চীনের প্রতিশ্রুতি তাত্ত্বিক, বাস্তবিক পদক্ষেপ নেই
Published: 3rd, February 2025 GMT
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নানা প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবিক অর্থে চীনের খুব বেশি পদক্ষেপ দেখেনি বাংলাদেশ। চীনের এমন কথা তাদের তাত্ত্বিক অবস্থান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দ্য রোহিঙ্গা ইন বাংলাদেশ: ইন সার্চ অব এ সাসটেইনেবল ফিউচার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এসব কথা বলেন।
রোহিঙ্গা সংকটে চীনের ভূমিকা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চীন শুরু থেকে সংকট সমাধানে তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে আসছে। তবে বাস্তবিক অর্থে খুব বেশি পদক্ষেপ নেয়নি তারা। মিয়ানমারে চীনের গভীর স্বার্থ রয়েছে। সম্প্রতি চীন সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন, তারা সংকট সমাধানে চেষ্টা করবেন।
মিয়ানমার বলতে বাংলাদেশ রাখাইন বোঝে। কারণ, সীমান্তের বেশির ভাগই রাখাইনের সঙ্গে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন রাখাইন অঞ্চল আরাকান আর্মির দখলে। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সব অংশের প্রতিনিধিদের যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ চীনকে আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে অনুরোধ করেছে। একটি শান্তিপূর্ণ মিয়ানমার যেমন বাংলাদেশের প্রয়োজন, তেমনি চীনেরও প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা বোঝাতে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমার এমন একটি দেশ, যার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা অনুবিভাগ রয়েছে। ফলে এটি থেকে বোঝা যায়, রোহিঙ্গা সংকটকে সরকার কতটা গুরুত্বসহকারে দেখছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করার জন্য উপদেষ্টা মর্যাদার একজন হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একটিই সমাধান। সেটি হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে প্রত্যাবাসনটি হতে হবে তারা যেখান থেকে বিতারিত হয়েছে, সে স্থানে অধিকার ও নিরাপত্তাসহ। অন্য স্থানে তাদের পুনর্বাসন করলে হবে না। আর এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রয়োজন রয়েছে। তাদের নিশ্চিত করতে হবে, রোহিঙ্গাদের ওপর যাতে একই ধরনের নৃশংসতা আর কখনোই না হয়।
অধিকার-নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ইতিহাস দেখলে দেখবেন যে গণহত্যার মতো অপরাধ কখনোই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়নি। সব সময়ে একটি সংঘাতের মধ্য দিয়ে এর সমাধান এসেছে। রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে বলেছি, এর সমাধান কখনোই শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মধ্য দিয়ে হবে না।
বর্তমানে মিয়ানমারে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি চলছে, তা হয়তো রোহিঙ্গাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসতে পারে অনুমান করে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি হয়তো সংকট সমাধানের একটি সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে পারবে। তবে এটি নিশ্চিত নয়। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ শেষ হলে দেশটি আগের অবস্থায় ফেরত যেতে পারবে না। ফলে সেখানে একটি পরিবর্তন আসবে।
সংকট সমাধানে আশিয়ান সদস্য রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আশিয়ানের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আশিয়ান সংগঠনের আইন অনুযায়ী, এক দেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে কিছু বিষয় রয়েছে, যা আর অভ্যন্তরীণ থাকে না। যেমন– রোহিঙ্গা সংকট এখন আর অভ্যন্তরীণ নেই, এটি বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকেও আক্রান্ত করেছে। রোহিঙ্গারা নৌকায় করে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত চলে গিয়েছে। আশিয়ান মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। রোহিঙ্গা নিয়ে অনেক দেশ কথা বলছে না। তবে কিছু দেশ রয়েছে, তারা জোরালোভাবে কথা বলছে।
মানবিক সহায়তা কমে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, এতে রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের ওপর আরও বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, বিশ্বের অনেকেই একে অন্যের দেখাদেখি সহায়তা কমিয়ে আনছে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে অবস্থান নিয়েছে, তা পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে পারে। আশা করি, রোহিঙ্গাদের জন্য তারা অর্থ সহায়তা বন্ধ করবে না। রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়; এটি হয়তো এ মুহূর্তে আমাদের সীমানার মধ্যে রয়েছে। তবে এ বিষয়টিতে এখনই মনোযোগ না দিলে এটি শুধু আর বাংলাদেশের সংকট থাকবে না।
উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের চাহিদা সরবরাহ অব্যাহত রাখা। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা কমিয়ে আনছে। তবে এটিও বলে রাখতে চাই, রোহিঙ্গাদের আমরা একীভূত করব না। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন। এ বিষয়ে আমি প্রত্যাবাসনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপে জোর দিতে চাই। কারণ, প্রথমে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে গিয়ে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে পারে যে আমরা সংকট সমাধানের পথে রয়েছি। এরপর হয়তো তারা আর রোহিঙ্গাদের নিল না। ফলে পাইলট প্রকল্পে স্বল্পভাবে যাওয়া শুরু করল, তবে প্রত্যাবাসনের সম্পূর্ণ রোডম্যাপ থাকতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট র উপদ ষ ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
হারানো ৩৪ মোবাইল উদ্ধার করে মালিকদের হাতে তুলে দিল পুলিশ
হারিয়ে যাওয়া ৩৪টি মোবাইল ফোন প্রযুক্তির সহায়তায় উদ্ধার করে মালিকদের কাছে হস্তান্তর করেছে পল্টন থানা পুলিশ। থানার সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইলগুলো মালিকদের হাতে তুলে দেন মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হুসাইন মুহাম্মাদ ফারাবী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পল্টন মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান।
ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার পর মালিকরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে থানার এএসআই ইকবাল হোসেন তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফোনগুলো উদ্ধার করেন। এর আগেও একাধিকবার হারানো মোবাইল উদ্ধারের পর তা প্রমালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত শতাধিক মোবাইল উদ্ধার করেছে পল্টন থানা পুলিশ।