তাজা ফল আমদানিতে বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহর করা না হলে আজ মঙ্গলবার থেকে দেশের সব স্থল ও নৌবন্দর দিয়ে আসা ফল খালাস ও সরবরাহ বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছেন আমদানিকারকরা। 
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেন তারা। আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 
সংগঠনটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন ফল হয়ে গেছে বড়লোকের খাদ্য। গরিব মানুষ ফল খেতে পারছে না। আগে ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ ছিল। গত ৯ জানুয়ারি এক আদেশে এই হার বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে আপেল, আঙুর, মালটাসহ আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ফলকে বিলাসী পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নিত্যপণ্যের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আপেল, কমলা, মেন্ডারিন, আঙুর, নাসপাতি ও আনার মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কারণ বর্তমানে ফল আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১০ শতাংশ, অগ্রিম কর ৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২০ শতাংশসহ মোট ১৩৬ দশমিক ২ শতাংশ শুল্ককর দিতে হচ্ছে। 
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১০০ টাকায় ফল আমদানি করলে এর সঙ্গে সরকারকে ১৫০ টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়। এতে আমদানি খরচ দাঁড়ায় ২৫০ টাকা। তাহলে বাজারে বিক্রি করতে হবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। ফলের দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে। তাতে ফল পচে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। মানববন্ধন শেষে সংগঠনটির নেতারা এনবিআরের চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার বাজারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা এবার

সয়াবিন (প্যাকেটজাত) তেল ছাড়া আর কোনো নিত্যপণ্য সরবরাহে সংকট নেই, বলা যায়। এ কারণেই মূলত রোজার বাজারে এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা হচ্ছে ভোক্তাদের। এক ধরনের স্বস্তি বিরাজ করছে বলে মিডিয়ায়ও পণ্যবাজার ঘিরে আলোচনা কম। কিছু পণ্য কিন্তু আলাদা করে ‘রোজার পণ্য’ বলে বিবেচিত। আর সেগুলোর দাম নতুন করে বেড়ে যাওয়াই এতদিনের অভিজ্ঞতা। তবে এবার এসব পণ্যের সিংহভাগের দামই স্থিতিশীল কিংবা নিম্নগামী। যেমন খেজুরের দাম সহনীয় করতে কর-শুল্ক হ্রাসের পদক্ষেপ সুফল দিয়েছে। এমন আরও কিছু পণ্যে একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, আর সেটা বেশ আগে। তাতে আমদানি ও সরবরাহ অনেক বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে ‘সিন্ডিকেটবাজি’র সুযোগও কমে আসে। 

সরবরাহ সংকট তৈরি করে সয়াবিন তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর চেষ্টা অবশ্য পরিলক্ষিত। অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি কমার কোনো খবর নেই। পরিশোধনকারী প্লান্টগুলোও বসে নেই। কিন্তু বাজারে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছেই। সরকার দাম বাড়াতে সম্মত হলেই রাতারাতি এর সরবরাহ বাড়বে বলে সবার ধারণা। প্যাকেটজাত সয়াবিন সহজে মিলছে না বলে সব রকম খোলা ভোজ্যতেলের চাহিদা গেছে বেড়ে। নীরবে ঘটছে এর দাম বৃদ্ধি। 
সরিষা ও চালের কুঁড়ার তেলের চাহিদা বাড়ার খবর রয়েছে। পাম অয়েলের ব্যবহার বরাবরই বেশি। সেটা দামের কারণেও। সয়াবিনের কৃত্রিম সংকটে পাম অয়েলের ব্যবহার আরও বাড়তে পারে রোজায়। বাড়তে পারে দামও। 

