ভ্রমণ আমার কাছে এক প্রার্থনা: ফাতিমা জাহান
Published: 4th, February 2025 GMT
ফাতিমা জাহান আঠারো বছর বয়স থেকে সোলো ট্রাভেলিং শুরু করেন। ভ্রমণ তার কাছে প্রার্থনার মতো। লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ আর মানুষের সংস্কৃতি পাঠকের সামনে তুলে ধরেন তিনি। তার লেখা প্রকাশ হয় বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এ পর্যন্ত পাঁচটি বই প্রকাশ হয়েছে ফাতিমা জাহানের। ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই লিখে চলেছেন তিনি।২০২৫ বইমেলায় ফাতিমা জাহানের ভ্রমণ বিষয়ক বই ‘তানযানিয়ার হৃদয় হতে’ প্রকাশ হয়েছে। নতুন বই আর ভ্রমণ বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তা নিয়ে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির সঙ্গে। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।
ফাতিমা জাহান: 'তানযানিয়ার হৃদয় হতে ' বইটি মূলত তানযানিয়ায় আমার প্রায় একমাসের ভ্রমণের গল্প। তবে শুধুমাত্র ট্যুরিস্টের মতো না ঘুরে বেরিয়ে আমি দেখার চেষ্টা করেছি তানযানিয়ার মানুষের জীবন যাপন, জীবিকা, সংস্কৃতি ইত্যাদি। তানযানিয়া অনেক বড় দেশ। এ দেশে পাহাড়ের সৌন্দর্য যেমন আছে, তেমনি আছে অবারিত সাগরের হাতছানি বা আধুনিক শহরের যাপনচিত্র। আরও আছে বিভিন্ন আদিবাসীদের নানা ধরনের সংস্কৃতি ও ভিন্ন ভিন্ন শিল্প।
রাইজিংবিডি: ২০২৪ এ কোন কোন দেশ ভ্রমণ করলেন?
আরো পড়ুন:
বইমেলার তৃতীয় দিনে ৩২ নতুন বই প্রকাশিত
বইমেলায় আফরোজা খাতুনের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’
ফাতিমা জাহান: ২০২৪ সালে আমার ভ্রমণ শুরু হয়েছিল তানযানিয়া থেকে। এরপর যাই মরিশাস। এরপর দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশ ভ্রমণ করেছি। ২০২৪ সালে দ্বিতীয় দফায় আমি আবার আফ্রিকায় আসি সেপ্টেম্বর মাসে। হাতে অনেক সময় থাকার কারণে এবার টানা চার মাস ভ্রমণ করি। আবার আমার ভ্রমণ শুরু হয় মরিশাস থেকে, তারপর মরক্কো, ইথিওপিয়া, জাম্বিয়া, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক, মালাউই অবধি বিস্তৃত হয়।
রাইজিংবিডি: এ পর্যন্ত কতগুলো দেশ ভ্রমণ করেছেন?
ফাতিমা জাহান: দেশভ্রমণ আমার কাছে এক ধরনের ব্রত। আমি সংখ্যা গুনে গুনে দেশ ভ্রমণে বিশ্বাসী নই। অনেক দেশে অনেকে এক দিন বা কয়েক ঘন্টা অবস্থান করেই বলে ফেলে যে, নতুন একটা দেশ ভ্রমণ করলাম। আমার দেশ ভ্রমণের কনসেপ্ট সৌখিন ট্যুরিস্টদের থেকে আলাদা। কোনো দেশের শিল্প সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন না জানতে পেরে শুধু ট্যুরিস্ট স্পটে ঘুরে বেড়ানোকে আমার কাছে দেশভ্রমণ বলে মনে হয় না। দেশ গোনার প্রক্রিয়া এক ধরনের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে যা সত্যিকারের ভ্রামণিকের জন্য ক্ষতিকারক। অমুক গেল, আমি যেতে পারলামনা, তমুক গিয়ে কিছু একটা দেখল, আমি পারলামনা - এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে আমি ভ্রমণ করি না। আমার ভ্রমণের উদ্দেশ্য নিজের কৌতুহলকে তৃপ্ত করা। ভ্রমণ আমার কাছে এক প্রার্থনা। অন্য দেশের মাধ্যমে নিজেকে জানার এবং পরিশুদ্ধ করার।
রাইজিংবিডি: ভ্রমণ আপনাকে কী কী শিখিয়েছে?
