বাংলাদেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি দ্রোহের উন্মেষকাল। আমাদের ভাষিক বোধ ও সৃজনশীলতার সহস্রধারা ভাষা আন্দোলনের বুক চিরে উৎসারিত। ভাষা ও ভাষার সংগ্রামের স্মারক তিনটি গ্রন্থের ওপর সুহৃদদের লেখায়
মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার ঋণ কখনও শোধ করা যায় না। জন্মের পর মাতৃভূমির আলো-বাতাসে মায়ের শেখানো বুলি আওড়িয়ে বেড়ে উঠি আমরা। জন্মগত এই অধিকার কখনও কখনও শাসকগোষ্ঠী কেড়ে নিতে চায়; কেড়ে নিতে চায় ভাষার অধিকার। এমনিভাবে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কেড়ে নিতে চেয়েছিল মাকে– মা বলে ডাকার অধিকার। প্রবল প্রতিবাদ এবং প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার। মিছিলে, গানে এবং কবিতায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল রাজপথে। ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ আব্দুল লতিফের লেখা গানটি বায়ান্নর আগে রচিত হলেও ভাষা আন্দোলনে এর গুরুত্ব অনেক। ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি.
বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত গানটিতে বাংলা ভাষা আন্দোলনের আবহ তুলে ধরেন। অমর কথামালাসংবলিত গানটি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর প্রভাতফেরিতে গাওয়া হয়। গাফ্ফার চৌধুরীর এ গানটি ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে ছাপা হয়। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এ সংখ্যাটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রথম সংখ্যায় একুশের প্রবন্ধ, একুশের কবিতা, একুশের গল্প, একুশের নকশা, একুশের গান, একুশের ইতিহাস– শিরোনামে ৬টি বিভাগে মোট ২২ জন লেখকের লেখা ছাপা হয়। এ ছাড়া ছিল ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামে ৪ পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র প্রথম সংখ্যার পুরো বিবরণ এ রকম– সম্পাদকীয়: ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রবন্ধ: আলী আশরাফ– সকল ভাষার সমান মর্যাদা। একুশের কবিতা: শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আবদুল গণি হাজারী, ফজলে লোহানী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আনিস চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, জামালুদ্দিন, আতাউর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক ও হাসান হাফিজুর রহমান। একুশের গল্প: শওকত ওসমান– মৌন নয়, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ– হাসি, আনিসুজ্জামান– দৃষ্টি, সিরাজুল ইসলাম– পলিমাটি, আতোয়ার রহমান–অগ্নিবাক। একুশের নকশা: মুর্তজা বশীর– একটি বেওয়ারিশ ডায়েরির কয়েকটি পাতা, সালেহ আহমেদ– অমর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত স্বাক্ষর। একুশের গান: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও তোফাজ্জল হোসেন। একুশের ইতিহাস: কবিরউদ্দিন আহমদ।
১৯৫৩ সালে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামের সংকলনটি সম্পাদনার মধ্য দিয়ে হাসান হাফিজুর রহমান একুশের সংকলন প্রকাশের যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিলেন, দ্বিধাহীনভাবে বলা যেতে পারে, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিই’ আজ পর্যন্ত প্রকাশিত একুশের সংকলনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনটি দখল করে আছে।
ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরে থাকা ছাত্রের মাথার খুলি উড়ে যাওয়া দেখে যেমন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচনা করেছিলেন ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি...’, তেমনি কবি হাসান হাফিজুর রহমান লিখেছেন– ‘আর এবার আমরা হারিয়েছি এমন কয়েকজনকে যাঁরা কোনদিন মন থেকে মুছবে না,/কোনদিন কাউকে শান্ত হতে দিবে না।’ তিনি শুধু লেখেননি, একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের গুণী কবি, সাহিত্যিক এবং লেখকদের লেখায় সংকলন প্রকাশ করে আমাদের ভাষা আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছেন, একুশের মর্যাদাকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে। একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। বিশ্বের কোনো দেশই ভাষার জন্য আন্দোলন করে জীবন দেয়নি। একমাত্র বাঙালি জাতিই এমন গৌরবগাথা রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের অংশীদার। হাসান হাফিজুর রহমানের কবিতার লাইনের মতো বলতে চাই– ‘যারা কোন দিন মন থেকে মুছবে না’। এ দিবস এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্বের বিপন্নপ্রায় ভাষাভাষীর মাতৃভাষা রক্ষার দাবি নিয়ে দিবসটি আমাদের সচেতন হতে প্রেরণা জোগায়।
সহসভাপতি সুহৃদ সমাবেশ, ফরিদপুর
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ স ন হ ফ জ র রহম ন এক শ র গ আবদ ল গ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা ছাড়া কাজে সাফল্য আসে না’
রজার হ্যারপ। আমেরিকান সিইও এক্সপার্ট ও আন্তর্জাতিক এই বক্তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
অন্যের দিকে নজর না দিয়ে সবার আগে নিজের ছবি দেখুন আয়নায়। নিজেকে দেখে নিজের দুর্বলতা আগে খুঁজে বের করুন। মনে রাখবেন, নিজের ভালো দিকটা সবাই জানে। তাই ভালো দিক এড়িয়ে মন্দে যান। কারণ, মন্দ দিকটা খুঁজে বের করা কঠিন। এটি বের করার পর আপনার কাজের সঙ্গে এমন কাউকে জড়ান, যিনি শুধু আপনার ভালোটা দেখবেন না, আপনার মন্দ দিকটাও আপনার সামনে তুলে ধরবেন সুন্দর করে। শৈল্পিকভাবে!
