন্সপ্রতি সোনার দাম আবার তিন হাজার ডলার পেরিয়ে গেছে। আউন্সপ্রতি দাম বেড়েছে ৬২ দশমিক ১২ ডলার বা ২ দশমিক ১২ শতাংশ। খবর গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এই যখন পরিস্থিতি, তখনো কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্ভার। মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, সমস্যা সারাতে ওষুধ দিতে হয়। তিনি সেই ওষুধ দিয়েছেন। এরপর কিছু ওলটপালট হবে, এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট বা সরকারপ্রধানেরা যেভাবে তাঁকে ফোন করছেন, তাতে ট্রাম্প বেশ খুশি, বিষয়টি তিনি উপভোগ করছেন।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট ও এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