সয়াবিন তেলের বাজারে সরকার কী করছে, বোধগম্য নয়। অতীতে এসব পণ্যের ‘যৌক্তিক দাম’ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তার নিষ্পত্তিতে খুব দেরি হয়নি। এবার এত বিলম্ব কেন; বিশেষত কেন এটা রোজা পর্যন্ত গড়াল? রোজার আগ দিয়ে এর নিষ্পত্তি করা গেলে তো সামগ্রিকভাবেই একটা স্বস্তি আসত জনমনে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ বাড়তে থাকার কারণেও পণ্যবাজার নিয়ে স্বস্তি এখন মূল্যবান। তা ছাড়া দেশের সিংহভাগ মানুষ বছরের পর বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করছে। মজুরি বাড়লেও বাড়ছে মূল্যস্ফীতির চাইতে কম হারে। এ অবস্থায় রোজায় নতুন করে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়লে সেটা দারুণ খবর বৈ কি। এবার তা পরিলক্ষিত হলেও এতে কাঁটা হয়ে আছে ভোজ্যতেল ঘিরে চলমান সংকট। 

আমদানির পাশাপাশি দেশের ভেতর থেকে পণ্যের সরবরাহ এবার ভালো। রোজার বাজারে রয়েছে এর সুপ্রভাব। আলু ও পেঁয়াজের দাম দীর্ঘদিন ভোগানোর পর এখন বেশ সহনীয়। এ ক্ষেত্রে বরং শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকের লোকসান নিয়ে। রোজায় প্রধান প্রধান উৎপাদন অঞ্চল থেকে ‘হালি পেঁয়াজ’ উত্তোলনের খবরে এর দাম আরও কমার আশঙ্কা। এ অবস্থায় আমদানি বন্ধের দাবি ওঠার কথা। আলুও আমদানি হচ্ছিল। উৎপাদন সন্তোষজনক এবং দাম অনেক কমে এসেছে বলে এর রপ্তানিতেই এখন মনোযোগী হতে হবে। আলু, পেঁয়াজ ইফতারসামগ্রী তৈরিতেও কম ব্যবহৃত হয় না। তা সত্ত্বেও এগুলোর দাম এবার হয় স্থিতিশীল, নয় নিম্নগামী। ইফতারির অন্যতম প্রধান উপকরণ বেগুনের বাজারও কম অস্থির। পাশাপাশি ছোলা ও নানা রকম ডালের দাম স্থিতিশীল। দেখা দরকার, ইফতারি আইটেমের দামে এর প্রভাব রয়েছে কিনা।  

রোজার শুরুতে অবশ্য পণ্যবাজার কিছুটা অস্থির হয়েছিল। এর সম্ভাব্য প্রধান কারণ ভোক্তার আচরণ। উৎসবে একবারে বেশি করে কেনাকাটার অভ্যাস রয়েছে সচ্ছল জনগোষ্ঠীতে। দাম বাড়ার শঙ্কায়ও অনেকে বেশি করে কিনে রাখতে চায়। এর প্রভাবে বাজার অস্থির হলে নিম্ন আয়ের মানুষও পড়ে বাড়তি দুর্ভোগে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ক্রেতাও কম নেই দেশে। একই বাজার থেকে পণ্য কিনতে হয় তাদের। একবারে বেশি কেনাকাটা করে অনেককে ঠকতেও দেখা যায়। রোজার প্রথম সপ্তাহের পর এবারও কিছু পণ্যের দাম কমে আসার খবর রয়েছে। যেমন মুরগি। ডিমের দাম কমার খবরও অনেক স্বস্তির। রোজায় বেকারিতে চাহিদা হ্রাসের কারণে হোক অথবা যে কারণেই, সর্বস্তরের ভোক্তা খুশি ডিমের দাম কমায়। তবে উদ্বেগ আছে এর উৎপাদকদের নিয়ে। তাদেরও তো পার করতে হচ্ছে রোজার সময়টা। 

