মাইক্লোর নতুন শোরুম উদ্বোধন করলেন তাহসান ও নাদিয়া
Published: 3rd, February 2025 GMT
জাপানি লাইফস্টাইল থেকে অনুপ্রাণিত তৈরি পোশাকের ব্র্যান্ড ‘মাইক্লো’। গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে মানসম্মত ও পছন্দের পোশাক দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ‘মাইক্লো বাংলাদেশ’। দ্রুত বর্ধনশীল ব্র্যান্ডটি মাত্র এক বছরে ১২টি শোরুম চালু করে নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে মাইক্লো বাংলাদেশের ১৩তম শোরুম উদ্বোধন করেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান ও অভিনেত্রী সালহা খানম নাদিয়া।
এ প্রসঙ্গে তাহসান খান বলেন, ‘মাইক্লো বাংলাদেশে এতো সুন্দর মানসম্মত তৈরি পোশাক নিয়ে আসছে তা দেখে আমার অবাক লাগছে। লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড মাইক্লো তাদের স্টাইল এবং মানের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রমাণ রেখে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও তাদের সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী নাদিয়া বলেন, ‘মাইক্লো বাংলাদেশের পোশাকের গুণগত মান খুবই ভালো। এ কারণেই অল্প সময়েই সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড মাইক্লোর এই নতুন যাত্রায় অংশ হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’
মাইক্লো বাংলাদেশের অপারেশন উপদেষ্টা কাজী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাইক্লো বাংলাদেশ মানসম্মত, টেকসই ও সাশ্রয়ী মূল্যের পছন্দের পোশাক দেওয়ার লক্ষ্যে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ১৩তম শোরুম চালু করে মাইক্লো আরও একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো। আমরা বাংলাদেশের জনগণকে আরামদায়ক, পরিবেশবান্ধব পোশাক সরবরাহের আমাদের যাত্রা চালিয়ে যেতে পেরে আনন্দিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাইক্লোতে আমরা গুণমান এবং সাশ্রয়ী মূল্যকে অগ্রাধিকার দেয়। গ্রাহকের চাহিদার কথা চিন্তা করেই বসুন্ধরা সিটিতে আরো একটি আমাদের নতুন শোরুম।’
মাইক্লোর পরিচালক (ক্রিয়েটিভ ডিজাইন ইনোভেশন অ্যান্ড মার্কেটিং) বাবু আরিফ বলেন, ‘বসুন্ধরা সিটিতে বড় পরিসরে এই শোরুমটি মাইক্লোর জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। জাপানি পোশাক, লাইফস্টাইল ও কোয়ালিটি থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ায় মাইক্লো জাপানি গুণগতমান ও উদ্ভাবনী কাপড়ের উপাদানকে অনুসরণ করছে। একইভাবে পোশাক তৈরি ও গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করছে। আমি বিশ্বাস করি, দাম, মান ও চাহিদা বিবেচনায় সর্বসাধারণের পোশাকের প্রিয় ব্র্যান্ডই নয় বরং ফ্যাশনে নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠবে মাইক্লো।’
অন্যদিকে, মাইক্লোতে আন্তর্জাতিক মানের বিক্রয় সেবা নিশ্চিত করতে চান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (মার্চেন্ডাইজিং, সেলস, হিউম্যান রিসোর্স ও স্টোর অপারেশন) এ এইচ এম আরিফুল কবির। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা সিটিতে এটি আমাদের তৃতীয় স্টোর। আমরা সমগ্র বাংলাদেশে মাইক্লো প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।’
মাইক্লোর গ্লোবাল বিজনেস ডিরেক্টর তাদাহিরো ইয়ামাগুচি বলেন, ‘মাইক্লো একটি ব্র্যান্ডের চেয়েও বেশি কিছু; এটি সৃজনশীলতা, টেকসইতা এবং উদ্ভাবনের প্রতীক। আমরা আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আমাদের জাপানি-অনুপ্রাণিত ডিজাইনের মাধ্যমে পোশাক শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
উদ্বোধন উপলক্ষে বসুন্ধরা সিটি লেভেল ৫ এ ক্রেতাদের জন্য সপ্তাহব্যাপী আকর্ষণীয় পুরস্কারের পাশাপাশি রয়েছে সব পণ্যের ওপর বিশেষ মূল্যছাড়। ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রামে নতুন শোরুম উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
২০০৭ ও ২০২৪ : সেনাবাহিনীর শান্তি রক্ষা কার্যক্রমই তুরুপের তাস
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এখন টক অব দ্য টাউন। কারণ, তিনি একটি অনুষ্ঠানে তথ্যবোমা ফাটিয়েছেন। সম্প্রতি বিবিসির ‘হার্ডটক’ অনুষ্ঠানে সঞ্চালক স্টিফেন স্যাকার গাজা, সুদান, ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে ফলকার টুর্কের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধ মেনে এসব পরিস্থিতি সমাধানে জাতিসংঘকে ক্ষমতাহীন মনে হচ্ছে। এর জবাবে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘আমি গত বছরের বাংলাদেশের উদাহরণ দিচ্ছি।
