Samakal:
2025-02-05@08:51:24 GMT

স্বকল্প ও বিকল্প ভাবুন

Published: 3rd, February 2025 GMT

স্বকল্প ও বিকল্প ভাবুন

বিদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত-সংক্রান্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়িতে শুরু করিয়াছে। ইতোমধ্যে এই দেশে মার্কিন অর্থায়নে চলমান বহু প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত হইয়া গিয়াছে। সোমবার প্রকাশিত সমকালের এক সংবাদ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) রোহিঙ্গা সহায়তা ব্যতীত বাংলাদেশের অবশিষ্ট সকল কার্যক্রম আপাতত তিন মাসের জন্য গুটাইয়া লইয়াছে। কর্মসূচির ব্যাপ্তি ও বিপুল কর্মীসংখ্যার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি ও অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থারূপে পরিচিত ব্র্যাক বাংলাদেশে মার্কিন অর্থায়নের ছয়টি প্রকল্প স্থগিত করিয়াছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি সহস্রাধিক কর্মী ছাঁটাই করিয়াছে, যেই সংস্থাটি স্বাস্থ্য খাতে বৃহৎ গবেষণা চালাইতেছে; সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত বহু হাসপাতাল পরিচালনা করিতেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এইচআইভি, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা রোগের জীবন রক্ষাকারী ঔষধের সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়াছে। বন্ধ হইয়া গিয়াছে পুষ্টি-সংক্রান্ত দুইটি প্রকল্প। ফলে এইচআইভি-এইডস, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, অপুষ্টিজনিত বিবিধ সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি বৃদ্ধি পাইতে পারে। নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ পরিচালক বলিয়াছেন, বর্তমানে দেশে আনুমানিক দেড় লক্ষ শিশু খর্বাকৃতির হইয়া থাকে। মার্কিন সহায়তা বন্ধ হইলে সংখ্যাটি আরও বৃদ্ধি পাইতে পারে। একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে টিকাদান, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইনের ন্যায় জাতীয় কর্মসূচি।

বিগত কয়েক বৎসরে মার্কিন সহায়তাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০-এ ছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে মার্কিন সহায়তার অধিকাংশ আসে ইউএসএআইডির মাধ্যমে এবং প্রধানত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে দিয়া কৃষি,

স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, পরিবেশ, জ্বালানি ও মানবিক খাতে বিবিধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এই সকল প্রকল্প বন্ধ হইলে শুধু সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরাই বিপদে পড়িবেন না; কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মহারা হইবেন। ফলে বিবিধ সামাজিক, এমনকি রাজনৈতিক সমস্যাও সৃষ্টি হইতে পারে।

মার্কিন সহায়তা বন্ধের ঘোষণা এমন সময়ে আসিয়াছে যখন বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিবিধ চাপ মোকাবিলা করিতে হইতেছে। বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তাসহ সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন খাতে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হইবার কারণে বিপুলসংখ্যক নিম্নআয়ের মানষের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিশাল জনগোষ্ঠী। যদিও বলা হইয়াছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির সহিত সহায়তার আওতাধীন প্রকল্পগুলির সামঞ্জস্য পর্যালোচনার স্বার্থে আপাতত তিন মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ আরোপ করা  হইয়াছে; ইতোমধ্যে ঘোষিত জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশসহ বিভিন্ন মানবিক খাত-সংশ্লিষ্ট ট্রাম্প প্রশাসনের বিবিধ নীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে ইতিবাচক কোনো ভাবনার অবকাশ কম বলিয়াই অনুমিত। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড.

মোস্তাফিজুর রহমান যথার্থই বলিয়াছেন, সহায়তা বন্ধের বিষয়কে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির উপর চাপ সৃষ্টিরও কৌশলরূপে দেখা যাইতে পারে। তাঁহার মতে, তিন মাস পর মার্কিন সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে কার্যক্রম শুরু করিলেও কার্যে কাঙ্ক্ষিত গতি আনয়ন সম্ভবপর নাও হইতে পারে। ফলে আলোচ্য মার্কিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশকে বহুবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে।
একদিকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাইতে হইবে যাহাতে পর্যালোচনাগুলি ইতিবাচক হয়। উহা যদ্রূপ ঢাকায় করিতে হইবে, তদ্রূপ ওয়াশিংটনেও। ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝাইতে হইবে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সহযোগী দেশ। তদুপরি বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিতের কারণে স্বাস্থ্য খাতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ অবস্থা সৃষ্টি হইতেছে। অন্যদিকে চলমান প্রকল্পসমূহকে গুরুত্বের ভিত্তিতে অব্যাহত রাখিতে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নেরও সিদ্ধান্ত লইতে হইবে। আশার বিষয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলিয়াছেন, মার্কিন অর্থায়ন বন্ধ হইবার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার স্বাস্থ্য খাতে নূতন কর্মকৌশল নির্ধারণ কার্য চলমান। অন্যান্য জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট খাতেও একই উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউএসএআইডি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন: ইলন মাস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউএসএআইডি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। 

সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনলাইন প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে গতকাল গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট বন্ধ দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সংস্থাটিরকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপরেই মাস্ক এমন মন্তব্য করলেন।

ইলন মাস্ক বলেছেন, মার্কিন জনগণের করের অর্থ দিয়ে জৈব অস্ত্র গবেষণায় অর্থায়ন করেছে ইউএসএআইডি। সেইসঙ্গে সংস্থাটি প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য অর্থ ব্যয় করেছে। তাই সময় হয়েছে সংস্থাটির মরে যাওয়ার। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনটি পোস্ট শেয়ার করেছেন মাস্ক। সেখানে তিনি বলেছেন, আপনারা জানেন কী, ইউএসএআইডি আপনাদের করের অর্থে জৈব অস্ত্র গবেষণায় অর্থায়ন করেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ এর মতো জীবাণুও অন্তর্ভুক্ত, যার কারণে কয়েক কোটি মানুষ মারা গেছেন। 

এ ছাড়া মাইক বেঞ্জের একটি টুইট শেয়ার করে ইলন মাস্ক বলেন, প্রোপাগান্ডা প্রচারের জন্য ইউএসএআইডি গণমাধ্যমগুলোকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে। এরপর আরেকটি টুইটে তিনি ঘোষণা করেন, ইউএসএআইডির মৃত্যু হওয়াই উচিত।

এর আগে গত শনিবার ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে সেখানে ‘সার্ভার আইপি ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি’ বলে একটি বার্তা ভেসে উঠছে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দেয়। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কয়েক বিলিয়ন ডলারের এ ধরনের বৈদেশিক সহায়তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং করদাতাদের অর্থের অপচয় কি না, তা নিশ্চিত হতে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পের সরকারে ইলন মাস্কের এত ক্ষমতা কি বিপদের
  • ইউএসএআইডির অর্থায়ন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি
  • ইউএসএআইডি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন: ইলন মাস্ক
  • ট্রাম্পের আদেশের বড় ধাক্কা বাংলাদেশে ঝুঁকিতে লাখো মানুষ
  • ট্রাম্পের মানবিক সহায়তা স্থগিত: বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসহ নানা খাতে বিপর্যয়
  • ট্রাম্পের বিদেশি সহায়তা বন্ধের পর ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট উধাও