ফেব্রুয়ারি মাসেই স্বাধীনতার বীজ বোনা হয়েছিল রক্তস্নাত চেতনার ভূমিতে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও জাতীয় আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল। এটি ছিল বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, স্বকীয়তা এবং মর্যাদাকে রক্ষা করার পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল। এই আন্দোলন বাঙালির মধ্যে একতার শক্তি এবং জাতীয় চেতনা জাগিয়ে তোলে, যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি রচনা করেছিল। 
মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ বাঙালি হৃদয়ে অনুরণিত হয়েছে সবসময়। এ ভাষার আড়ালে যে হারানোর বেদনা, তা প্রতিটি লেখকসত্তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করেছে। ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে সাহিত্যের একটি ব্যাপক পরিসর গড়ে উঠেছে। একুশের কাহিনি আবেগে অমোঘ, বিশ্বাসে অনন্য। 
আমাদের জীবনে একুশের অনির্বাণ চেতনা চিরজাগ্রত রাখতে একুশ সম্পর্কিত পাঠ ও গবেষণা চালু রাখা জরুরি। অমর একুশ নিয়ে অজস্র গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও সাহিত্য রচিত হয়েছে। আজ আমার দৃষ্টিনিবদ্ধ হয়েছে এম আর আখতার মুকুলের ‘একুশের দলিল’ বইটির দিকে। ভাষা আন্দোলনে লেখকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নিজ অভিজ্ঞতার বয়ান বইটিকে দালিলিক মর্যাদা দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক, তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অবদানকে তুলে ধরা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন যে কেবল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না বরং এটি জাতির সাংস্কৃতিক ও মৌলিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল, তা বইতে বেশ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি কীভাবে সারাবিশ্বে ভাষার অধিকারের সংগ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়। ভাষার ওপর আঘাত এলে শুধু ভাষাগত নয়, তা একটি জাতির অস্তিত্ব ও আত্মসম্মানকে চ্যালেঞ্জ করার সমান। ‘একুশের দলিল’ ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য এবং ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই সময়কার সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করেছে। প্রতিবাদের ভাষাও আমরা শিখি একুশ থেকে। একজন শিক্ষক হিসেবে তাই একুশের বহুল পাঠ ও এ সম্পর্কিত গবেষণার তাগিদ অনুভব করি সবসময়। একুশ বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকুক যুগ যুগ ধরে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এক শ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার কোনো বাহিনী নেই সব সময় অভিযান সম্ভব নয়’

রাউজানে অবৈধভাবে কৃষিজমির টপসয়েল (উপরিভাগ) ও পাহাড় কাটা, কৃষিজমি ভরাট বন্ধ করা যাচ্ছে না। উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অংছিং মারমা এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। অংছিং মারমা বলেন, ‘আমার তো কোনো সশস্ত্র বাহিনী নেই, তাই চাইলেও সবসময় অভিযান চালানো যায় না।’
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কদলপুর, হলদিয়া, ডাবুয়া, নোয়াজিষপুর, পশ্চিম গুজরা, পূর্ব গুজরা, নোয়াপাড়া ও রাউজান সদর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমি ও পাহাড় কাটা চলছে। সরকারি খাস খতিয়ানের টিলা কেটে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর-জলাশয়। ডাবুয়া ইউনিয়নের লাঠিছড়ি, পশ্চিম ডাবুয়া, কলমপতি ও কেয়াকদাইর এলাকায় কৃষিজমি সাবাড় বেশি হয়েছে। নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের মিলন মাস্টারের ঘাটা এলাকায় সর্তা খালের পাড় কেটে সেই মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমি ভরাটে। পশ্চিম গুজরা, পূর্ব গুজরা ও নোয়াপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অবাধে চলছে কৃষিজমি কাটা।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ি ঢল, হালদা নদী ও সর্তার খালের পানির তোড়ে প্রতিবছর বর্ষায় ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। কৃষিজমি কাটার ফলে জমি নিচু হয়ে যায়, বন্যার পানি আটকে থাকে।  আবার কৃষিজমি ভরাটের কারণে বর্ষায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি মীর মোহাম্মদ আসলাম বলেন, ‘গোটা উপজেলায় প্রতিযোগিতা করে কাটা হচ্ছে কৃষিজমি। ধ্বংস করা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতায় এসব থামানো যাচ্ছে না।’
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিজমি ভরাট করে অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস হয়। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। পাশাপাশি কৃষিজমি কমে কমলে খাদ্য উৎপাদনও কমে, যা আমাদের অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই কৃষিজমি কাটা ও ভরাটের আগে সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর এর প্রভাব মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি।’
নির্বিচারে কৃষিজমি ও পাহাড় কাটা প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অংছিং মারমা বলেন, ‘এসব বন্ধে সম্মিলিতভাবে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার একার পক্ষে এসব বন্ধ করা সম্ভব নয়। অভিযোগ পেলে অভিযান চালিয়ে অর্থদণ্ড করা হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সশস্ত্র কোনো বাহিনী নেই। এ কারণে সবসময় অভিযানে যাওয়া সম্ভব হয় না। পুলিশ, কৃষি অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করলে সম্মিলিত প্রয়াসে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। আমি বিচার করতে পারি, কিন্তু জড়িতদের ধরে এনে বিচার করা একজনের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আমার কোনো বাহিনী নেই সব সময় অভিযান সম্ভব নয়’