বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি মুহূর্তকে মানুষের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত করে গেছেন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল পাঞ্জেরি হুমায়ুন আজাদ; যাঁর প্রতিটি সাহিত্য হচ্ছে আলোর ভুবন, প্রতিটি বই নীলিমার উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে আমাদের সাহিত্যের মানসজগৎকে আলোকিত করে যাচ্ছে প্রভাতের সূর্যের মতো। প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত অভিপ্রায়, সমাজ ও সাহিত্য অনুরাগীদের আলোর পথে এগিয়ে নিয়েছেন। একই সঙ্গে অন্ধকারকে বিদূরিত করেছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে। মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন তাঁর লেখনীশক্তির দ্বারা। বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের যে পথপরিক্রমা, তার প্রধান অংশের সংক্ষিপ্ত রূপ উপস্থাপন করা হয়েছে ‘লাল নীল দীপাবলি’ বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী গ্রন্থে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হুমায়ুন আজাদ রচিত শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বলা হয় ‘লাল নীল দীপাবলি’কে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সঠিকভাবে অনুশীলনের জন্য এটি অনন্য। স্থান, কাল ও ক্ষেত্রবিশেষে ভাষার বিবর্তন ঘটে মানুষের কণ্ঠে। এ ভাষাকে জীবন্তরূপে শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সাহিত্যিকরা। 
১৯৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তাঁর ‘লাল নীল দীপাবলি’। প্রাচীন যুগের চর্যাপদকে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রদীপ হিসেবে। অন্ধকার যুগের দেড়শ বছরের সাহিত্য, মধ্য যুগের মঙ্গল কাব্যকে বিশেষায়িত করা হয়েছে ‘প্রদীপ জ্বললো আবার’ শিরোনামে। এখানে বর্ণনা করা হয়েছে মনসামঙ্গলের নীল দুঃখ, চণ্ডীমঙ্গলের সোনালি গল্প, কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী এবং রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের সাহিত্য। বৈষ্ণব পদাবলিকে উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম আলো হিসেবে; বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, চৈতন্য ও বৈষ্ণব জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সাহিত্যিকের অনুবাদশিল্প। মুসলিম কবিদের সাহিত্যকে উপস্থাপন করেছেন বাংলা সাহিত্যের ভিন্ন প্রদীপ হিসেবে। এখানে মহাকবি আলাওলের সাহিত্য স্থান পেয়েছে। লোকসাহিত্যকে বুকের বাঁশরি, তারপর দ্বিতীয় অন্ধকার যুগ শুরু। এ যুগের পরবর্তী সাহিত্যকর্মকে বলা হয়েছে অভিনব আলোর ঝলক হিসেবে। গদ্য সাহিত্যকে বাংলা সাহিত্যের নতুন সম্রাট হিসেবে ভূষিত করেছেন। কবিতাকে উল্লেখ করেছেন অন্তর হতে আহরি বচন। উপন্যাসকে বলেছেন মানুষের মহাকাব্য। নাটককে জীবনের দ্বন্দ্ব হিসেবে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মকে সংজ্ঞায়িত করেছেন প্রতিদিনের সূর্য হিসেবে। 
আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ সাহিত্যকে প্রস্ফুটিত করেছেন। ‘লাল নীল দীপাবলি’ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শুধু একটি ইতিহাস গ্রন্থ নয়; বরং এটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিখর থেকে শিকড় পর্যন্ত হাজারো আলোকবর্তিকাকে মহাকাব্যিকভাবে এ গ্রন্থে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বইটিতে বিশেষ করে পাঠক হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে কিশোর-কিশোরী তরুণ-তরুণীদের মানসজগৎ, যারা কৈশোর পেরিয়ে ঢুকেছে এক বিস্ময়কর আলোতে, যাদের সৌরলোক ভরে গেছে সাহিত্যের সৌরভে, নবীন থেকে প্রবীণ সবার জন্য সংক্ষিপ্তভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান গ্রন্থ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আগামী বহু বছর পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য অনুরাগীদের মনে সাহিত্যের বিভা উদ্ভাসিত করবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের পথপরিক্রমা

বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি মুহূর্তকে মানুষের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত করে গেছেন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল পাঞ্জেরি হুমায়ুন আজাদ; যাঁর প্রতিটি সাহিত্য হচ্ছে আলোর ভুবন, প্রতিটি বই নীলিমার উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে আমাদের সাহিত্যের মানসজগৎকে আলোকিত করে যাচ্ছে প্রভাতের সূর্যের মতো। প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত অভিপ্রায়, সমাজ ও সাহিত্য অনুরাগীদের আলোর পথে এগিয়ে নিয়েছেন। একই সঙ্গে অন্ধকারকে বিদূরিত করেছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে। মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন তাঁর লেখনীশক্তির দ্বারা। বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের যে পথপরিক্রমা, তার প্রধান অংশের সংক্ষিপ্ত রূপ উপস্থাপন করা হয়েছে ‘লাল নীল দীপাবলি’ বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী গ্রন্থে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হুমায়ুন আজাদ রচিত শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বলা হয় ‘লাল নীল দীপাবলি’কে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সঠিকভাবে অনুশীলনের জন্য এটি অনন্য। স্থান, কাল ও ক্ষেত্রবিশেষে ভাষার বিবর্তন ঘটে মানুষের কণ্ঠে। এ ভাষাকে জীবন্তরূপে শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সাহিত্যিকরা। 
১৯৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তাঁর ‘লাল নীল দীপাবলি’। প্রাচীন যুগের চর্যাপদকে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রদীপ হিসেবে। অন্ধকার যুগের দেড়শ বছরের সাহিত্য, মধ্য যুগের মঙ্গল কাব্যকে বিশেষায়িত করা হয়েছে ‘প্রদীপ জ্বললো আবার’ শিরোনামে। এখানে বর্ণনা করা হয়েছে মনসামঙ্গলের নীল দুঃখ, চণ্ডীমঙ্গলের সোনালি গল্প, কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী এবং রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের সাহিত্য। বৈষ্ণব পদাবলিকে উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম আলো হিসেবে; বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, চৈতন্য ও বৈষ্ণব জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সাহিত্যিকের অনুবাদশিল্প। মুসলিম কবিদের সাহিত্যকে উপস্থাপন করেছেন বাংলা সাহিত্যের ভিন্ন প্রদীপ হিসেবে। এখানে মহাকবি আলাওলের সাহিত্য স্থান পেয়েছে। লোকসাহিত্যকে বুকের বাঁশরি, তারপর দ্বিতীয় অন্ধকার যুগ শুরু। এ যুগের পরবর্তী সাহিত্যকর্মকে বলা হয়েছে অভিনব আলোর ঝলক হিসেবে। গদ্য সাহিত্যকে বাংলা সাহিত্যের নতুন সম্রাট হিসেবে ভূষিত করেছেন। কবিতাকে উল্লেখ করেছেন অন্তর হতে আহরি বচন। উপন্যাসকে বলেছেন মানুষের মহাকাব্য। নাটককে জীবনের দ্বন্দ্ব হিসেবে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মকে সংজ্ঞায়িত করেছেন প্রতিদিনের সূর্য হিসেবে। 
আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ সাহিত্যকে প্রস্ফুটিত করেছেন। ‘লাল নীল দীপাবলি’ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শুধু একটি ইতিহাস গ্রন্থ নয়; বরং এটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিখর থেকে শিকড় পর্যন্ত হাজারো আলোকবর্তিকাকে মহাকাব্যিকভাবে এ গ্রন্থে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বইটিতে বিশেষ করে পাঠক হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে কিশোর-কিশোরী তরুণ-তরুণীদের মানসজগৎ, যারা কৈশোর পেরিয়ে ঢুকেছে এক বিস্ময়কর আলোতে, যাদের সৌরলোক ভরে গেছে সাহিত্যের সৌরভে, নবীন থেকে প্রবীণ সবার জন্য সংক্ষিপ্তভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান গ্রন্থ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আগামী বহু বছর পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য অনুরাগীদের মনে সাহিত্যের বিভা উদ্ভাসিত করবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