বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে পাঠানো চিঠি ইংরেজিতে লেখা। গত বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা মেয়েদের তিন পৃষ্ঠার বিবৃতি লেখা বাংলায়। দুই ভাষায় লেখার কারণেই বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের চিঠি নিয়ে সন্দেহ বাফুফের বিশেষ কমিটির। চিঠির মূল লেখকের নাম জানতে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আলাদাভাবে প্রশ্ন করেছেন বিশেষ কমিটির সদস্যরা। 

জাপানে বেড়ে ওঠা মাতসুশিমা সুমাইয়া ইংরেজিতে চিঠি লিখেছেন বলে কমিটির সামনে উত্তর দিয়েছেন সবাই। এমনকি সুমাইয়াও বলেছেন সতীর্থদের হয়ে তিনিই চিঠি লিখেছেন। কিন্তু ইংরেজি লেখা চিঠি নিয়ে মেয়েদের এ দাবি বিশ্বাস হচ্ছে না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের। তাদের কথা সভাপতি তাবিথ তো বাংলা বোঝেন, তাহলে তাঁর কাছে যে চিঠি গেছে, সেটা ইংরেজিতে কেন? ঘটনাগুলো যেহেতু বাফুফের অভ্যন্তরীণ, অন্য কোনো দেশে ঘটেনি, সে হিসেবে ইংরেজিতে লেখার প্রশ্নই ওঠে না বলে মেয়েদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত থাকা একটি সূত্র গতকাল সমকালকে জানিয়েছে। নিজের লেখা চিঠির বিষয়ে জানতে সোমবার সুমাইয়ার মোবাইলে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও ওপাশ থেকে সাড়া মেলেনি।

জাপানে বেড়ে ওঠা সুমাইয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবলের অন্যতম তারকা। বাংলাদেশের অন্য নারী ফুটবলারদের চেয়ে তাঁর ইংরেজি দক্ষতা বেশ ভালো। বিশেষ কমিটিতে তিনি বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর ইংরেজিতে দিয়েছেন। এখানেও বিদ্রোহী ফুটবলারদের পরিকল্পনা আছে বলে ধারণা করছেন বাফুফে কর্তারা। ‘তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে চিঠি কেন ইংরেজিতে লেখা হয়েছে? তারা বলেছে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য। তাহলে সাংবাদিকদের কেন বাংলা চিঠি দিয়েছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কেউ কেউ চুপ হয়ে যান। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে সুমাইয়াকে সামনে এনে সাবিনারা আড়াল করতে চাচ্ছেন চিঠির আসল লেখককে। চিঠিটা কোথা থেকে এসেছে, সেটা আমরা বুঝে গেছি। সভাপতি আমাকে বলেছেন বাইরের দেশে পড়াশোনা করেছি, আমিও তো এমন ভাষায় চিঠি লিখতে পারি না। সুমাইয়ার জন্য খারাপ লাগছে। একটা সহজ-সরল মেয়েকে ওরা সামনে এনেছে। সুমাইয়া তো বলেই দিয়েছে সে হয়তো বাংলাদেশ ছেড়ে জাপান চলে যাবে। দুঃখটা আরও বেশি লাগছে ৪-৫টা মেয়ের জন্য ৮-১০ জন ঝরে যাবে’– জানিয়েছে ওই সূত্র।

শুধু চিঠির বিষয়ই নয়, কমিটির সামনে বাটলারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেয়েরা। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে অনুশীলনে যাওয়া মেয়েদের নাকি শাসাতেন ব্রিটিশ এ কোচ। এমনকি অনুশীলনের সময় দুটি পাস ভুল হলে নাকি গালাগাল করতেন বাটলার– এমন অভিযোগও বিশেষ কমিটিকে শুনিয়েছেন সাবিনা-সুমাইয়ারা। একজন পেশাদার কোচ তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে সেরাটা বের করার জন্য এমনটা করতে পারেন বলে মনে করছেন ফুটবল-সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ কোচের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের আগে নারী উইং অন্তত অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সঙ্গেও আলোচনা করতে পারত বলে ক্ষোভ জানান মেয়েরা। 

দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাদের ধারণা, পারফরম্যান্স ও বয়সের কারণে কয়েকজন নারী খেলোয়াড় দল থেকে বাদ পড়তে পারেন। তাই আরও দুই বছর ক্যাম্পে থাকার জন্য বাটলারের বিরুদ্ধে কয়েকজন সিনিয়র ফুটবলার গিয়েছেন বলে গুঞ্জন বাফুফের অভ্যন্তরে। 

শুধু বাটলারের বিরুদ্ধে ১৮ নারী ফুটবলারের বিদ্রোহী হওয়ার পেছনে বাফুফের সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলিকে নিয়ে সন্দেহ অনেকের। কারণ বাটলারের সঙ্গে স্মলির সম্পর্ক অনেকটা দা-কুমড়োর মতো। অতীতে বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও স্মলি থাকায় বাফুফের প্রস্তাবে সাড়া দেননি বাটলার। আবার বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বাটলারকে যেমন চান, তেমনি করে সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির প্রতিও তাঁর দুর্বলতা আছে। 

তাই মেয়েদের আন্দোলনের এই ইন্ধনে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সে জন্য নারী উইংয়ের সঙ্গে বসার কথা বিশেষ কমিটির। একই সঙ্গে বাটলারের সতীর্থ অন্য কোচিং স্টাফদেরও তলব করতে পারে কমিটি। সবার সঙ্গে কথা বলার পর বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিশেষ কমিটির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে। তখনই বেরিয়ে আসতে পারে ভেতরের অজানা অনেক বিষয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ ষ কম ট র ফ টবল র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্বার রাজশাহীকে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি ক্রীড়া উপদেষ্টার  

বিপিএল শেষ হলেও পারিশ্রমিক বিতর্কে এখনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুর্বার রাজশাহী। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধ করেনি ফ্র্যাঞ্চাইজিটি, এমনকি তাদের দেওয়া চেক দুবার বাউন্স হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।  

শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাজশাহীর স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। সেখানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, 'কথা বলার সময় শেষ, এবার যদি পারিশ্রমিক পরিশোধ না করা হয়, তাহলে রাজশাহীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

বিপিএল শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজশাহীর পারিশ্রমিক বিতর্ক চলছিল। দেশি ক্রিকেটাররা ২৫ শতাংশ বেতন পেলেও বাকি টাকা আটকে ছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজির দেওয়া চেক জমা দেওয়ার পর বাউন্স হয়, ফলে ক্রিকেটাররা এখনও তাদের প্রাপ্য বুঝে পাননি। এমনকি বিদেশি ক্রিকেটাররাও পুরো পারিশ্রমিক পাননি। এরই মধ্যে পারিশ্রমিক না পেয়ে এক ম্যাচে অংশ নেননি রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা।  

রাজশাহীর মালিকের সঙ্গে আলোচনার পর ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, পারিশ্রমিক পরিশোধ না করলে আর কোনো আলোচনা হবে না। তখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

বিসিবির সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন স্বীকার করেছেন, রাজশাহীকে ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাই হয়নি। তিনি বলেন, 'আমরা সম্ভবত রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজিকে অন্তর্ভুক্ত করার সময় তাদের আর্থিক সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে পর্যালোচনা করিনি। যার ফলে এখন এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।'

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ রাজশাহীর কার্যক্রমকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, 'রাজশাহী যা করেছে, তা একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।'

বিপিএলের জন্য পর্যাপ্ত ফ্র্যাঞ্চাইজির অভাব থাকায় রাজশাহীকে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, 'আমাদের হাতে খুব বেশি অপশন ছিল না। তিনটি দল গত বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দেয়নি, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাকি ছিল। এটা কোনো নতুন সমস্যা নয়, ১১ বছর ধরেই এমন হচ্ছে। আমরা স্বীকার করছি, পারিশ্রমিক ইস্যুতে ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আগে বিপিএলের ভাবমূর্তি খুব ভালো ছিল, তাও বলা যাবে না। আমরা এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর বিপিএলকে আরও ভালো করব।'

টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার দিনও রাজশাহী আবারো পারিশ্রমিক পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার যদি ফ্র্যাঞ্চাইজিটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে ফিরে যাচ্ছেন রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা
  • দুর্বার রাজশাহীকে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি ক্রীড়া উপদেষ্টার  
  • পিঠের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন? মোকাবিলা করবেন যেভাবে