Risingbd:
2025-03-10@12:19:07 GMT

বন্দিদশা থেকে মুক্ত ১৯ প্রাণী

Published: 4th, February 2025 GMT

বন্দিদশা থেকে মুক্ত ১৯ প্রাণী

২০০২ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মানিক লাল দেওয়ানের একান্ত আগ্রহে শহরের সুখী নীলগঞ্জ নামক স্থানে প্রায় ৩০ একর জায়গার ওপর বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়। শুরুতেই একটি বাচ্চা ভাল্লুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এনে মিনি চিড়িয়াখানাটি এই অঞ্চলে তাক লাগিয়ে দেয়। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই ধীরে ধীরে চিড়িয়াখানাটি জৌলুস হারাতে থাকে। অযত্ন, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে একের পর এক প্রাণীর মৃত্যু হতে থাকে। 

চিড়িয়াখানা যাত্রার প্রাক্কালে বাচ্চা একটি ভালুক আনা হয়। যেটি গত ২৩ বছর ধরে এই চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গ পড়ে আছে। ভেঙে পড়েছে একের পর এক খাঁচার ছাদ। দীর্ঘসময় ধরে জরাজীর্ণ ও অবহেলায় পড়ে থাকার পর অবশেষে চিড়িয়াখানাটির অস্তিত্ব গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। জেলা পরিষদ বর্তমানে রয়ে যাওয়া ছয় প্রজাতির ১৯টি প্রাণীকে বন বিভাগকে হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রাণীগুলোকে বন্দিদশা মুক্ত করেছে। 

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তারা সুখী নীলগঞ্জের মিনি চিড়িয়াখানায় এসে স্থানীয় বনবিভাগের সহায়তায় ১৯টি প্রাণী চিড়িয়াখানা থেকে নিয়ে যায়। ভাল্লুক, হরিণ ও বানরগুলো চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অচেতন করে তারপর খাঁচায় ভরে চট্টগ্রামের ডুলাহাজরার সাফারি পার্কের উদ্দেশে নিয়ে যায়। 

এ সময় কর্মকর্তারা জানান, প্রথমেই ডুলাহাজরার সাফারি পার্কে বন্যপ্রাণীগুলোকে চিকিৎসা দেয়ার পর ধীরে ধীরে তাদেরকে বনে ছেড়ে দেওয়া হবে। 

ঢাকা বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, “২০১২ সালের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী কোনো বন্যপ্রাণী ক্রয়, বিক্রয়, বন্দি রাখা পুরোপুরি আইন পরিপন্থী। যেহেতু এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে, তাই আমরা আলোচনার মাধ্যমে বন্যপ্রাণীগুলোকে জব্দ করে ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে নিয়ে কোয়ারেন্টিনে রাখবো।”

 

তিনি আরো বলেন, “এখানে এসে যা দেখলাম, এতে বন্যপ্রাণী কল্যাণ আইন অনুযায়ী এটা নিষ্ঠুরতা। বন্যপ্রাণী মুভমেন্টের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। খাঁচাগুলোতে যথেষ্ট আলো-বাতাস নেই। এভাবে বন্যপ্রাণী থাকতে পারে না।” 

চট্টগ্রাম বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, “জেলা পরিষদ প্রধান বন সংরক্ষকের মাধ্যমে লাইসেন্স নিয়ে এখানে কিছু বন্যপ্রাণী এনেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা জানতে পারলাম, এখানে যেভাবে বন্যপ্রাণী রাখা হয়েছে, সেগুলো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন পরিপন্থী। এই বিষয়ে জেলা পরিষদের সাথে যোগাযোগের পর তারা বন্যপ্রাণীগুলো হস্তান্তরে সম্মত হওয়ায় আমরা এগুলো নিয়ে যাচ্ছি।” 

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে ও অবহেলায় পড়েছিল বন্যপ্রাণীগুলো। সোমবার সকালে চিড়িয়াখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাঁচায় বসে আছে নিঃসঙ্গ ভালুক। একা একা পায়চারি করছেন দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘরে। গত ২৩ বছর ধরে এই ঘরটিই ছিল তার একমাত্র আবাসস্থল। সাধারণত ভালুকের জীবনকাল ৩০ বছর হয়ে থাকে, আর এরমধ্যে খাঁচায় এই প্রাণীটির কেটেছে ২৩ বছর। পাশের একটি খাঁচায় শ্রীহীন চারটি বানর। স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য নেই কারো। যা খাবার পায়, তাতে বন্দি প্রাণীগুলোর কোনোমতে টিকে থাকাই দায়।

 

প্রাণীদের দেওয়া খাবার এতটাই অল্প যে খাঁচায় উঁকি দিয়ে কোথাও উচ্ছিষ্ট কিছু দেখা গেল না। একটি কক্ষে হাঁটু পরিমাণ পানিতে ছয়টি কচ্ছপ। পানিগুলো এতটাই নোংরা যে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। কবে যে এই পানি পরিবর্তন করা হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। চিড়িয়াখানার সবগুলো প্রাণীর ঘর নোংরায় ভরা। একমাত্র হরিণটি এদিক-ওদিক খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে। এক সময় তিনটি হরিণ থাকলেও এখন একটি মাত্র হরিণ। 