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করুন
মন্দ বা খারাপটা বের করার পর এবার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে নিন। মানে আপনি কী করতে চাচ্ছেন, কেন করতে চাচ্ছেন? এই কাজ থেকে আপনার আদৌ কোনো লাভ হবে কিনা? হলে সেটির পরিমাণ কত? এর নেতিবাচকতা কী হতে পারে। ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রথমে ছক কেটে সাজিয়ে নিন।
রাখুন অটুট আস্থা
লক্ষ্য স্থিরের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি যে কাজটা করতে যাচ্ছেন সে কাজের প্রতি আপনার আস্থা অটুট রাখা। মানে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা। আপনি যদি আপনার কাজের প্রতি বিশ্বাসভাজন না হন তাহলে আপনার সহকর্মীরা কীভাবে রাখবেন? সুতরাং নিজের কাজের প্রতি নিজে সবার আগে বিশ্বাসী হোন এবং এ কাজটার মাধ্যমে যে সাফল্য আসবে তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এগিয়ে যান। সেই সঙ্গে আপনার কাজের প্রতি মমতা রাখুন, ভালোবাসা রাখুন, শ্রদ্ধা রাখুন। আপনার সহকর্মীরা তাহলে সে কাজে গুরুত্ব দেবে। আপনি হেলাফেলা করার অর্থ হচ্ছে আপনার সহকর্মীরা ধরে নেবেন এ কাজ ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। সুতরাং সাবধান!
ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা
ঝুঁকিহীন কোনো কাজ ভালো হয় না। ঝুঁকি নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থা আপনার থাকতে হবে। বুকে রাখতে হবে সাহস। সাহস নিয়ে আস্থার সঙ্গে এগোলে সাফল্য আপনার আসবেই। আর যা করছেন সেটি থেকে সাফল্য আসবে এমন ভাববেন না। যদি না আসে সফলতা তাহলে কী করবেন? সবকিছু গোছগাছ করে থেমে যাবেন? কখনও সেটি করবেন না। বরং বিকল্প একটি রাস্তা খোঁজে ঠিক করে রাখুন। যদি আশানুরূপ না হয় তাহলে যেন চটজলদি সেই বিকল্প রাস্তায় মুভ করতে পারেন। বিখ্যাত মারফির তত্ত্ব। কখনও ভুলে যাবেন না- ‘যদি কোনো কাজে কোনো ভুল ধরা পড়ে, তাহলে বিকল্প রাস্তা অনুসরণ করাই শ্রেয়।’
মাথা খাটান; জোর নয়
কাজ করবেন মাথা খাটিয়ে; জোর করে নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো– সবসময় আনন্দ এবং উপভোগের সঙ্গে কাজ করবেন। কখনও কাজকে বোঝা মনে করবেন না। তাহলে কাজ হয়ে পড়বে কঠিন থেকে কঠিনতর। একটা কথা ভুলে যাবেন না, কাজ করছেন নিজের স্বাচ্ছন্দ্য এবং আনন্দে থাকার জন্য। সুতরাং এমন কিছু কেন করবেন, যেটি করতে অনেক কষ্ট হবে।