ছেলে হত্যার বিচার না পেলে আত্মাহুতির হুমকি মায়ের
Published: 4th, February 2025 GMT
ছেলের হত্যার বিচার না পেলে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতির হুমকি দিয়েছেন এক মা। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আত্মাহুতির হুমকি দেন আছিয়া বেগম নামের এই মা।
সংবাদ সম্মেলনে আছিয়া বেগম জানান, ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরের রসুলবাগের বাসা থেকে তার ছেলে ইমরানকে ডেকে নিয়ে যায় তার বন্ধুরা। এরপর তার কাছে থাকা এটিএম কার্ডের মাধ্যমে জোর করে দুই লাখ টাকা তুলে নেয়। পরে পরিকল্পিতভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। উল্টো তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হুমকিতে একমাত্র কন্যাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিন বছরেও আমার সন্তানের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।'
২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আছিয়ার ২২ বছর বয়সী সন্তান মো.
থানা পুলিশের পর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু আছিয়া বেগমের নারাজির কারণে মামলাটি পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় আদালত।
পিবিআইর কাছে মামলা যাওয়ার ১১ মাস পার হলেও তারা কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি বলে বলে অভিযোগ আছিয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে আছিয়ার মেয়ে জেসমিন আক্তারও উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর এসআই আবু তালেবের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি হিসাবের সঙ্গে আর্থিক হিসাবও ইতিবাচক ধারায় ফিরল
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের শেষ সময়ে অর্থনীতির সব কটি সূচকই ছিল নড়বড়ে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে, পণ্য রপ্তানি সাময়িকভাবে হোঁচট খেলেও পরে ঘুরে দাঁড়ায়। অন্যদিকে আমদানিতে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। সেগুলো হচ্ছে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে চলতি হিসাবে যেখানে ঘাটতি ছিল ১৯ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে ডিসেম্বরের শেষে উদ্বৃত্ত হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বরের শেষে সেটি ১৩৮ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফেরার পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি কমে ৯৭৬ কোটি ডলারে নামে। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চলতি হিসাবের পাশাপাশি আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে। মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে। ফলে অর্থনীতির শুভযাত্রা শুরু হয়েছে। সামনে আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬৬১ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল আরও বেশি, যা পরিমাণে ১ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। তবে বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর এক মাস আগেও হিসাবটিতে ঘাটতি ছিল।
সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪৫৪ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর উদ্বৃত্ত ছিল ৬৮৯ কোটি ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর আর্থিক হিসাব ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়। তবে অর্থবছরের প্রথমার্ধ শেষে আর্থিক হিসাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে উদ্বৃত্ত হয়েছে ১৩৮ কোটি ডলার।
দেশে আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি পরিমাপ করা হয় আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডলার-সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় দেড় দশকের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো এ হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ৩৮ কোটি ডলার, যা তার আগের মাসে ছিল ২৪৭ কোটি ডলার। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি ছিল ৩৪৫ কোটি ডলার।