ফাতিমা জাহান: শুধু ভ্রমণের মাধ্যমে আমি যা শিখতে পেরেছি তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও শিখতে পারিনি। ভ্রমণ আমাকে যা শিখিয়েছে তা আমাকে কোনো উচ্চশিক্ষিত, সাধু-সন্ত, গুরুজনও শেখাতে পারেনি। ভ্রমণ আমাকে আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী হতে শিখিয়েছে, বিচক্ষণতা শিখিয়েছে, ধীরস্থির হতে শিখিয়েছে, সহিষ্ণু হতে শিখিয়েছে, সংযম শিখিয়েছে, ধৈর্যশীল হতে শিখিয়েছে, মানবতা শিখিয়েছে, সততার নতুন রূপ শিখিয়েছে, উদার হতে শিখিয়েছে, নতুন রীতিকে শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছে, দেখার দৃষ্টি অবারিত করতে শিখিয়েছে, নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে শিখিয়েছে, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে শিখিয়েছে, যে কোন মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে৷ সবচেয়ে বড় বিষয় হল একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে শিখিয়েছে। সত্যি বলতে, আমি এখনও ভ্রমণের মাধ্যমে শিখে যাচ্ছি বিশ্ব নামক পাঠশালা থেকে।
রাইজিংবিডি: একজন সোলো ট্রাভেলারের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ফাতিমা জাহান: যিনি সোলো ট্রাভেলার তার জন্য আমার আসলে কোনো পরামর্শ নেই। সোলো ট্রাভেলার নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা, সমালোচক, পথপ্রদর্শক। আমার পরামর্শ যদি কারো জন্য থেকে থাকে তা সোলো ট্রাভেলারের অভিভাবক ও সঙ্গীর প্রতি - আপনারা আপনাদের সন্তান বা সঙ্গীর ওপর আস্থা রাখুন। সোলো ট্রাভেলার চাইলেই যে কেউ হতে পারেনা। সেজন্য যোগ্যতা, দক্ষতা, শিক্ষা, জ্ঞান, রুচি, দর্শন, সক্ষমতা ইত্যাদি থাকতে হয়।
রাইজিংবিডি: প্রকাশকদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
ফাতিমা জাহান: আমি নতুন লেখক। সাকুল্যে ৫ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। খুব বেশি প্রকাশকের সাথে কাজ করার সুযোগ আমার হয়নি। তবে বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো প্রকাশনা সেক্টরেও অপেশাদার প্রকাশক প্রচুর আছেন। আমার ৫ টি বইয়ের মধ্যে ৪ টি প্রকাশ করেছে অনুপ্রাণন প্রকাশন। নতুন লেখক হিসেবে তারাই আমার প্রথম বই প্রকাশ করেছিল। তাদের সাথে কাজ করে এবং তাদের পেশাদারিত্বে আমি সন্তুষ্ট। কিছুদিন একসাথে কাজ করার পর লেখক ও প্রকাশক উভয় উভয়ের প্রতি এক ধরনের আস্থা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি হয়ে যায় যা অনুপ্রাণনের সাথে আমার হয়েছে।
রাইজিংবিডি: কেমন বইমেলা চান?
