আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার রাত পৌনে ১০টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে সাত দিনের মধ্যে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে আবার কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এর আগে সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের ১২ শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কলেজের অধ্যক্ষসহ তিন অধ্যাপক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই যুগ্ম সচিব এবং গুলশান জোনের উপপুলিশ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।

আগামী সাত দিনের মধ্যে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ ইস্যুতে সরকার পদক্ষেপ নেবে, এমন আশ্বাসে আমরণ অনশনও ভেঙেছেন শিক্ষার্থীরা। রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো.

নুরুজ্জামান এবং তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মণ্ডলের উপস্থিতিতে তারা অনশন ভাঙেন। এ সময় অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের প্যাকেটজাত আমের জুস খাওয়ান অধ্যক্ষ।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। 
তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তারা টানা ষষ্ঠ দিনের মতো সোমবারও রাজপথে সরব ছিলেন। ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’র অংশ হিসেবে মহাখালীর রেললাইন অবরোধ করেন। বিকেলে শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের ফটক থেকে মিছিল নিয়ে মহাখালীতে যান। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী নায়েক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। রোববারের ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রেলপথ ও সড়কপথ অবরোধ করেছি।’

রাজধানীতে দিনভর তীব্র ভোগান্তি
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কারণে অন্যান্য দিনের মতো গতকালও চরম ভোগান্তি পোহায় সাধারণ মানুষ। সরেজমিন দেখা যায়, জাহাঙ্গীর গেট থেকে মহাখালী যাওয়ার রাস্তা বন্ধ থাকায় এই পথে হাজারো মানুষ হেঁটে চলাচল করেছেন। কেউ শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে, কেউ মালপত্র হাতে নিয়ে হাঁটছেন। সাইকেল, মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে রেললাইন পার হন।
মিরপুর থেকে বাড্ডা যাচ্ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। হাতে মালপত্র নিয়ে মহাখালী রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘বাস বন্ধ থাকায় ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে বাস থেকে নেমেছি। সেখান থেকে মালপত্র হাতে নিয়ে হেঁটেই যেতে হচ্ছে।’

ময়মনসিংহ থেকে আসা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাসে এসে মহাখালীতে নেমেই দেখি রাস্তা বন্ধ। তাই ব্যাগ কাঁধে নিয়েই হাঁটতে হচ্ছে। বাস কোথা থেকে পাব, আর কীভাবে যাব, তা জানি না।’
বিকেলে ডিএমপির গুলশান বিভাগের মহাখালী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জোনায়েদ জাহিদী বলেন, জাহাঙ্গীর গেট থেকে মহাখালীর রাস্তা বন্ধ আছে। তবে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচল করছে।

রাতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণার পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
এদিকে মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করায় বিকেলে ঢাকা থেকে খুলনা, যশোর বাদে অন্যান্য রুটে ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে আটকা পড়ে ৯টি আন্তঃনগর ট্রেন। লোকাল, মেইল, কমিউটারসহ আটকে পড়া যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০। এতে ১০ হাজারের বেশি যাত্রী স্টেশনে আটকে ছিলেন। অবরোধে ঢাকার কমলাপুর অভিমুখী অন্তত ২০টি আন্তঃনগর, লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন বিমানবন্দর, টঙ্গী, জয়দেবপুর স্টেশনে আটকা পড়ে। 
বিকেল সাড়ে ৩টায় নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন মহাখালী রেলক্রসিং পার হওয়ার আগে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। লেভেল ক্রসিং কর্মীরা লাল পতাকা দেখিয়ে ট্রেন থামান। আটকে পড়া ট্রেনটিতে হাজারখানেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। ‌তিতুমী‌র কলেজের শিক্ষার্থীরা অব‌রোধ তু‌লে নেওয়ায় ছয় ঘণ্টা পর ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা সেকশনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় চার প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রেলপথের ওপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চারপাশ থেকে ঘিরে রাখেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া মহাখালীর আমতলী মোড়ে নেওয়া হয় জলকামান।

‘লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে শিক্ষার্থীরা’
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল ভাষা দিবস উদযাপনে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভা শেষে তিনি বলেন, ‘তারা (তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী) তো লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে। দিনের পর দিন কিন্তু তাদের এ দাবি-দাওয়া বেড়েই চলছে। এটার পেছনে কারা জড়িত সেটাও কিন্তু আপনারা জানেন, এটা কিন্তু আপনারা প্রচার করেন না।’

ধৈর্য ধরতে বললেন উপদেষ্টা নাহিদ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘তাদের বলব ধৈর্য ধারণ করতে। তাদের প্রতি সরকার আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল। কিন্তু এই মুহূর্তে হয়তো অনেক কিছু করা সম্ভব না। তাই জনভোগান্তি না করে সেই বিষয়টাও মাথায় রাখা উচিত। আশা করি ভালো কিছু হবে।’
গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজা পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন নাহিদ। এ সময় তাঁর সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। 

‘যৌক্তিকতা’ পাচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌক্তিকতা পাচ্ছে না বলে আবারও জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে তিনি বলেন, সাত কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে। সেই কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে তিতুমীরের আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির পক্ষে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। কারণ তিতুমীরের মতো ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আরও অনেক কলেজ রয়েছে।
ইতোমধ্যে ইউজিসি থেকে একটি প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সময় অর্থাৎ যে সময় পর্যন্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয় না হয়, ততক্ষণ বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ত ম র কল জ ত ত ম র কল জ র শ ক ষ র থ র লপথ অবর ধ উপদ ষ ট কর ছ ন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইনে ‘আউটসোর্সিং’ কাজ দেওয়ার কথা বলে করতেন প্রতারণা

কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে বিজ্ঞাপন দিয়ে অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ শেখান তাঁরা। আবার কখনো ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা সেজে লোকজনকে বিভিন্ন অনলাইন আউটসোর্সিং কাজ দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেন। এভাবে প্রতারণার অভিযোগে একটি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল রোববার ঢাকার লালবাগ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার সিআইডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সুকান্ত বিশ্বাস (২৪) ও মানব বৈদ্য (২৩)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ছয়টি মুঠোফোন ও ১৪টি সিম জব্দ করা হয়।

সিআইডি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন সিমগুলো ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন। তাঁরা সিম নম্বরগুলো বন্ধ করে সেগুলো থেকে ওটিপি গ্রহণ করে নতুন হোয়াটসঅ্যাপ চালু করে ব্যবহার করেন। সেসব অ্যাকাউন্ট থেকে পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পরিচয়ে প্রতারণাসহ লোকজনকে বিভিন্ন অনলাইন আউটসোর্সিং কাজ দেওয়ার নামে অর্থ গ্রহণ করতেন। এ বিষয়ে পল্টন থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনলাইনে ‘আউটসোর্সিং’ কাজ দেওয়ার কথা বলে করতেন প্রতারণা