Samakal:
2025-04-08@19:09:55 GMT

যারা কোনোদিন মন থেকে মুছবে না

Published: 3rd, February 2025 GMT

যারা কোনোদিন মন থেকে মুছবে না

বাংলাদেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি দ্রোহের উন্মেষকাল। আমাদের ভাষিক বোধ ও সৃজনশীলতার সহস্রধারা ভাষা আন্দোলনের বুক চিরে উৎসারিত। ভাষা ও ভাষার সংগ্রামের স্মারক তিনটি গ্রন্থের ওপর সুহৃদদের লেখায়


মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার ঋণ কখনও শোধ করা যায় না। জন্মের পর মাতৃভূমির আলো-বাতাসে মায়ের শেখানো বুলি আওড়িয়ে বেড়ে উঠি আমরা। জন্মগত এই অধিকার কখনও কখনও শাসকগোষ্ঠী কেড়ে নিতে চায়; কেড়ে নিতে চায় ভাষার অধিকার। এমনিভাবে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কেড়ে নিতে চেয়েছিল মাকে– মা বলে ডাকার অধিকার। প্রবল প্রতিবাদ এবং প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার। মিছিলে, গানে এবং কবিতায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল রাজপথে। ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ আব্দুল লতিফের লেখা গানটি বায়ান্নর আগে রচিত হলেও ভাষা আন্দোলনে এর গুরুত্ব অনেক। ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি.

..’। 
বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত গানটিতে বাংলা ভাষা আন্দোলনের আবহ তুলে ধরেন। অমর কথামালাসংবলিত গানটি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর প্রভাতফেরিতে গাওয়া হয়। গাফ্ফার চৌধুরীর এ গানটি ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে ছাপা হয়। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এ সংখ্যাটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রথম সংখ্যায় একুশের প্রবন্ধ, একুশের কবিতা, একুশের গল্প, একুশের নকশা, একুশের গান, একুশের ইতিহাস– শিরোনামে ৬টি বিভাগে মোট ২২ জন লেখকের লেখা ছাপা হয়। এ ছাড়া ছিল ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামে ৪ পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র প্রথম সংখ্যার পুরো বিবরণ এ রকম– সম্পাদকীয়: ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রবন্ধ: আলী আশরাফ– সকল ভাষার সমান মর্যাদা। একুশের কবিতা: শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আবদুল গণি হাজারী, ফজলে লোহানী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আনিস চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, জামালুদ্দিন, আতাউর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক ও হাসান হাফিজুর রহমান। একুশের গল্প: শওকত ওসমান– মৌন নয়, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ– হাসি, আনিসুজ্জামান– দৃষ্টি, সিরাজুল ইসলাম– পলিমাটি, আতোয়ার রহমান–অগ্নিবাক। একুশের নকশা: মুর্তজা বশীর– একটি বেওয়ারিশ ডায়েরির কয়েকটি পাতা, সালেহ আহমেদ– অমর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত স্বাক্ষর। একুশের গান: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও তোফাজ্জল হোসেন। একুশের ইতিহাস: কবিরউদ্দিন আহমদ।
১৯৫৩ সালে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামের সংকলনটি সম্পাদনার মধ্য দিয়ে হাসান হাফিজুর রহমান একুশের সংকলন প্রকাশের যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিলেন, দ্বিধাহীনভাবে বলা যেতে পারে, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিই’ আজ পর্যন্ত প্রকাশিত একুশের সংকলনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনটি দখল করে আছে।
ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরে থাকা ছাত্রের মাথার খুলি উড়ে যাওয়া দেখে যেমন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচনা করেছিলেন ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি...’, তেমনি কবি হাসান হাফিজুর রহমান লিখেছেন– ‘আর এবার আমরা হারিয়েছি এমন কয়েকজনকে যাঁরা কোনদিন মন থেকে মুছবে না,/কোনদিন কাউকে শান্ত হতে দিবে না।’ তিনি শুধু লেখেননি, একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের গুণী কবি, সাহিত্যিক এবং লেখকদের লেখায় সংকলন প্রকাশ করে আমাদের ভাষা আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছেন, একুশের মর্যাদাকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে। একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। বিশ্বের কোনো দেশই ভাষার জন্য আন্দোলন করে জীবন দেয়নি। একমাত্র বাঙালি জাতিই এমন গৌরবগাথা রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের অংশীদার। হাসান হাফিজুর রহমানের কবিতার লাইনের মতো বলতে চাই– ‘যারা কোন দিন মন থেকে মুছবে না’। এ দিবস এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্বের বিপন্নপ্রায় ভাষাভাষীর মাতৃভাষা রক্ষার দাবি নিয়ে দিবসটি আমাদের সচেতন হতে প্রেরণা জোগায়। 
সহসভাপতি সুহৃদ সমাবেশ, ফরিদপুর

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ স ন হ ফ জ র রহম ন এক শ র গ আবদ ল গ

এছাড়াও পড়ুন:

ফুল বাগানে  হলো মহানায়িকার জন্মদিন

‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার ; রাত ঘুম ঘুম ঝিকিমিকি তারা এই মাধবী রাতে আসেনি কেউ কভু আর জীবনে আমার: এই রাত তোমার আমার শুধু দুজনার। এরকম মৃদু সুরে গান চলছে সুচিত্রা সেনের সবার ঘরে; অন্যদিকে তারই আঙিনায় ফুলের বাগানে পালিত হচ্ছে সুচিত্রা সেনের জন্মদিনে কেক কাটা ও আলোচনা সভা। 
এরকম এক পরিবেশে আজ  রোববার  পাবনায় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে । ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিলের আজকের দিনে তিনি পৃথিবীর মুখ আলো করে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। 

সকাল ১১টায় পাবনা শহরের হেমাসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ পাবনার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। 

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ মধু, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফরিদুল ইসলাম খোকন, ফজলুল হক সুমন প্রমূখ।
তৎকালীন বৃহত্তর  পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পদে চাকুরী করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। দু’বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত। শহরের মহাকালী পাঠশালায় (বর্তমানে টাউন গার্লস হাই স্কুল) পড়ালেখা শেষে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগী ও মেধাবী না থাকলেও গান, নাটক, অভিনয় প্রিয় ও পছন্দের ছিল সূচিত্রা সেনের। পাবনা শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা দেখান।

পাবনার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রমা বনেদি পরিবারের বধু হয়ে ঘর সংসারের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে “শেষ কোথায়” নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি “সাত নম্বর কয়েদি” ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। স্বামী দিবানাথ সেনের প্রবল আপত্তি থাকলেও সুচিত্রা সেন মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন। ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবির পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই একজন সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় এ ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি মুক্তির সময় রমা নাম বদলে নাম দেন ‘সুচিত্রা সেন’। এরপর থেকেই কিশোরী বেলার বান্ধবিদের রমা বাবা-মায়ের দেওয়া নাম রমা দাশগুপ্ত থেকে স্বামীর পদবী নিয়ে রমা সেন সবশেষে স্বপ্নসুন্দরী সুচিত্রা সেন হয়ে যান। সুচিত্রা সেন বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমার মারা গেলে সিনেমায় অভিনয় বন্ধ করে দেন।
১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেষ্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন। ২০০৫ সালে তাঁকে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তার রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহন করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সব্বোর্চ সম্মান বঙ্গবিভূষণ দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি দেবদাস ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন, যা ছিলো তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, পাবনার সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু বলেন, মহান নায়িকার জন্মদিনে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে কেক কাটাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া পাবনার আরও কয়েকটি সংগঠন কেক কাটাসহ নানা কর্মসুচি হাতে নেওয়া হয়েছে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারাজীবনের সম্বল ১০ মিনিটে পুড়ে শেষ
  • খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড
  • ভূমি ভাবতেই পারেননি তার জীবনে এমন সুযোগ কখনও আসবে
  • ফুল বাগানে উদযাপিত হলো মহানায়িকার জন্মদিন
  • ফুল বাগানে হলো মহানায়িকার জন্মদিন
  • ফুল বাগানে  হলো মহানায়িকার জন্মদিন