আপনি জানেন, জুলাই-আগস্টে সেখানে ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।’ ‘বাংলাদেশে তখন শেখ হাসিনার সরকার ছাত্রদের আন্দোলন দমনে ব্যাপক নিপীড়ন চালিয়েছিল’—এ কথা উল্লেখ করে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘আমরা কী বলি, আমরা কী করতে পারি এবং আমরা ওই পরিস্থিতি কীভাবে দেখি, সেটি নিয়ে তাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। আমরা প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করি—যদি তারা এতে জড়িত হয়, তার অর্থ হবে, তারা হয়তো আর শান্তিরক্ষী পাঠানোর দেশ থাকতে পারবে না। ফলে আমরা পরিবর্তন দেখলাম।’
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রতি সতর্কবার্তার ইঙ্গিত আছে। প্রতিবেদনটিতে নিয়মবহির্ভূত বলপ্রয়োগে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে ১৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কারণে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে—এমন আশঙ্কা, যা বিক্ষোভ চলাকালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল। সেটি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে সেনা কর্মকর্তাদের অনাগ্রহী করে তোলে।’ জাতিসংঘের নীতি অনুযায়ী, যাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনে যুক্ত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে, সেসব প্রার্থীকে শান্তি রক্ষা বা জাতিসংঘের অন্য কোনো কার্যক্রমে রাখা হয় না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অনুচ্ছেদটিতে। (সূত্র: ‘বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিল জাতিসংঘ, কতটা চাপ তৈরি করেছিল’, তোয়াহা ফারুক, বিবিসি নিউজ বাংলা, ৭ মার্চ ২০২৫)
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটা বড় ধরনের ওলট-পালট ঘটে যায়। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। হাসিনা গোপনে দেশ ছাড়েন। ওই সময় আসলে কী ঘটেছিল?
ডেটলাইন ৫ আগস্ট। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচি ২৪ ঘণ্টা এগিয়ে আনেন। চারদিক থেকে জনস্রোত ঢাকায় আসতে থাকে। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো। ঠিক এ অবস্থায় দুপুরে টেলিভিশনের স্ক্রলে একটি খবর ভেসে ওঠে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বেলা দুইটায় ভাষণ দেবেন। দেশে একটি ‘শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার’ থাকা অবস্থায় সেনাপ্রধান টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, এটা ছিল অবাক করার মতো খবর। দেশে কি আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান হলো? ঘণ্টা দুয়েক পর তিনি টিভির পর্দায় এলেন। বললেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সামরিক বাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে। যেহেতু সরকার বদলের প্রচলিত সাংবিধানিক ধারার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এটি ঘটল, জনমনে এ ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে আরেকটি ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান হলে তো আন্দোলনের নেতারাই রেডিও-টিভির নিয়ন্ত্রণ নিতেন, তাঁরাই সেখানে ঘোষণা দিতেন, যেভাবে মেজররা ঘোষণা দিয়েছিলেন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট।
সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছিল। সেনাবাহিনীকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছিল। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার তখন রীতিমতো হিরো। কিন্তু ফলকার টুর্কের ফাঁস করা উক্তি শুনে মনে হতে পারে, সেনাপ্রধান স্বপ্রণোদিত হয়ে নয়, বরং চাপে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এটা ঠিক যে পালাবদলের একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। ১৬ বছরের দুঃশাসন, তিন-তিনটি তামাশার নির্বাচন, বছরের পর বছর ভিন্নমতাবলম্বীদের গ্রেপ্তার-গুম-হত্যা-নির্যাতন, পারিবারিক ফ্যাসিবাদ, লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া করা এবং শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে সব ধরনের নৃশংসতা চালানো—এসবই ছিল পরিবর্তনের শর্ত, যা হাসিনা নিজেই তৈরি করেছিলেন।
এ সময় সেনাবাহিনীর, বিশেষ করে জুনিয়র কর্মকর্তা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও মুখর হতে দেখা যায়। এটাকে সেনানেতৃত্বের উপেক্ষা করার উপায় ছিল না, যদিও এই নেতৃত্ব হাসিনারই তৈরি করা। হাসিনা ১৬ বছর শত অপকর্ম করেও টিকে ছিলেন আমলা, পুলিশ, র্যাব, ডিজিএফআইকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে। তাদের সঙ্গে জুটেছিল তাঁর আত্মীয়স্বজন, একপাল স্তাবক সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক ও বুদ্ধিজীবী। নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে অভ্যুত্থান ছাড়া বিকল্প ছিল না।
৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সরকার বলতে ছিল সামরিক বাহিনী আর রাজপথ ছিল ছাত্রদের দখলে। ওই সময় যা যা ঘটেছে, তার দায়দায়িত্ব সবই বর্তায় সেনাবাহিনীর ওপর। এটাই সত্য যে শেখ হাসিনা শত অপরাধ সত্ত্বেও সেফ এক্সিট পেয়েছিলেন। তাঁর কুখ্যাত সহযোগীদের অল্প কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অন্যরা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকেই পালিয়ে বিদেশে চলে যান। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে। অভিযোগ আছে বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেনের।
যখন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা দিয়ে আন্দোলন দমানো যাচ্ছিল না, যখন দেখা গেল—‘গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না ’—এ পর্যায়ে সেনাবাহিনী শেখ হাসিনার নির্দেশ না মেনে ‘জনগণের পাশে’ থাকার কথা বলে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বাহিনীগুলোর অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ার পর থেকে লাভবান হয়েছে মিশনে অংশগ্রহণকারী বাহিনীগুলো ও তাদের সদস্যদের পরিবারগুলো। তাঁরা পালাক্রমে মিশনে যান। এক বছরে যে আয় করেন, তা তাঁরা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেন, জমি-বাড়ি-গাড়ি কেনেন। তাঁদের সংখ্যা কম নয়।
সেনানেতৃত্বের কোনো ভূমিকা বা সিদ্ধান্তের কারণে এ সুযোগ নষ্ট হয়ে গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাধারণ সৈনিকদের খেপে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ দেশে সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাস আছে। সব ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র নয়, বঞ্চনা আর ক্ষোভ থেকেও বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। এ পরিস্থিতিতে সেনানেতৃত্বের হাসিনার নির্দেশের বাইরে পা ফেলা ছাড়া বিকল্প ছিল না। হাসিনা একটা ভালো নির্বাচন দিয়ে গণরায় মেনে নিলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তাঁর মধ্যে একটা গোঁয়ার্তুমি ছিল—আমার বাবা স্বাধীনতা দিয়েছে; এখন আমরা বংশপরম্পরায় এ দেশটা শাসন করব, লুটেপুটে খাব।
পরিবর্তনের শর্ত অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি হয়েছিল। তার ওপর কাজ করেছে জাতিসংঘের সতর্কবার্তা। এটাকে হাসিনার সমর্থকেরা বলেন ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’।
এমনটি আগেও ঘটেছিল একবার। এক-এগারোতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছিল। সেবারও জাতিসংঘের চিঠি ধন্বন্তরির কাজ করেছিল। প্রশ্ন হলো, জাতিসংঘ গায়ে পড়ে খামাখা চিঠি দেবে কেন? ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ম্যানিপুলেট করে বিএনপি যেভাবে ছক কষেছিল, তার ফলে পূর্বঘোষিত ২২ জানুয়ারির (২০০৭) নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতো। আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল।
নিউইয়র্কের সদর দপ্তর থেকে ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি পাঠানো জাতিসংঘের চিঠিতে বলা হয়েছিল:
‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট তার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বৈধতাকে ভীষণ রকম ঝুঁকিতে ফেলেছে।...দেশটির পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় জাতিসংঘ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং সংঘাত থেকে বিরত থাকার জন্য সব দলের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। আমরা আশা করছি, সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ থাকবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা অন্যরা সংযত আচরণ করবে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে। একটি সমসুযোগের পরিবেশ তৈরির জন্য জাতিসংঘ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে দলগুলো নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় আস্থাশীল হওয়ার সুযোগ পায়। বর্তমান সংকট অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অর্জন ও আন্তর্জাতিক অবস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জাতিসংঘ উদ্বেগ জানাচ্ছে। একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।’ (সূত্র: মহিউদ্দিন আহমদ, এক-এগারো: বাংলাদেশ ২০০৭-২০০৮, প্রথমা প্রকাশন)
এক-এগারোর অভ্যুত্থানের কারণে বিএনপি খুব ক্ষুব্ধ এবং আওয়ামী লীগ ছিল খুবই খুশি। ২০২৪ সালের আগস্ট অভ্যুত্থানের কারণে আওয়ামী লীগ খুবই ক্ষুব্ধ এবং বিএনপি মহাখুশি। ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ বলেছিল, এক-এগারো হচ্ছে তাদের আন্দোলনের ফসল। ২০২৪ সালে এসে বিএনপি বলছে, আগস্ট অভ্যুত্থানে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। তবে কখন হবে, বলা মুশকিল।
● মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক