Samakal:
2025-03-10@02:31:28 GMT

গবাদি পশু ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট

Published: 3rd, February 2025 GMT

গবাদি পশু ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট

বিশ্বে যেসব দেশ চরম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ সেখানে অষ্টম। জলবায়ু ঝুঁকির সুস্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে দেশে ‘সামার হিট ওয়েভ’, ‘ফ্লাশ ফ্লাড ও শহরাঞ্চলে বন্যা’, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড় ও ঘন ঘন বজ্রপাত, ভূমিধস ও দীর্ঘ সময় খরা পরিলক্ষিত। জলবায়ুর এসব পরিবর্তনে প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ই দায়ী। তবে মানুষের ভূমিকা তুলনামূলক বেশি। মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ একদিকে যেমন প্রাইম ভূমিকা পালন করছে, ঠিক তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ইনফ্লুয়েন্সার যথাক্রমে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নামে ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস। এক কেজি মাংস বা দুধ উৎপাদন করতে একটি প্রাণী যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গমন করে তাকে কার্বন ফুটপ্রিন্ট বলে। গবাদি পশু যেমন– গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল যখন ঘাস খায়, তখন তাদের অন্ত্রের গাজন প্রক্রিয়ায় বাই-প্রডাক্ট হিসেবে সরাসরি পশুর মুখ ও এনাস দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়, যা ‘অ্যান্টারিক মিথেন’ নামে অধিক পরিচিত। বায়ুমণ্ডলে নির্গত মিথেন গ্যাস ২৫ বছর পর্যন্ত অ্যাক্টিভ থাকে এবং এক কেজি মিথেন গ্যাস প্রায় ৮৪ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। বায়ুমণ্ডলে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস ২৯৮ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং এক কেজি নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস প্রায় ২৯৮ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। শক্তির দিক দিয়ে নাইট্রাস অক্সাইড বেশি হলেও তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কারণ এ গ্যাসের উৎস হলো গোবর। কিন্তু মিথেন গ্যাস সরাসরি বায়ুমণ্ডলে অ্যাড হওয়ায় তা জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাভি থেকে এক লিটার দুধ উৎপাদনের ফলে প্রায় ২ ড্রাম সমপরিমাণ পিউর মিথেন গ্যাস বের হয়।
গবাদি পশুকে সবুজ ঘাস বা শুকনা খড় জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ালে তা বেশিক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে বিধায় মিথেন গ্যাস বেশি উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে যেসব খাবার পেটে কম সময় থাকে, সেগুলো খাওয়ালে এ গ্যাস হয় না। গবাদি পশুর প্রকারভেদে মহিষ বেশি পরিমাণে ওই গ্যাস উৎপন্ন করে। তার পরের স্থানে আছে গরু, ছাগল ও ভেড়া। তবে পোলট্রি ও শূকরের অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদনে ভূমিকা নেই। লোকাল বা দেশীয় গরু তাদের ক্রস বা পিউর জাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। 

মোটা দাগে তিনটি উপায়ে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন কমানো সম্ভব। প্রথমত, খাবারের ধরন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া ভিন্নতর করা। যেহেতু পশুকে সবুজ ঘাস বা খড় খাওয়ালে পেটে এসিড বেড়ে যায়, তাই হোল ক্রপ ও কনসেনট্রেড খাওয়ালে পেটের পরিবেশ অ্যালকালাইন হয়। এতে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন থাকে শূন্যের কোঠায়। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার দিলে পেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্রি হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা পেটের কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস তৈরি করে। তাই কিছু গাছপাতা যেমন– শজনে, তেঁতুল ও কাঁঠাল গবাদি পশুকে খাওয়ালে অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস তৈরি হয় না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবুজ ঘাস, খড়, গাছপাতা এবং কিছু পরিমাণ কনসেনট্রেড মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ করলে মিথেনের সমস্যা দূর হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পেটের ভেতরকার ফ্রি হাইড্রোজেন ট্র্যাপ করার জন্য নাইট্রেটস, সালফেটস, অর্গানিক এসিড, আইয়োনফোরস জাতীয় বিভিন্ন উপাদান খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পরীক্ষামূলক অস্ট্রেলিয়ায় বিশেষ টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে, যাতে এটি প্রয়োগে মিথেন গ্যাস কমানো যায়। ইদানীং সামুদ্রিক শৈবাল থেকে বিশেষ ধরনের পাউডার তৈরি করা হয়েছে, যা খাওয়ালে ৮০ শতাংশ মিথেন হ্রাস পায়। সব শেষে গবাদি পশুর জাত নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে। 

ড.

