যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীন বিপুলসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তাড়াতে সদ্য শপথ নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০ বছর আগের যুদ্ধকালীন একটি দুর্বোধ্য আইন ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন। এ আইনের মাধ্যমে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিতাড়ন করতে আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে না। একটি বোর্ড কর্তৃপক্ষ থাকবে। তারাই নথিপত্রহীনদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবেন।

সোমবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, ওভাল অফিসে বসার পর থেকেই ট্রাম্প ৩ ফেব্রুয়ারি (স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার) ১৭৯৮ সালের এলিয়ান এনিমিজ অ্যাক্ট আইন বিষয়ে সামরিক বাহিনী ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। আইনটি সর্বশেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে (১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত) বন্দিশালায় থাকা জাপান, জার্মানি ও ইতালীয় বংশোদ্ভূতদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছিল। 

ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে আইনি বাধার মুখে পড়বে। এর মাধ্যমে নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ন্যায়সংগত প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো ব্যাহত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে নথিপত্রহীন হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তাড়ানোর অঙ্গীকার করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ অবস্থায় গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিনেই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে তিনি সই করেন। নথিপত্রহীনদের ধরতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি গির্জা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগে এসব স্থানে অভিযান চালাতে পারত না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

আদালতের মাধ্যমে নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরানোর প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ। এজন্য ট্রাম্প চান অতি পুরোনো সেই এলিয়ান এনিমিজ অ্যাক্ট নামের আইনটি ফিরিয়ে আনতে, যা দ্রুততর সময়ে নথিপত্রহীনদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে সক্ষম। এ ধরনের আইনের প্রয়োগ কেবল যুদ্ধকালেই দেখা যায়। আক্রমণের শিকার হলেই আইনটি প্রয়োগ করা হয়। রিপাবলিকানরা মনে করেন, নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করছেন।

এরই মধ্যে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে মার্কিন সহযোগিতায় চলা বিশ্বব্যাপী অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এর ফলে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না: প্রধান উপদেষ্টা

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার যে কোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সোমবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। খবর- বাসসের।

ড. ইউনূস আরও বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের অবশ্যই একটি কমান্ড সেন্টার বা কমান্ড সদরদপ্তর স্থাপন করতে হবে, যা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে।

তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে এবং মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে। দেশবাসীকে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, সবাইকে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের মানবাধিকার সুরক্ষার নির্দেশ দেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যদি আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে বৈশ্বিক ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হতে হবে।
পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এমনভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হবে, যাতে পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।

পুলিশপ্রধান বাহারুল আলম জানান, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে এই মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ জানিয়েছে। আশা করি, শিগগির সাড়া পাব।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

অনলাইনে মামলার ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ
সরাসরি থানায় না গিয়ে মানুষ যাতে অনলাইনে মামলা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
বর্তমানে নিকটস্থ কোনো থানায় গিয়ে এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) দাখিল করতে হয়। এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ এবং এর ফলে নানা হয়রানির সুযোগ থাকে।
ড. ইউনূস বলেন, পুলিশের একটি নম্বর নির্ধারণ করা উচিত, যেমন-৯৯৯। যার মাধ্যমে দেশের যে কোনো স্থান থেকে অভিযোগকারী এফআইআর করতে পারেন। এটি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ঝামেলা কমাবে।

সভায় পুলিশপ্রধানকে যত দ্রুত সম্ভব অনলাইনে এফআইআর  দায়েরের জন্য একটি নতুন ফোন নম্বর চালুর নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পুলিশের একটি বিশেষ কল সেন্টার এ জন্য স্থাপন করা উচিত, যারা অনলাইনে মামলা করতে সমস্যায় পড়বেন, তারা সহজে এই কল সেন্টার থেকে সহায়তা নিতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, ডিএমপি, কোস্টগার্ড ও বিশেষ শাখার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপরাধ জগতে মেরূকরণ, হত্যা হামলা বেড়েছে খুলনায়
  • বিদেশে পালাতে চেয়েছিলেন শফিকুর!
  • যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না: প্রধান উপদেষ্টা
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কমান্ড সেন্টার গঠনের নির্দেশ
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস রাজশাহীর কর্ণধারের
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রাজশাহীর কর্ণধার, বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস
  • তিতুমীর শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ: সতর্ক অবস্থানে পুলিশ
  • শেখ হাসিনা তার বর্বর শাসন ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন: রিজভী