স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার সঙ্গে একই মঞ্চে আ.লীগ নেতা
Published: 3rd, February 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার সঙ্গে একই মঞ্চে আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখা গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা সমালোচনা করতে শুরু করেছেন।
গতকাল রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের পাল্লী এলাকার একটি অনুষ্ঠানে দুই নেতাকে একসঙ্গে দেখা যায়।
আরো পড়ুন: ধামরাইয়ে হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ২
আরো পড়ুন:
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির দাবিতে তারেক রহমানকে খোলা চিঠি
নাটোরে বিএনপির ৩ নেতাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ
একই মঞ্চে দেখা যাওয়া দুই নেতা হলেন- ধামরাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সুজন মাহমুদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান। তিনি কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান।
এলাকাবাসী জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ্যে এলেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন এলাকায়। তার বিরুদ্ধে গত বছরের মার্চ মাসে নিজের বাড়িতে তুলে নিয়ে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। ধামরাইয়ে শিক্ষার্থী সাদ হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হয়ে গত ২৩ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন লুৎফর রহমান। তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকেও অপসারণ করা হয়। সম্প্রতি জামিনে এসে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পরিচালনা করছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাল্লী এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “লুৎফর চেয়ারম্যান আমাদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন। সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। এখন আবারো তিনি ফিরেছেন। বিএনপি নেতারাই তাকে প্রকাশ্যে আনছেন।”
এ বিষয়ে জানতে লুৎফর রহমানকে ফোন করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কল কেটে দেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ধামরাই উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব সুজন মাহমুদ বলেন, “আমি বিষয়টি জানতাম না। তাকে দেখার পর প্রতিবাদ করি। অনুষ্ঠান থেকে বের হয়েও আসতে চেয়েছিলাম।”
ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। অনেকে নিজের মতো অনেক কিছু করে ফেলেন। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আওয় ম ল গ ব এনপ আওয় ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান
ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে র্যালি করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি।
র্যালি–পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্য যেকোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’
ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরায়েল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।’
গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি।’
সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরায়েলের কাছ থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।’
ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয়—পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দল–মতনির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয়—একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।’
র্যালি–পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বিএনপির এই কর্মসূচি বিকেল চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকেই নয়াপল্টনে নেতা–কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতা–কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন নয়াপল্টন এলাকা।
র্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে র্যালি শুরু হয়। সারা পথজুড়েই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। বিএনপির নেতা–কর্মীরা ‘ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিএনপির নেতারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে—গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে।