ইবির আইন বিভাগের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের
Published: 3rd, February 2025 GMT
বাসে সিট ধরা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবি করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অভিযুক্ত আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া ইসলাম, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না ও আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম।
অভিযোগের বিষয়ে জাকারিয়া বলেন, “ঘটনাস্থলে আমি পরিস্থিতি শান্ত করতে যাইনি। আগে থেকেই সেখানে ছিলাম। যখন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি বা মব সৃষ্টির পরিবেশ হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য চেষ্টা করি। কাউকে উস্কানি দেওয়া বা আঘাত করার সঙ্গে আমার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।”
তিনি বলেন, “সেখানে আমি ছাড়াও আরবি, পরিসংখ্যান ও লোক প্রশাসন বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট করে আমার নাম উল্লেখ কেন করেছে, তা আমারও প্রশ্ন। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করেছে। তবে এখানে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল বলে আমি মনে করি না।”
তিনি আরও বলেন, “দুই বিভাগের মধ্যে মারামারি শুরু হলে প্রক্টর, শিক্ষক ও সমন্বয়করা তা সামলানোর চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করি, যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।”
অভিযুক্ত হাসানুল বান্না বলেন, “শুরু থেকে আমি সেখানে ছিলাম না। বাসের ঘটনা যখন শুনেছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছি এটা আহামরি কোনো বিষয় নয়। কিন্তু রাত ৯টা বেজে যাওয়ার পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমি সেখানে গিয়ে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “অনেকের প্রশ্ন আল ফিকহের না হয়েও কেন আমরা সেখানে ছিলাম? আমরা মনে করি, এটা একটা অবান্তর প্রশ্ন। কেননা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ক্যাম্পাসের যেকোন জায়গায় তার থাকার অধিকার আছে। যদি ঘটনাটি বিভাগে হত আর তখন আমরা উপস্থিত থাকতাম, তাহলে হয়তো এমন প্রশ্ন আসতে পারত।”
অভিযুক্ত আমিরুল ইসলাম বলেন, “প্রথমত আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমিনুর নামে যার বিরূদ্ধে অভিযোগ এনেছে, সেটা আমি নই। আমি আমিরুল ইসলাম। তবে তারা জিয়া হলে থাকার বিষয় উল্লেখ করেছে। মূলত কয়েকজন সাংবাদিক আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আমি জিয়া হলে থাকি কিনা?’ তা স্পষ্ট করতে আমি সংবাদ সম্মেলনে এসেছি। আর ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অনেক শিক্ষার্থীর মতো আমিও সেখানে ছিলাম।”
তিনি দাবি করেন, “আমাদের উপর সরাসরি হামলার যে অভিযোগ এসেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমরা এসব অভিযোগ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এর কোন প্রমাণ থাকলে উপস্থাপন করতে হবে। আর দুই বিভাগের সংঘর্ষে প্রক্টর, শিক্ষকসহ যেসব শিক্ষার্থীর উপর হামলা হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
আরো পড়ুন: তুচ্ছ ঘটনায় ইবিতে সংঘর্ষ: বিচার দাবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের
গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে আইন ও আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ১৩ শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শিক্ষক ও ২ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হন।
এ নিয়ে গতকাল রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করে সংঘর্ষের ঘটনার তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচারসহ চারদফা দাবি জানান আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা অভিযোগ করে বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত ও পরিকল্পিত হামলার সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা ছিল জাকারিয়া (বঙ্গবন্ধু হল), আমিনুর (জিয়া হল), হাসানুল বান্না (লালন হল)। এদের কেউ আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থী নন। তবে সরাসরি হামলায় জড়িতের বিষয়ে তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই বলে জানান তারা।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন ব ভ গ র শ ক ষ র থ পর স থ ত স ঘর ষ র ঘটন ইসল ম উপস থ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীর গ্রামে ভিন্ন ইফতার
ইফতার অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছে ৬০০ জনকে। তাঁদের খাওয়ানো হবে আলুর ঘাঁটি দিয়ে সাদা ভাত। অবশ্য সাড়ে চার মণ আলুর সঙ্গে মেশানো হবে ৫২ কেজি মাছ। তাই সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে আলু সেদ্ধ করা ও মাছ কাটার ব্যস্ততা। গ্রামের ১১০ বছর বয়সী খন্দকার সাইফুদ্দিন বসে দেখছেন সেদ্ধ আলু ভাঙার কাজ। তিনিই বললেন, ‘ইফতার অনুষ্ঠানে আলুঘাঁটি আর সাদা ভাত দেওয়া আমাদের চৌদ্দ পুরুষের চল। মাংস–বিরিয়ানি দিলেও মানুষ এতটা খুশি হয় না।’
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাড়ীগ্রামে ৬ মার্চ হয়ে গেল এমন ঐতিহ্যের একটি ইফতার অনুষ্ঠান।
গ্রামের শরিফুল ইসলাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। প্রতিবছরই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এতে নিজের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীকে দাওয়াত করেন। জানা গেল, ইফতারিতে খেজুর, শরবত, সালাদ দেওয়া হবে কিন্তু আলুঘাঁটি আর সাদা ভাত না দিলে এগুলো কিছুই না। শরিফুল বললেন, ‘৬০০ মানুষকে দাওয়াত করা হয়েছে, দেখবেন তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ চলে আসবে। আলুঘাঁটির ইফতারের কথা শুনলেই এলাকার মানুষ চলে আসেন। সেই আন্দাজে বেশি করে রান্না করা হয়।’
ইফতার শেষে তাঁর কথার সত্যতা মিলল। ছোট-বড় মিলে এসেছিলেন ১ হাজার ১০০ রোজাদার।
কথা বলে জানা গেল, বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আলুর ঘাঁটি দিয়ে সাদা ভাতের ইফতারের ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। মূলত এলাকার অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরাই এর আয়োজন করে থাকেন।
শরিফুলের বাড়ির রেওয়াজ অনুযায়ী, প্রতিবছর ভোরে পুকুরে মাছ ধরা হয়। এবার পুকুরে বড় মাছ না থাকায় রাজশাহী শহর থেকে ৫২ কেজি মাছ কিনে আনেন শরিফুল। ইফতার সফল করতে ভোর থেকে প্রায় ৭০ জন মানুষ কাজে লেগে পড়েন। বাবুর্চি থেকে শুরু করে তাঁদের কেউই এ জন্য পারিশ্রমিক নেন না। মনের আনন্দে তাঁরা ইফতারের এই আয়োজনকে উৎসবে পরিণত করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের পৈতৃক বাড়ি সেখানে। বললেন, এই অঞ্চলের মানুষের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য আলু আর মাছের ঘাঁটি দিয়ে ইফতার করা। এলাকার অবস্থাসম্পন্ন মানুষ রোজার মধ্যে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আলু-মাছের ঘাঁটি দিয়ে ভাত দেওয়া হয়। সঙ্গে একটু তেঁতুলের টক থাকে। তাই দিয়েই তাঁরা তৃপ্তি করে খান। তিনি একবার খাসির মাংস দিয়ে বিরিয়ানি করে বিপাকে পড়েছিলেন বলে জানালেন।
রাজশাহী শহরের ৪০ কিলোমিটার উত্তরে নিভৃত একটি পল্লির নাম বাড়ীগ্রাম। সকালে শরিফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মেয়েরা বাড়ির ভেতরে মাছ কাটাকুটি করছেন। আর একদল যুবক সাড়ে চার মণ আলু সেদ্ধ করে খোসা ছাড়াচ্ছিলেন। সকালে একটি চুলায় সাড়ে ৯ কেজি তেঁতুলের টক রান্না শুরু হয়েছে। বাবুর্চি আবদুল বারী মণ্ডল বললেন, ‘আলুঘাঁটির সঙ্গে এই টক নিলে রোজাদারদের মুখে রুচি আসে।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলু প্রস্তুতের কাজ শেষ হলো। চারটি চুলায় তুলে দেওয়া হলো আলু ও মাছ। চুলায় জ্বালানি ঠেলার আলাদা লোক, চারটি চুলার দায়িত্বে চারজন। তাঁরা অনবরত খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকেন। বেলা একটার সময় লবণ ঠিক হয়েছে কি না, তা চাখার দায়িত্ব পালন করলেন একজন।
বেলা ১টা ৫ মিনিটে বাবুর্চি আবদুল বারী মন্ডল ঘোষণা দিলেন মোজাম্মেলের হাঁড়ি নামবে। সঙ্গে সঙ্গে দড়ি–লাঠি নিয়ে ছুটলেন দুজন। হাঁড়ির গলায় দড়ি পেঁচিয়ে তার ভেতরে লাঠি ভরে চুলা থেকে নামালেন। বেলা ১টা ১০ মিনিটে ইমরানের হাঁড়ি নামল। এর পরপরই নামল আনোয়ার ও মিনারের হাঁড়ি। এরপর চুলায় চাপানো হলো ভাত। একইভাবে চলল রান্না।
এদিকে কামরুজ্জামানের আমবাগানে সকালেই পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে ধুলা না ওড়ে। বিকেলে তাতে চট বিছিয়ে দেওয়া হলো। ইফতারের কিছু আগে দলে দলে রোজাদারেরা আসতে লাগলেন। দেখার মতো বিষয় ছিল, একেকজনের পাতে যতটা ভাত, ততটা আলুর ঘাঁটি।
খাওয়া চলছে, এরই মধ্যে চারদিক থেকে ‘খাটা, খাটা, খাটা’ বলে একটা রব উঠল। তখন দেখা গেল, একদল লোক তেঁতুলের টক নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। বোঝা গেল, তেঁতুলের টকই সেখানে ‘খাটা’ নামে পরিচিত।
ইফতারের আগে দোয়া পরিচালনা করলেন মাওলানা আবদুস সোবহান। পরে খেতে খেতে বললেন, ‘বাগমারার ঐতিহ্যবাহী এই আলুঘাঁটি-সাদা ভাত আলহামদুলিল্লাহ আমরা তৃপ্তিসহকারে খেলাম।’
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি হালিমুজ্জামানের পৈতৃক নিবাস ওই গ্রামে। তিনিও ছিলেন ইফতার অনুষ্ঠানে। খেতে খেতে বললেন, ‘আমি অনেক মানুষকে আমাদের এই অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছি। যে একবার বাগমারার এই আলুঘাঁটি খেয়েছে, সে বলে কবে আবার হবে এই অনুষ্ঠান।’ তিনি বললেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য বংশপরম্পরায় ধরে রাখতে চাই। ১৫ মার্চ এই গ্রামে আমি আলুঘাঁটি-সাদা ভাত দিয়ে ইফতারির আয়োজন করব। দেড় হাজার মানুষকে দাওয়াত করেছি।’