বাসে সিট ধরা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবি করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অভিযুক্ত আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া ইসলাম, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না ও আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম।

অভিযোগের বিষয়ে জাকারিয়া বলেন, “ঘটনাস্থলে আমি পরিস্থিতি শান্ত করতে যাইনি। আগে থেকেই সেখানে ছিলাম। যখন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি বা মব সৃষ্টির পরিবেশ হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য চেষ্টা করি। কাউকে উস্কানি দেওয়া বা আঘাত করার সঙ্গে আমার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।”

তিনি বলেন, “সেখানে আমি ছাড়াও আরবি, পরিসংখ্যান ও লোক প্রশাসন বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট করে আমার নাম উল্লেখ কেন করেছে, তা আমারও প্রশ্ন। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করেছে। তবে এখানে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল বলে আমি মনে করি না।”

তিনি আরও বলেন, “দুই বিভাগের মধ্যে মারামারি শুরু হলে প্রক্টর, শিক্ষক ও সমন্বয়করা তা সামলানোর চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করি, যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।”

অভিযুক্ত হাসানুল বান্না বলেন, “শুরু থেকে আমি সেখানে ছিলাম না। বাসের ঘটনা যখন শুনেছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছি এটা আহামরি কোনো বিষয় নয়। কিন্তু রাত ৯টা বেজে যাওয়ার পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমি সেখানে গিয়ে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “অনেকের প্রশ্ন আল ফিকহের না হয়েও কেন আমরা সেখানে ছিলাম? আমরা মনে করি, এটা একটা অবান্তর প্রশ্ন। কেননা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ক্যাম্পাসের যেকোন জায়গায় তার থাকার অধিকার আছে। যদি ঘটনাটি বিভাগে হত আর তখন আমরা উপস্থিত থাকতাম, তাহলে হয়তো এমন প্রশ্ন আসতে পারত।”

অভিযুক্ত আমিরুল ইসলাম বলেন, “প্রথমত আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমিনুর নামে যার বিরূদ্ধে অভিযোগ এনেছে, সেটা আমি নই। আমি আমিরুল ইসলাম। তবে তারা জিয়া হলে থাকার বিষয় উল্লেখ করেছে। মূলত কয়েকজন সাংবাদিক আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আমি জিয়া হলে থাকি কিনা?’ তা স্পষ্ট করতে আমি সংবাদ সম্মেলনে এসেছি। আর ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অনেক শিক্ষার্থীর মতো আমিও সেখানে ছিলাম।”

তিনি দাবি করেন, “আমাদের উপর সরাসরি হামলার যে অভিযোগ এসেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমরা এসব অভিযোগ ঘৃণাভরে  প্রত্যাখ্যান করছি। এর কোন প্রমাণ থাকলে উপস্থাপন করতে হবে। আর দুই বিভাগের সংঘর্ষে প্রক্টর, শিক্ষকসহ যেসব শিক্ষার্থীর উপর হামলা হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

আরো পড়ুন: তুচ্ছ ঘটনায় ইবিতে সংঘর্ষ: বিচার দাবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের

গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে আইন ও আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ১৩ শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শিক্ষক ও ২ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হন।

এ নিয়ে গতকাল রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করে সংঘর্ষের ঘটনার তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচারসহ চারদফা দাবি জানান আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা অভিযোগ করে বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত ও পরিকল্পিত  হামলার সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা ছিল জাকারিয়া (বঙ্গবন্ধু হল), আমিনুর (জিয়া হল), হাসানুল বান্না (লালন হল)। এদের কেউ আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থী নন। তবে সরাসরি হামলায় জড়িতের বিষয়ে তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই বলে জানান তারা।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন ব ভ গ র শ ক ষ র থ পর স থ ত স ঘর ষ র ঘটন ইসল ম উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ডিলারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ব্যবসা গুটিয়েছেন ৫১ বিক্রেতা

সাদুল্লাপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলন আসার আগ পর্যন্ত জমিতে তিনবার ইউরিয়া সার দিতে হবে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্বে সার পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এ কৃষককে। 

জাহিদুল ইসলাম জানান, ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে ইউরিয়া সার কিনতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয় হয়। 
জাহিদুল ইসলামের মতো সার কিনতে অনেক কৃষককে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এলাকাভিত্তিক খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য তারা ডিলারদের অসহযোগিতার কথা বলছেন। 

খুচরা ইউরিয়া সার বিক্রেতা বড় জামালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম মিঠু ও নলডাঙ্গার দশলিয়া বাজারের বিপুল হোসেন জানান, এ ব্যবসায় প্রাপ্য সম্মানটুকু নেই। তাদের প্রতিপক্ষ মনে করেন বিসিআইসি ডিলাররা। তারা কমিশন দিতে টালবাহানা করেন। নানা ছুতোয় সার দিতে দেরি করেন। নানা ঝক্কি পোহানোর পর সার নিয়ে নির্ধারিত পয়েন্টে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ দিতে হয়। এতে লাভ থাকে না। 

অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভাতগ্রাম ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মণ্ডলসহ কয়েকজন ডিলার। তাদের ভাষ্য, খুচরা বিক্রেতারা বাকিতে সার নেওয়ার আশায় থাকেন। বিনা পয়সায় সার নিয়ে মজুত করে রাখেন। সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। তাদের এ সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে ব্যবসায় টিকতে পারেননি। এসব কারণে আমরাও কৃষকের কাছে সরাসরি সার বিক্রি করতে আগ্রহী। 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ হয়েছে। এসব জমির জন্য চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৫০০ টন। উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ১৮ জন ডিলার আছে। তারা এগারো ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে সার বিক্রি করেন। বরাদ্দ সারের ৭৫ ভাগ থাকবে ডিলারের কাছে। ২৫ ভাগ পাবেন খুচরা বিক্রেতারা। কৃষকদের সুবিধার জন্য এখানে ৯৯ জন খুচরা সার বিক্রেতা (সাব ডিলার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা কৃষি বিভাগের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জামানত রেখে ডিলারদের কাছ থেকে কমিশনে ইউরিয়া নেন। সেই সার নির্ধারিত পয়েন্টে নিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। ডিলারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা ছেড়ে জামানত ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মাত্র ৪৮ জন খুচরা বিক্রেতা আছেন। তারাও ব্যবসা ছেড়ে জামানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছেন। এসব কারণে কৃষকের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। 

কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সার বিক্রির বিধান রাখা হয়েছে। এখানে ডিলারের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্ব প্রকট। তাদের ঝামেলায় কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারের জন্য দূরে যেতে হচ্ছে কৃষকদের।

জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ইউনিয়নটি বড় এলাকাজুড়ে। অথচ এখানে সার বিক্রির জন্য ডিলার মাত্র একজন। তিনি দোকান খুলে বসেন নির্ধারিত একটি বাজারে। দূরের গ্রামের অনেক কৃষক ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সার নিতে আসেন। এখানে সার বিক্রির জন্য খুচরা বিক্রেতা বাড়ানো প্রয়োজন।

কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের সরবরাহ আছে। ডিলার আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলে কৃষক পর্যায়ে সহজে সার পৌঁছানো যেত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