চট্টগ্রামে নগরে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন দুটি কারখানার পোশাককর্মীরা।  সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা বায়েজিদ বোস্তামী সড়কে অবস্থান নেন। এতে সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ কারণে দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী ও গাড়িচালক। প্রায় ১০ ঘণ্টা পর পোশাককর্মীরা সড়ক ছাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের টেকনিক্যাল মোড়ের আগে আনোয়ারা ড্রেস মেকার্স লিমিটেড ও ফ্রাঙ্ক অ্যাপারেল লিমিটেড নামে দুটি পোশাক কারখানা রয়েছে। কারখানা দুটি একই মালিকের। গতকাল কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে জানান, বেতন দিতে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। সর্বশেষ দুই মাস ধরে বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, কারখানা দুটির সামনের সড়কের উভয় পাশে অবস্থান নিয়ে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। এতে পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। যানজটে আটকা পড়া লোকজন বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বারবার সড়ক ছাড়ার অনুরোধ করেন।

বেলা ৩টার দিকে কারখানার এক কর্মকর্তা গিয়ে ডিসেম্বর মাসের বেতনের অর্ধেক সোমবার ও মঙ্গলবারের মধ্যে এবং বাকি অর্ধেক ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেওয়ার কথা জানান। এ ছাড়া জানুয়ারির বেতন ২৭ ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। 

তাদের দাবি, বকেয়া বেতন সোমবারের মধ্যেই দিতে হবে, নয়তো সড়ক ছাড়বেন না। 

বিকেল ৫টার পর শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে ডিসেম্বরের বেতন মঙ্গলবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং জানুয়ারির বেতন ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিশোধের আশ্বাস পান তারা। শ্রমিকরা ডিসেম্বরের বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত মেনে নেন। তবে জানুয়ারির বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত মেনে নেননি।

আনোয়ারা ড্রেস মেকার্সের কর্মী আশরাফুল আলম বলেন, ‘ডিসেম্বরের বেতন মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে একজন শ্রমিকের বেতনও যদি বকেয়া থাকে, তাহলে আমরা আবার সড়ক অবরোধ করব। এ ছাড়া জানুয়ারির বেতন ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এই দাবি মেনে না নিলে আমরা কাজ না করে কারখানার মধ্যে ধর্মঘট করব।’

রুবি আক্তার নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘মালিক সারা মাস কাজ করান। বেতন দেওয়ার নির্ধারিত দিনের আগের দিন কারখানা ছুটি দিয়ে দেন। এভাবে বছরের পর বছর শ্রমিকদের বেতন নিয়ে তালবাহানা করে মালিকপক্ষ।’

শ্রমিকরা জানান, কারখানা দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। শ্রমিকরা মালিকপক্ষকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতি মাসের বেতন পরের মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এটা নিয়ে অতীতের মতো কোনো তালবাহানা করা যাবে না। এ ছাড়া কারখানার কিছু দালাল কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। তাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের চাকরিচ্যুত করতে হবে।

এদিকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান শ্রমিকরা। তবে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টার মধ্যে বেতন পরিশোধ করা না হলে আবার সড়ক অবরোধের হুমকি দিয়েছেন তারা।

শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, কারখানাটিতে বারবার শ্রমিকদের বেতন নিয়ে সমস্যা হয়। বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করতে আমি এক সপ্তাহ সময় নিয়েছিলাম। পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা গতকাল সড়কে নামেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ ম ল কপক ষ পর শ ধ র র ধ কর র সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভোটেই ড্যাবের নতুন কমিটি, আলোচনায় ১ ডজনের বেশি প্রার্থী

বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অন্যতম চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)’। চলতি মাসেই সম্মেলনের মাধ্যমে ড্যাবের নতুন কমিটি গঠন করতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার জানান, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ড্যাবের কাউন্সিল করবেন এবং সম্মেলনের মাধ্যমে একটি সুন্দর কমিটি উপহার দেবেন। 

এবার ড্যাবের সম্মেলনে ১৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলোচনায়। যাদের অধিকাংশই কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তারা নিয়মিত কথা বলার চেষ্টা করছেন এবং বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করছেন। অবশ্য এসব ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্যানেল ঘোষণা করা হতে পারে। 

কয়েকজন কাউন্সিলর বলেন, যারা বিগত দিনে রাজপথে এবং কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন তাদেরকেই তারা মূল্যায়ন করবেন।

২০১৯ সালের ২৪ মে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ সভাপতি এবং ডা. মো. আব্দুস সালাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। হারুন-সালামের নেতৃত্বাধীন প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয়ী হয়। ২০২৪ সালের ২৫ মে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ২৪ মার্চ পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার কথা জানায় বিএনপি। পাশাপাশি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য ১২ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি ও কাউন্সিল পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে ড্যাবের সম্মেলন আয়োজনের কথা বলা হয়।

ড্যাবের সম্মেলন প্রস্তুতি ও কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক লুৎফর রহমান সদস্য সচিব এবং সদস্যরা হলেন- বিজন কান্তি সরকার, অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. এরফান আহমেদ সোহেল ও ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন। 

এই কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এবং অধ্যাপক মামুন আহমেদকে নিয়ে ৩ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
 
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, তারা বুধবার রাতে ড্যাবের কেন্দ্রীয় অফিস পরিদর্শন শেষে বৈঠকে বসে সম্মেলনের বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ৯ মে’র মধ্যেই তারা ড্যাবের সম্মেলন সম্পন্ন করবেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড্যাবের সম্মেলন সফল হলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য পেশাজীবী এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে। 

এবার ড্যাবের নতুন কমিটির শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন সাবেক সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, সাবেক মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন ও ডা. নজরুল ইসলাম, ড্যাবের উপদেষ্টা ডা. রফিকুল কবির লাবু, সহ সভাপতি ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন ও ডা. সাইফুদ্দিন নিসার আহমেদ তুষান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. শাকুর খান প্রমুখ। তবে এসব ব্যক্তির সমন্বয়েই প্যানেল গঠনের সম্ভাবনাও রয়েছে। 

বর্তমানে ড্যাবের প্রায় ৩ হাজারের মতো সদস্য (ভোটার) রয়েছেন। যাদের সবাই ৫ আগস্টের পূর্বের সদস্য। নতুনভাবে কাউকে ভোটার না বানিয়ে আগের সদস্যদের নিয়েই কাউন্সিল করার দাবি ড্যাব নেতাদের। তা না হলে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ত্যাগী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে ড্যাবের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করলে গণতান্ত্রিক চর্চা বিকশিত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। কেননা কাউন্সিলে প্রকৃত নেতাদের মূল্যায়নের সুযোগ থাকে। জয়ী এবং পরাজিত প্যানেলের লোকজন মিল-মিশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা যায়। এই চর্চা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সর্বত্র অব্যাহত রাখলে দলের লাভ হবে। 

তিনি বলেন, বিএনপির দুঃসময়ে আমরা চিকিৎসকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের দায়িত্ব গ্রহণ করি। যে সময় মহামারি করোনায় বিশ্ব বিপর্যস্ত ছিল। সে সময় দায়িত্ব নিয়েই ড্যাব নেতারা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি করোনাভাইরাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মাঠে নিরলসভাবে সক্রিয় ছিলাম। প্রান্তিক মানুষের মাঝে ড্যাবের উদ্যোগে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, ত্রাণ ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। ড্যাবের নেতাকর্মীরা সেসবের মূল্যায়ন করবেন ইনশাআল্লাহ।

ড্যাবের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রধান পাঁচটি পদে ব্যক্তি কেন্দ্রিক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ড্যাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানকে বলেছেন, কোনো প্যানেলভিত্তিক নির্বাচন না করে প্রধান পাঁচটি পদে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মনোনয়ন হলে ড্যাবের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমানো সম্ভব। কারণ নির্বাচনে বিজয়ী প্যানেল ও পরাজিত প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন বিভাজন তৈরি হয় এবং তা পররর্তী সময়ে কর্মসূচিগুলোয় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যা সংগঠনের জন্য খুবই বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর। বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।

জানা যায়, ১৯৮৯ সালে অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে সদস্য সচিব করে ড্যাবের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। এরপর প্রথম ১০ বছরের মধ্যে চারটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পর্যায়ক্রমে ড্যাবের দায়িত্বে আসেন বেশ কয়েকজন নেতা। সর্বশেষ এমএ আজিজ ও এজেডএম জাহিদের নেতৃত্বে চলছিল ড্যাব। দেড় যুগ পর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আজিজ-জাহিদ কমিটি বিলুপ্ত করে ডা. ডোনারকে আহ্বায়ক করে ১৬১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে ২০১৯ সালের ২৪ মে কেন্দ্রীয় সম্মেলন সম্পন্ন করে নবনির্বাচিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