ফাতিমা জাহান: আমি যে বইমেলা চাই তা এখনকার প্রজন্মের চিন্তার বাইরে। বইমেলা হবে লেখক, পাঠক, প্রকাশকের মিলনমেলা। এখানে বইয়ের প্রসংশা, রিভিউ এর সাথে গঠনমূলক সমালোচনার জন্য আলাদা মঞ্চ থাকা উচিৎ। শুধু মোড়ক উন্মোচন নয়, পাঠকের মত প্রকাশকেও প্রাধান্য দিতে হবে। আমাদের শৈশবে আমরা বই কিনতে আসতাম। এখন বেশিরভাগ আসে পার্কে ঘুরতে আসার মতো করে ঘুরতে। বইয়ের সাথে এদের সম্পর্ক নেই। আমরা যারা এখনো ভালো বই স্টলে স্টলে গিয়ে খুঁজে কেনার যুগে বসবাস করি তাদের সে সুযোগ হয়না। বই না পড়ুয়াদের ভীড়ে স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল হয়ে যায়। লেখক প্রকাশককে আলাদা আলাদা দল করে আলাদা আলাদা জড়ো হবার মানসিকতা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। পাঠককে লেখকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য মিডিয়ার অন্যতম ভূমিকা থাকতে হবে। বেশিরভাগ সময় মিডিয়ার পরিচিত লেখকদের বারে বারে বিভিন্ন মিডিয়ায় আসতে দেখা যায়। বইমেলা মানে শুধুই বই। তাই সর্বতোভাবে বইকে প্রাধান্য দেবার মানসিকতা থাকতে হবে। বইপড়াকে সরকারি উদ্যোগে নিষ্ঠার সাথে প্রচার করতে হবে। বইমেলায় বই পড়া বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। এবং উপহার হিসেবে বইকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
রাইজিংবিডি: যখন কোনো দেশ ভ্রমণ করেন সেই দেশ নিয়ে লেখার জন্য সচেতনভাবে কী কী সংগ্রহ করেন, কখন লিখতে শুরু করেন?
ফাতিমা জাহান: আমি খুব অল্প বয়স থেকে একা ভ্রমণ করা শুরু করেছি। ভ্রমণ করি নিজেকে জানার জন্য, আত্মশুদ্ধির জন্য। ভ্রমণ করি নতুন সংস্কৃতি ও মানুষকে জানার জন্য। ভ্রমণ বিষয়ক লেখা শুরু করেছি কয়েক বছর ধরে। আসলে ভ্রমণ কাহিনী লিখব সেরকম কখনোই ভাবিনি। সবসময় ভ্রমণেই আত্মমগ্ন ছিলাম, এখনো থাকি। ভ্রমণ কাহিনী লেখার তাড়া আসে পত্রিকার সম্পাদকদের কাছ থেকে। তাদের বদৌলতেই অল্প কিছু ভ্রমণগদ্য লিখতে পেরেছি। আমি নিজে থেকে কোনো জায়গা নিয়ে লেখার তাড়না খুব কম বোধ করেছি। আর ভ্রমণের সময় একেবারেই লিখিনা। ভ্রমণ আমার কাছে প্রার্থনার মতো। প্রার্থনা শেষ হলে যদি প্রয়োজন মনে করি তবেই লিখি। আমি এও মনে করি যে, ভ্রমণ নিভৃতে করতে হয়, প্রার্থনার মতো। লোক দেখিয়ে এর পূর্ণতা পাওয়া যায় না। কারণ ভ্রমণ করি নিজের জন্য। আর যে কোন দেশে গিয়ে আমি কখনোই তথ্য সংগ্রহের কাজে লেগে যাই না। সে আমার পেশা বা কাজ নয়। তথ্য আমার সামনে ধরা দিলে ঝুলিতে ভরে নেই।
ঢাকা/স্বরলিপি/
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ভ রমণ ভ রমণ র ভ রমণ ব ক জ কর র জন য ধরন র বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
পটুয়াখালীতে সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় জহিরুল ইসলাম মিরন নামের এক সাংবাদিককে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাসার সামনে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুয়াকাটার তুলাতলী ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জহিরুল ইসলাম মিরন কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাভিশনের কুয়াকাটা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাস থেকে নেমে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেন জহিরুল। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক বরিশালে পাঠান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রেফার করা হয়েছে।
মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ফিলিং স্টেশন ও আশেপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে চিহ্নিত করতে না পারলেও শিগগিরই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘একজন সাংবাদিকের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনও ব্যথিত। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশকে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’’
ঢাকা/ইমরান/রাজীব