শীতের শেষে, গরম তীব্র হওয়ার আগেই এবার রোজা শুরু হওয়ায় সবজির বাজারে আছে স্বস্তি। গ্রীষ্মের সবজি উঠতে শুরুর এ সময়টায় শীতের সবজিও কম নেই। টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রায় পানির দরে। বিদায়ী মৌসুমের সব সবজির দামই কম। মানুষের আকর্ষণ যেসব নতুন সবজির দিকে, সেগুলোর দাম অবশ্য বেশি। এ নিয়ে অভিজ্ঞজনের অভিযোগও কম। এমনকি লেবুর দাম নিয়ে তাদের অভিযোগ তীব্র নয়। তারা তো জানেন, এটা লেবুর মৌসুম নয়। তার ওপর চাহিদা বেড়েছে হঠাৎ কয়েক গুণ। যারা নিয়মিত লেবু খায় না, তারাও শরবতের জন্য লেবু কিনতে উদগ্রীব। এতে লেবুচাষিরা ভালো দাম পাচ্ছে বলে খবর অবশ্য স্বস্তির। লেবুর শরবতে ব্যবহৃত চিনির দামও স্থিতিশীল কিংবা কমতির দিকে। এতে মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দাম কমেছে বলে অবশ্য মনে হয় না। ইফতারির জনপ্রিয় পণ্য জিলাপির দাম কি কমেছে? 
ফলের মধ্যে তরমুজের দামের পাশাপাশি এর মান নিয়ে অভিযোগ বাড়ে রোজায়। এবার এ-সংক্রান্ত খবর তেমন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। রোজায় আমদানি করা ফলের চাহিদাও অনেক বাড়ে। এর মধ্যে সাধারণ মানের খেজুরের দাম কমায় সামগ্রিকভাবে ফল নিয়ে অভিযোগ কম। মূল জায়গায় স্বস্তি এলে অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিযোগ কমে আসে মানুষের। আমদানিকৃত কিছু ফল দেশে উৎপাদিত হচ্ছে বলেও একটা স্বস্তি রয়েছে। সারাবছর কমবেশি পাওয়া যায় এমন ফল যেমন কলা, পেঁপের সরবরাহ নিয়েও সংকট নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ফলের চাষ বেড়েছে। সরকারের নীতি হলো দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে ফলের আমদানি যথাসম্ভব কমানো। সেভাবেই কর-শুল্ক আরোপিত রয়েছে। ডলারের বর্ধিত দামের কারণেও আমদানি করা ফলের দাম বেশি। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা চান এর আমদানিটা সচল থাকুক। এদের মধ্যেও দেশে উৎপাদিত ফলের পরিভোগ বেড়েছে। এবার আনারস, বরই, পেয়ারা প্রভৃতির বেচাকেনাও ভালো। 

রোজায় আদা-রসুনসহ মসলার চাহিদা অনেক বাড়ে। ঈদ পর্যন্ত এসবের চাহিদা কমবে না। মসলার বাজার শান্ত রাখাও এই সময়ে বড় কর্তব্য সরকারের। পেঁয়াজ বাদে প্রায় সব মসলাতেই আমরা আবার অনেক বেশি আমদানিনির্ভর। রোজায় এ নির্ভরতা আরও বাড়ে। তবে এ কারণে মসলার বাজার অশান্ত হয়নি এবার। বড় আকারের ‘চীনা’ আদা-রসুনসহ সব রকম মসলার সরবরাহ ভালো। দামও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসহনীয় নয়। জিরা, এলাচির মতো মসলার দাম অবশ্য বেশি। এগুলো কম লাগে বলে আবার অভিযোগও কম। তবে এমন অভিযোগ রয়েছে– রোজায় চালের দাম বাড়তির দিকে কেন! এ সময়ে চালের চাহিদা বাড়ার কথা নয়। চাল তো আমদানিও হচ্ছে। শান্ত হয়ে আসা বাজারে কোনো কোনো পক্ষকে সুযোগ নিতে দেখা যায়। তেমন কিছু যাতে না ঘটে, সেদিকে দৃষ্টি রাখাও জরুরি নয় কি?

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলাম লেখক
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহীতে নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, অন্য পণ্যের দামও বাড়তি
  • রোজার বাজারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা এবার
  • অগ্রযাত্রায় জলবায়ু সংগঠন ‘রিনিউ আর্থ’
  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ২৬ সদস্যের নতুন কমিটি
  • তপশিল ঘোষণা, বিজিএমইএ’র নির্বাচন ২৮ মে
  • নাগরিক পার্টির অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন ছাত্রদলের
  • বসুন্ধরার ঘটনায় সারজিসের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত
  • বসুন্ধরার ঘটনায় সারজিসের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত: ছাত্রদল
  • বসুন্ধরার ঘটনায় সারজিসির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত: ছাত্রদল
  • পল্টনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল