যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা উপজেলার মানুষ জলাবদ্ধতায় ধুঁকছে অনেক বছর ধরে। এর সমাধানে বারবার নেওয়া হয়েছে ‘ভুল প্রকল্প’। এতে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের কষ্টের দিন শেষ হয়নি। ভবদহ হিসেবে পরিচিত এ অঞ্চলে জলাবদ্ধতায় চরম কষ্টে থাকা মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জলাবদ্ধতার নেপথ্যের বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করে তারা বলেছেন, শিগগির নদীর পলি সরানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নদীর পলি অপসারণে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রয়োগ করতে হবে। তবে সঠিকভাবে টিআরএম বাস্তবায়ন করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সহজ শর্তে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পগুলোতে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় প্রয়োজন। 

গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকাল কার্যালয়ের সভাকক্ষে ‘ভবদহ জলাবদ্ধতা : দীর্ঘস্থায়ী সংকট এবং সমাধানের পথ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমকাল ও অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) যৌথভাবে এই আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল পানি অধিকার ফোরাম।

এএলআরডির চেয়ারপারসন ও নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবিরের সভাপতিত্বে এবং সমকালের সহযোগী সম্পাদক শেখ রোকনের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কৃষি সচিব ড.

মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী, জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) যশোর জেলার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল রশিদ। সূচনা বক্তব্য দেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান রিপা। 

আলোচনায় অংশ নেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড ম্যারিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাশ, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক একেএম মাসুদ আলী, যশোরের প্রগতি সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোতালেব সরকার, যশোরের কেশবপুরের পাঁজিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার পরিচালক বাবর আলী গোলদার প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলাবদ্ধতার আশু কোনো মুক্তি নেই। তবে দুই-তিন বছরের মধ্যে মুক্তি দেওয়া যাবে না– এটা আমি মনে করি না। ভূমি, কৃষি, মৎস্য এবং পানি মন্ত্রণালয় যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে হয়তো একটা বিলে টিআরএম করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব। এই কমিটিতে প্রকৌশলী এবং প্রান্তিক বিশেষজ্ঞদেরও রাখা যেতে পারে। তাদের নিয়ে টিআরএমের কাজ শুরু করতে হবে। এ সময় তিনি ভবদহ অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করেন। একই সঙ্গে একাধিক মন্ত্রণালয়কে সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করারও নির্দেশনা দেন।  

আবু সাঈদ খান বলেন, এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করতে হবে। এর জন্য কিছু স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে এবং এটাই সংগত হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় সরকার পরিবর্তনও হতে পারে। কিন্তু প্রকল্পের যেন পরিবর্তন না হয়, এই নিশ্চয়তা থাকতে হবে। তা না হলে কোনো লাভ হবে না। 
এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, জলাবদ্ধ এলাকার পানিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এই জমা পানি নদীতে ফেলে সাগরে না পাঠিয়ে তা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর একটা অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে যেসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায়, সেগুলো করতে হবে। একই সঙ্গে একটা স্বাধীন গবেষণা করে প্রয়োজন ভিত্তিতে মহাপরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিতভাবে এগোতে হবে। 

অন্যান্য বছরের তুলনায় গত বছর বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন নাজমুল আহসান। একই সঙ্গে ভবদহ জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই এলাকার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে একটা গবেষণা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বড় ধরনের কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে। এটা হতে পারে টিআরএম কিংবা অন্য কোনো সমাধান।

জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, ভবদহ এলাকায় ১৮ হাজারের বেশি চিংড়ি ঘের আছে। এসব এলাকায় কোনো ঘের ছিল না। যখন এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, তখন সেখানকার মানুষের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সেখানে মাছের ঘের করা শুরু হয়। সাধারণ মানুষই ঘের করা শুরু করে। এতে লাভ হচ্ছে দেখে প্রভাবশালীরাও ঘের করেন। ২০১৯ সালে ঘের ব্যবস্থাপনা নীতিমালাও করা হয়েছে। নীতিমালায় নদী, খাল বা বিলে ঘের করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু নীতিমালা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। কেননা, এজন্য কোনো আইন নেই। এই নীতিমালাকে আইন বা বিধিতে পরিণত করতে হবে। একই সঙ্গে ঘেরের সঙ্গে জড়িতদের ক্ষতি না করে টিআরএম বাস্তবায়ন করতে হবে। 

শামসুল হুদা বলেন, ৪০ বছর ধরে এই সমস্যা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। এ সময়ে যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জীববৈচিত্র্য এবং জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু সমাধান নিয়ে আলোচনা করলে হবে না, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করাও প্রয়োজন। সব ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব নয়, এর পরও চেষ্টা করতে হবে। একইসঙ্গে এই ক্ষতির কারণও উদ্ঘাটন করতে হবে। বিভিন্ন পরিকল্পনা করে তার বাস্তবায়নের পাশাপাশি যেখানে অর্থের অপচয় এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। অপচয়ের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য এই সরকারের আমলেই অন্তত একটা গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে গবেষণা কাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা আমাদের বাড়াতে হবে। 

মূল প্রবন্ধে সানজিদা খান রিপা ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। একইসঙ্গে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ তুলে ধরেন। স্বল্পমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে: পাম্প মেশিনের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্রুত পানি কমানোর ব্যবস্থা করা, ভবদহ স্লুইসগেটের কাছে হরি নদী খনন করার যন্ত্র দুটি থেকে বাড়িয়ে চারটি করা; ভবদহ স্লুইসগেট থেকে শোলগাতী পর্যন্ত নদীতে একটা চ্যানেল করে জরুরি ভিত্তিতে পানি সরানো; আমডাঙ্গা খালের পাশে গড়ে ওঠা মজুমদার অটো রাইস মিল সরিয়ে দিয়ে খালটির সোজাসুজি সংযোগ তৈরি করা। 

মধ্যমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে– ভবদহের বিলগুলোর সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ স্থাপন করতে আমডাঙ্গা খালটির গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা; মহাকাল এলাকায় অবস্থিত আমডাঙ্গা খালের ৬-ভেন্টের স্লুইসগেটটি ভেঙে ফেলা। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে পোল্ডার অভ্যন্তরে আবদ্ধ নদীগুলো উন্মুক্ত করে ভৈরব, কপোতাক্ষ ও বিল ডাকাতিয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা; ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে টেকা, মুক্তেশ্বরী, হরি, শ্রী, আপার ভদ্রা, হরিহর ও ঘ্যাঙরাইল নদীর অবাধ সংযোগ তৈরি করে প্রবহমান রাখার জন্য নদীখনন ও পলি ব্যবস্থাপনা করা; প্রতিটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বিলগুলোতে পর্যায়ক্রমে টিআরএম বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে খুশি কবীর বলেন, এই সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তিগত সমাধানও প্রয়োজন। সঠিকভাবে একটা স্বাধীন গবেষণা করা জরুরি। এর সঙ্গে জনগণের অংশগ্রহণও প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য গৃহীত প্রকল্পে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সবাই যেন সেই প্রকল্প গ্রহণ করে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু না করতে পারে, সে ক্ষেত্রে যেন বাস্তবায়নের একটা রূপরেখা দেয়। পরবর্তী সরকার সেটা বাস্তবায়ন করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ প রকল প এল ক য় ঘ র কর ত করত সরক র ন করত সমস য সমক ল সমন ব

এছাড়াও পড়ুন:

রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ

আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ মে থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় তিনটি দল ও সংগঠন পৃথক জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি ঘিরে ছুটির তিন দিনে রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।

১ মে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। পরদিন ২ মে শুক্রবার আওয়ামী লীগের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। ৩ মে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বেলা দুইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এই সমাবেশ আয়োজনে যুক্ত রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। ঢাকা মহানগরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সমাবেশে অংশ নেবেন।

নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সমাবেশটি অনেক বড় করার। আশা করি, আপনারা সেদিন উপস্থিত থাকলে দেখতে পাবেন।’

পরদিন শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এই কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারও দাবি করা হবে।

২১ এপ্রিল থেকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিলের মতো কর্মসূচি করছে এনসিপি। শুক্রবারের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।

এনসিপির সমাবেশের পরদিন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের দিকে অনেকের দৃষ্টি। এক মাস ধরে সংগঠনটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদনসহ কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও আঞ্চলিক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টায় মহাসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।

হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এই মহাসমাবেশে তাঁদের মুখ্য দাবি হবে মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। কারণ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলাগুলোকে পুঁজি করে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও একই কাজ করতে পারে। তাই মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে তাঁদের মুখ্য দাবি। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।

উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের ঘটনা ঘটে।

আগামী ৫ মে সোমবার সরকারি কর্মদিবস। সপ্তাহের মাঝখানে রাজধানীতে সমাবেশ করলে বড় ধরনের জনদুর্ভোগে সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সে জন্য হেফাজতে ইসলাম ছুটির দিনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া হেফাজত ৫ মে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করে না। এ ধরনের দিবস পালন ইসলামের নীতিবিরোধী। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ৩ মে মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংগঠনের নেতাদের নামে থাকা অতীতের মামলা-মোকদ্দমাগুলো প্রত্যাহারে সরকারের ওপর চাপ তৈরি, একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য করারও একটি লক্ষ্য রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