ভাষা, সংস্কৃতি, স্বকীয়তা এবং মর্যাদা রক্ষার লড়াই
Published: 3rd, February 2025 GMT
ফেব্রুয়ারি মাসেই স্বাধীনতার বীজ বোনা হয়েছিল রক্তস্নাত চেতনার ভূমিতে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও জাতীয় আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল। এটি ছিল বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, স্বকীয়তা এবং মর্যাদাকে রক্ষা করার পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল। এই আন্দোলন বাঙালির মধ্যে একতার শক্তি এবং জাতীয় চেতনা জাগিয়ে তোলে, যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি রচনা করেছিল।
মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ বাঙালি হৃদয়ে অনুরণিত হয়েছে সবসময়। এ ভাষার আড়ালে যে হারানোর বেদনা, তা প্রতিটি লেখকসত্তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করেছে। ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে সাহিত্যের একটি ব্যাপক পরিসর গড়ে উঠেছে। একুশের কাহিনি আবেগে অমোঘ, বিশ্বাসে অনন্য।
আমাদের জীবনে একুশের অনির্বাণ চেতনা চিরজাগ্রত রাখতে একুশ সম্পর্কিত পাঠ ও গবেষণা চালু রাখা জরুরি। অমর একুশ নিয়ে অজস্র গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও সাহিত্য রচিত হয়েছে। আজ আমার দৃষ্টিনিবদ্ধ হয়েছে এম আর আখতার মুকুলের ‘একুশের দলিল’ বইটির দিকে। ভাষা আন্দোলনে লেখকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নিজ অভিজ্ঞতার বয়ান বইটিকে দালিলিক মর্যাদা দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক, তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অবদানকে তুলে ধরা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন যে কেবল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না বরং এটি জাতির সাংস্কৃতিক ও মৌলিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল, তা বইতে বেশ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি কীভাবে সারাবিশ্বে ভাষার অধিকারের সংগ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়। ভাষার ওপর আঘাত এলে শুধু ভাষাগত নয়, তা একটি জাতির অস্তিত্ব ও আত্মসম্মানকে চ্যালেঞ্জ করার সমান। ‘একুশের দলিল’ ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য এবং ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই সময়কার সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করেছে। প্রতিবাদের ভাষাও আমরা শিখি একুশ থেকে। একজন শিক্ষক হিসেবে তাই একুশের বহুল পাঠ ও এ সম্পর্কিত গবেষণার তাগিদ অনুভব করি সবসময়। একুশ বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকুক যুগ যুগ ধরে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এক শ র
এছাড়াও পড়ুন:
আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগছে, বংশের প্রথম প্রদীপ
নতুন বছরের প্রথম সূর্যটি যখন পুবের আকাশে ফুটে উঠল, এর কিছুক্ষণ পরই ঠিক ভোর ৬টায় পটুয়াখালীর শাহীন-জোহরা দম্পতির ঘর আলোকিত করে এলো এক ফুটফুটে অতিথি। এ দম্পতির কোলজুড়ে প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়ায় বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানাসহ পুরো পরিবার আনন্দিত, উদ্বেলিত। নতুন অতিথিকে নিয়ে নানান স্বপ্ন বুনছেন তারা।
শাহীন খাঁ এইচএসসি ও জোহরা বেগম এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও তাদের সচেতনতার কোনো ঘাটতি নেই। তাদের সংসারে অর্থের অভাব থাকলেও অভাব ছিল না সুখের। এক বছর আট মাস আগে বিয়ে হয় তাদের। শাহীন নিজ এলাকায় ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করে যা পান তাতেই সন্তুষ্ট তারা। প্রথম সন্তানটিকে সুস্থ ও পুষ্ট রাখতে এবং সন্তানের মাকে শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে যা যা করণীয় তার সবটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন শাহীন। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান ধারণের পর থেকে শত কষ্টের মাঝেও সংসারের অভাব বুঝতে দেননি স্ত্রীকে। একদিকে স্ত্রী গর্ভবতী, অন্যদিকে বছরখানেক ধরে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছেন। পুরো সংসারের বোঝা এসে পড়ে শাহীনের মাথার ওপর। দিন-রাত পরিশ্রম করে সংসারের চাকা সচল রাখেন। এরপর বছরের প্রথম দিনের প্রথম প্রহরেই তাদের অভাবের আঁধারে জ্বলে উঠলো আলোর প্রদীপ।
পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে ৪৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এবং বাউফল উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে সূর্য্যমনি ইউনিয়নের দক্ষিণ সূর্য্যমনি এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন খাঁ ও গৃহিণী কোহিনুর বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শাহীন সবার বড়। এইচএসসি পাস করার পর শাহীনের আর লেখাপড়া হয়নি। সংসারের হাল ধরতে এলাকায় শুরু করেন ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ। এক বছর আট মাস আগে ২০২৩ সালের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একই উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদার ও মমতাজ বেগমের মেয়ে জোহরার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান ধারণের পর শাহীন-জোহরা দম্পতির স্বপ্ন ছিল একটি সুস্থ ও সুন্দর সন্তান যেন হয় তাদের। হোক ছেলে কিংবা মেয়ে। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ছিল না কোনো মাথাব্যথা। স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় তারা মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের পরপরই ভোর ৬টায় এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক প্রসূতির পুত্র সন্তান হয়েছে। এটি ছিল স্বাভাবিক প্রসব। শিশুটির ওজন হয়েছিল ৩ দশমিক ২ কেজি। মা ও সন্তান দু’জনই সুস্থ রয়েছে। সন্তান প্রসবের ঘণ্টাখানেক পরই তারা বাড়ি চলে যান। রোববার রাত ১২টার দিকে এ প্রসূতিকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। বছরের প্রথম দিন ভোরে সন্তান জন্ম দেওয়ায় হাসপাতাল থেকে প্রসূতিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
নতুন অতিথির মা জোহরা বেগম বলেন, ‘এ সময়টায় আমার দিকে তাঁর (স্বামী) সবসময় খেয়াল ছিল। সন্তান ও আমি দু’জনে যাতে সুস্থ থাকতে পারি সবসময় সে দিকে নজর রেখেছেন উনি। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্তান প্রসবের নির্ধারিত তারিখ ছিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন। ওইদিন রাত ১২টার দিকে প্রসব-যন্ত্রণা শুরু হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যাই এবং ভোর ৬টায় সন্তান প্রসব হয়। ঘণ্টাখানেক পর আবার বাড়ি চলে আসি। কোনো সমস্যা হয়নি। ডাক্তার-নার্স সবাই আন্তরিক ছিলেন, যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।’
নবজাতকের বাবা শাহীন খাঁ বলেন, ‘নতুন বছরের প্রথম দিনের ভোরে আমি বাবা হতে পেরে আনন্দিত এবং গর্বিত। প্রত্যেক বাবা-মা’রই তাঁর সন্তানকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকে, স্বপ্ন থাকে। আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। আমাদেরও এ সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে, প্রত্যাশা আছে। আমি চাই, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের এ ছোট্ট সন্তানকে সুস্থ রাখুক, ভালো রাখুক। ভবিষ্যতে সে যেন ভালো মানুষ হয়, সুশিক্ষিত এবং দেশের সুনাগরিক হতে পারে’।
দাদী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগছে। আমরা সবাই খুশি ও আনন্দিত। বছরের প্রথম দিনটিতে খুব ভোরে আমার বংশের প্রথম প্রদীপ আসায় আমরা সবাই মহাখুশি। নাতি ও বউ মা ভালো আছে ও সুস্থ আছে। অনেক অনেক শুকুর আল্লাহ পাকের কাছে। আপনারা আমার নাতির জন্য দোয়া করবেন।’
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, নতুন বছরের ভোরের সূর্যোদয়ের পরপরই এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক প্রসূতি সন্তান প্রসব করেছেন। এটি সত্যিই তাদের জন্য আনন্দের ও গর্বের খবর। তারা শিশুর মাকে অভিনন্দন ও বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের কোনো উপহার দিতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে কি, আমি বুঝে উঠতে পারিনি বছরের এমন একটি দিনে আমার প্রতিষ্ঠানে সন্তান জন্ম হলে কিছু উপহার দিতে হয়।’