মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ওপর ‘নিশ্চিতভাবে’ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন। তাঁর মতে, ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বেশি সুবিধা নিচ্ছেন। ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বৈষম্য ৩০০ বিলিয়নের বেশি। প্রতিবেশী মেক্সিকো, কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প এ হুমকি দিলেন। সেসঙ্গে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সহায়তা তহবিল বন্ধেরও হুঁশিয়ারি দেন।
ইউরোপের দেশগুলো সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ইউরোপের দেশ) আমাদের গাড়ি কিনে না; আমাদের কৃষিপণ্য নেয় না। বলতে গেলে তারা কিছুই নেয় না। আমরা লাখ লাখ গাড়ি, বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য তাদের কাছ থেকে নিই।’ তবে কবে থেকে এ শুল্ক আরোপ করা হবে, তা নির্দিষ্ট করেননি ট্রাম্প।
তিনি বলেন, শিগগিরই এটা করা হতে পারে। সোমবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কোনো ধরনের বাগড়ায় যাবেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁর মতে, যুক্তরাজ্য এ তালিকায় নেই।
এ প্রেক্ষাপটে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জড়ো হয়েছেন ইউরোপের নেতারা। তারা মহাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার করতে চান। সম্প্রতি ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড দখলের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ বাস্তবতায় বৈঠক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।
ট্রাম্পের হুমকি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেছেন, এর চেয়ে ভালো হয় ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যদি একটি চুক্তি করে নেয়। ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলছেন, এটা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার জন্ম দেবে। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্পেনও।
শুল্কের জেরে মার্কিন ভোক্তারা দুর্ভোগে পড়তে পারেন। কারণ, বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি সাধারণত মেক্সিকো থেকে আসে। শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় এগুলোর মূল্য বাড়বে।
এদিকে রোববার অটোয়ায় কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হকি ম্যাচ চলাকালে বিরল এক ঘটনা ঘটে। ওই ম্যাচে গ্যালারিতে থাকা কানাডার দর্শকরা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘বো’ ‘বো’ বলে বিদ্রুপাত্মক স্লোগান দিতে থাকেন। ধারণা করা হয়, শুল্ক আরোপের জেরে কানাডার নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ২৫ শতাংশ কর আরোপ করেছেন। কানাডাজুড়ে ‘দেশি পণ্য ব্যবহার করুন’ স্লোগান জোরালো হয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজারে। হংকং, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁজিবাজারে সূচক ২ শতাংশ কমেছে। চীনের মুদ্রার মূল্য ডলারের তুলনায় দশমিক ৪ শতাংশ পড়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে ট্রাম্পের শুল্ক।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় সব ধরনের সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প, যদি না দেশটি তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করে। ট্রাম্প দাবি করেন, নতুন ভূমি অধিগ্রহণ আইনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা নিজ দেশের কিছু সংখ্যক মানুষের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউর প শ ল ক আর প র ইউর প র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।
যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।