কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 4th, February 2025 GMT
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার যে কোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সোমবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। খবর- বাসসের।
ড.
তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে এবং মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে। দেশবাসীকে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, সবাইকে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের মানবাধিকার সুরক্ষার নির্দেশ দেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যদি আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে বৈশ্বিক ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হতে হবে।
পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এমনভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হবে, যাতে পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।
পুলিশপ্রধান বাহারুল আলম জানান, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে এই মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ জানিয়েছে। আশা করি, শিগগির সাড়া পাব।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
অনলাইনে মামলার ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ
সরাসরি থানায় না গিয়ে মানুষ যাতে অনলাইনে মামলা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
বর্তমানে নিকটস্থ কোনো থানায় গিয়ে এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) দাখিল করতে হয়। এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ এবং এর ফলে নানা হয়রানির সুযোগ থাকে।
ড. ইউনূস বলেন, পুলিশের একটি নম্বর নির্ধারণ করা উচিত, যেমন-৯৯৯। যার মাধ্যমে দেশের যে কোনো স্থান থেকে অভিযোগকারী এফআইআর করতে পারেন। এটি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ঝামেলা কমাবে।
সভায় পুলিশপ্রধানকে যত দ্রুত সম্ভব অনলাইনে এফআইআর দায়েরের জন্য একটি নতুন ফোন নম্বর চালুর নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পুলিশের একটি বিশেষ কল সেন্টার এ জন্য স্থাপন করা উচিত, যারা অনলাইনে মামলা করতে সমস্যায় পড়বেন, তারা সহজে এই কল সেন্টার থেকে সহায়তা নিতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ডিএমপি, কোস্টগার্ড ও বিশেষ শাখার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র জন য ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
কথা নহে, কাজ চাহি
অপরাধ দমনে স্বীয় বাহিনীর মাঠ প্রশাসনের উদ্দেশে মহাপুলিশ পরিদর্শক- আইজিপি যেই শক্ত বার্তা দিয়াছেন, উহা গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। রবিবার ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারের সহিত ভার্চুয়াল বৈঠক করিয়া আইজিপি তাহাদিগকে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা দলবদ্ধ সহিংসতাসহ যেই কোনো প্রকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি শক্তভাবে মোকাবিলার নির্দেশ দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, কেহ অপরাধে সংশ্লিষ্ট হইলে দল-মত-গোষ্ঠী পরিচয় না দেখিয়া তাহার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ লইতে হইবে। সাম্প্রতিক সময়ে খোদ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নজিরবিহীন যেই মব ভায়োলেন্সের সম্প্রসারণ ঘটিয়াছে, কথিত নৈতিক পুলিশির নামে নারী হেনস্তা চলিতেছে, এমনকি একাদিক্রমে নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা জনসমক্ষে আসিতেছে, প্রধানত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীগুলির নিষ্ক্রিয়তা এহেন পরিস্থিতির জন্য দায়ী। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানির ন্যায় অপরাধের বাড়বাড়ন্তের পশ্চাতেও একই কারণকে দায়ী করা যায়। এই অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধান বাহিনীর সর্বোচ্চ মহল হইতে আলোচ্য নির্দেশনা নিঃসন্দেহে পুলিশের মাঠ প্রশাসনের আত্মবিশ্বাস ফিরাইয়া দিতে পারে।
মুশকিল হইতেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্ত হস্তে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা পুলিশপ্রধানের পূর্বে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, এমনকি সরকারের শীর্ষ মহলের নিকটেও শুনিয়াছি, যাহার প্রভাব মাঠ পর্যায়ে কার্যত পরিলক্ষিত হয় নাই। বরং বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপরই আক্রমণ সংঘটিত হইতেছে। পুলিশ হেফাজত হইতে আসামি ছিনাইয়া লইবার একাধিক ঘটনা অথবা একই উদ্দেশ্যে থানা ঘেরাওয়ের ঘটনাও ঘটিয়াছে। এই সকল ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের আহত হইবার উদাহরণও বিরল নহে। আমরা মনে করি, শীর্ষ মহল হইতে যতই নির্দেশনা প্রদান করা হউক; সাধারণ পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি করিতে না পারিলে, আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে, আইন প্রদত্ত কর্তৃত্ব ফিরিয়া না পাইলে পুলিশকে প্রত্যাশিত মাত্রায় সক্রিয় করা কঠিনই থাকিবে। পুলিশের কর্তৃত্ব ফিরাইয়া দিবার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হইল সকল প্রকার বাহ্যিক হস্তক্ষেপমুক্তভাবে বাহিনীটিকে আইন ও বিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
দুঃখজনক, পূর্বসূরিদের ন্যায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকারের প্রবণতা দৃশ্যমান, যাহা পুলিশের মধ্যেও ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা লুক্কায়িত করিবার প্রবণতা সৃষ্টি করিতে পারে। সরকারের শীর্ষ মহল হইতে যেই কোনো অপরাধজনক ঘটনার জন্য বিশেষ কোনো দল বা মহলকে দায়ী করিবার যেই প্রবণতা পরিলক্ষিত হইতেছে, উহাতে দোষারোপের পুরাতন ক্রীড়া অব্যাহত রাখিতে পারিলেও জননিরাপত্তা বিধানে ভূমিকা রাখে না। অস্বীকার করা যাইবে না, বিশেষত গত আগস্ট হইতে অদ্যাবধি পুলিশের উপর যত প্রাণঘাতী হামলা হইয়াছে; বাহিনীটির যত স্থাপনা ধ্বংস করা হইয়াছে, সেই সকল ঘটনার তদন্ত হয় নাই; অপরাধীদেরও আইনি বেষ্টনীতে আনা হয় নাই। ইহা বাহিনীটির মনোবল ফিরাইয়া আনিবার পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ– এই বিষয়ও সরকারকে অনুধাবন করিতে হইবে। দায়িত্ব পালনে পুলিশকে যে এখনও বিভিন্ন মহল বাধা প্রদানে দুঃসাহস পাইতেছে, উহারও উৎস এইখানে নিহিত।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেই অবনতি ঘটিয়াছে, তাহা শুধু নাগরিকদের জীবন ও সম্পদকেই বিপন্ন করিতেছে না; জাতীয় অর্থনীতির জন্যও ভয়ংকর পরিণামকে আহ্বান জানাইতে পারে। এহেন অবস্থায় একদিকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস, অন্যদিকে বৈদেশিক বাণিজ্যের নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে পারে। ফলে শুধু নির্দেশনা জারি নহে, এখন সময় উক্ত নির্দেশনা বাস্তবে রূপায়ণের। এই বিষয়টিই দেশের নীতিনির্ধারকগণ উপলব্ধি করিবেন বলিয়া আমরা প্রত্যাশা করি। তৎসহিত বর্তমান সমাজেও বিশেষ করিয়া তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধপ্রবণতার বিরুদ্ধে যে জাগরণ দৃশ্যমান, উহাও অব্যাহত রাখিতে হইবে। আমরা জানি, যে কোনো পরিবর্তনে নাগরিক সচেতনতাই প্রাথমিক গতি সঞ্চার করে।