মো. আবুল কালাম আজাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ম ণ জলব য় উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

খাদের কিনার থেকে যেভাবে শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাল সিটি ব্যাংক

আমার আগের প্রজন্মের সময় ব্যবসা নয়, মানুষ দেখে ঋণ দেওয়া হতো। ফলে অনেক ঋণ খারাপ হয়ে পড়ে। ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত তালিকায় পড়ে যায়। সেখান থেকে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দিতে একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি দায়িত্ব নিই– আজিজ আল কায়সার, চেয়ারম্যান, সিটি ব্যাংক

ব্যাংকটির শুরুর উদ্যোক্তা ছিলেন ১২ জন তরুণ ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ার গ্রুপ, ফিনিক্স গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, আজিজ গ্রুপ, হোসাইন গ্রুপ ও নূরানী অ্যাগ্রোর উদ্যোক্তারা। ব্যাংকটির প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফিনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন, এম এ হাশেম, ইব্রাহিম মিয়া, আবুল বারিক চৌধুরী ও দীন মোহাম্মদ। ১৯৯৩-৯৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছিল লোকসানি ব্যাংক। পরিস্থিতি এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধনেও ঘাটতি দেখা দেয়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে উদ্যোক্তারা কোনোভাবেই ব্যাংকটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বের করে আনতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ব্যাংকটির সব ধরনের কেনাকাটা, ঋণ প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সরকারি-বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের এনে ব্যাংকের কিছুটা উন্নতি হলেও পুরো সংকট থেকে বের হতে পারেনি। ২০০৫ সালের নভেম্বরে সমস্যাগ্রস্ত তালিকা থেকে বের হলেও ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ তালিকায় ছিল ব্যাংকটি। ২০০৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন আজিজ আল কায়সার। তিনি দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞদের ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড় করানোর দায়িত্ব দেন। তাঁদের নানা উদ্যোগের ফলে ব্যাংকটি সংকট কাটিয়ে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘সিটি ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা থেকে বের হলেও আমার অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক বহাল রাখে। আমি চেয়েছিলাম ব্যাংকটি উন্নতি করতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় তদারকি থাকুক। এতে অন্যরা সতর্ক থাকবে। যার সুফল আমরা পেয়েছি।’

গেম চেঞ্জার

সিটি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার আগে থেকে পরিচালনা পর্ষদে থাকলেও ২০০৭ সালের জুনে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পরের মাসেই ইস্টার্ণ ব্যাংককে সফল রূপান্তরে নেতৃত্ব দেওয়া কাজী মাহমুদ সাত্তারকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির এমডি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তখন যোগ দেন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরও ৪ ব্যাংকার। এর মধ্যে তখন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে যোগ দেন সোহেল আর কে হুসেইন, খুচরা ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন মাসরুর আরেফিন, ট্রেজারি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ ও করপোরেট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন ইউসুফ সাঈদ। কাজী মাহমুদ সাত্তারের পর সোহেল আর কে হুসেইন ছয় বছর সিটি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংক এশিয়ার এমডি। মাসরুর আরেফিন ২০১৯ সাল থেকে সিটি ব্যাংকের এমডি ও শেখ মোহাম্মদ মারুফ গত বছর ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ইউসুফ সাঈদ সিটি ব্যাংকে যোগ দেওয়ার এক বছর পর কাতার ন্যাশনাল ব্যাংকে চলে যান। এখন তিনি কাতারের রিচমন্ড কনসালট্যান্ট অ্যান্ড সার্ভিসেসের কো-এমডি। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দেশি-বিদেশি ব্যাংকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তরুণ মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করে ব্যাংকটি।

কাজী মাহমুদ সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন সিটি ব্যাংকে যোগ দিই, তখন ব্যাংকটি সবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এসেছে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭টি সূচকের উন্নতির শর্ত বেঁধে দেয়। আমার ছয় বছরে এসব সূচকের লক্ষ্য পূরণ করে অনেক ওপরে উঠে যায়। এসব অর্জনের প্রধান কারণ ছিল সুশাসন নিশ্চিত করে সঠিক পথে এগোনো। পেশাদারত্বের সঙ্গে ঋণ বিতরণ ও পরিচালনা করা। ওই সময়ে ব্যাংকের লোগো পরিবর্তন করা হয়, অ্যামেক্সের সঙ্গে যুক্ত হয় সিটি ব্যাংক। কার্ড, ভোক্তা ঋণ—সব মিলিয়ে ব্যাংকটি আমার সময়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায়। পরবর্তী নেতৃত্ব ব্যাংকটিকে আরও শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।’

কাজী মাহমুদ সাত্তার

সম্পর্কিত নিবন্ধ