ভেঙে গেছে প্রাণীদের খাঁচাগুলো। স্থানে স্থানে পাকা স্থাপনায় ফাটল ধরেছে। খাঁচার গ্রিলে ধরেছে মরিচা। প্রাণী না থাকায় লোকজনের কোনো আগ্রহ নেই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জন্য পানি তোলার পাম্পটিও চুরি হয়ে গেছে। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত চিড়িয়াখানাটির প্রাণীদের জন্য এখন টেনে টেনে পানি আনতে হয়। কিন্তু পানি আনার লোকও নেই। ফলে পর্যাপ্ত পানি প্রতিদিন সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। 

বর্তমানে এখানকার সম্বল একটি মাত্র ভালুক, একটি হরিণ, চারটি বানর, দুটি সজারু, পাঁচটি বন মোরগ ও ছয়টি কচ্ছপ। অজগরও ছিল একসময়, সেটির মৃত্যুর পর সেই নোংরা ঘরে স্থান হয়েছে দুইটি বানরের। খেয়ে না খেয়ে প্রাণীগুলো দিন কাটাচ্ছে অনেকটাই নিঃসঙ্গতায়। 

কক্সবাজার সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি অফিসার ডা.

হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন বন্যপ্রাণীগুলোর শারীরিক অবস্থা সম্বন্ধে বলেন, “ভালুকের অবস্থা ভালো আছে। বানর ও হরিণের স্কিনে সমস্যা আছে। অন্যান্য প্রাণীগুলোও মোটামুটি আছে। আমরা কিছু প্রাণী ট্রাঙ্কুলাইস করেছি এবং বাকীগুলো ফিজিক্যালি রেসকিউ করে ডুলাহাজরায় নিয়ে যাবো। সেখানে তাদেরকে চিকিৎসার পর অবমুক্ত করা হবে।”

চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মো. সালাম বলেন, “জেলার একমাত্র এই মিনি চিড়িয়াখানাটার এই অবস্থার জন্য অবশ্যই কর্তৃপক্ষ দায়ী। তাদের অবহেলা ও অব্যবস্থানার কারণে প্রাণীগুলো মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। একটি ভালুক ২৩ বছর ধরে নিঃসঙ্গ একটি খাঁচায় পড়ে আছে। এগুলো অমানবিক। অন্তত বনবিভাগের কাছে বন্যপ্রাণীগুলো হস্তান্তরের কারণে প্রাণীগুলো বেঁচে যাবে।” 

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, “চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর সংখ্যা খুব একটা নেই। এতে এখান থেকে কোনো আয়ও নেই। বন্যপ্রাণীগুলো হস্তান্তরে গত মাসে আমরা ঢাকা বন অধিদপ্তরকে চিঠি দিই। তারা জানিয়েছিল, বন্যপ্রাণীগুলো তারা নিয়ে যাবে। বর্তমানে খালি এই স্থানটিকে আমরা পর্যটন স্পট করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।”

ঢাকা/শংকর/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২৩ বছর অবহ ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মহাকাশে অবস্থান পরিবর্তন করছে বিরল এক কৃষ্ণগহ্বর

সম্প্রতি একটি অতিকায় গতিশীল কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ধারণা করা হচ্ছে, কৃষ্ণগহ্বরটি দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংযুক্তির কারণে দ্রুতগতিতে ছুটে চলছে। বিরল এই কৃষ্ণগহ্বরের রহস্য উন্মোচনের জন্য কাজ শুরু শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, কৃষ্ণগহ্বরটি তার ছায়াপথ ৩সি ১৮৬ থেকে প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছুটে যাচ্ছে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে দেখা গেছে, ছায়াপথের নক্ষত্রের অবস্থান বিশ্লেষণের সময় গতিশীল কৃষ্ণগহ্বরটি গ্যালাকটিক কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে ছিল; কিন্তু বর্তমানে কৃষ্ণগহ্বরটি তার আগের অবস্থানে নেই। কৃষ্ণগহ্বরটির এই অবস্থান পরিবর্তন কোনো বড় ঘটনার ইঙ্গিত দিচ্ছি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সম্ভবত কোনো গ্যালাকটিক সংঘর্ষ বা সংযুক্তির কারণে এমনটা ঘটছে।

আরও পড়ুনকৃষ্ণগহ্বর থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী রশ্মি২০ জানুয়ারি ২০২৫

গভীর অনুসন্ধানের জন্য বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বরের নির্গত আলো বিশ্লেষণ করতে চিলির টেলিস্কোপ ও হাওয়াইয়ের সুবারু টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন। দেখা গেছে, কৃষ্ণগহ্বরের অ্যাক্রিশন ডিস্ক থেকে নীল আলো আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। যার অর্থ কৃষ্ণগহ্বরটি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে গ্যাস অনেক দুর্বল নীল আলো প্রদর্শন করছে, যার কারণে বোঝা যাচ্ছে কৃষ্ণগহ্বরটি তার অন্যান্য ছায়াপথের তুলনায় বেশি গতিতে ছুটছে।

আরও পড়ুনআকারে বড় কৃষ্ণগহ্বর বিজ্ঞানীদের নজর এড়িয়ে যায় কেন১৫ জানুয়ারি ২০২৫

বিজ্ঞানীরা জানান, দুটি ছায়াপথের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে কৃষ্ণগহ্বরটি। এর ফলে সেখানে থাকা কেন্দ্রীয় কৃষ্ণগহ্বর একটি বৃহত্তর ছায়াপথে মিশে গেছে। এই সংমিশ্রণের ফলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ তৈরি হয়েছে, যা বাইরের দিকে বিকিরণ শুরু করেছে। বিরল ধরনের এই অতিকায় কৃষ্ণগহ্বরের বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