হাত বেঁধে নারীর চুল কেটে মুখে কালি
Published: 3rd, February 2025 GMT
ওড়না দিয়ে দুই হাত বাঁধা এক নারীকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। চার নারী তাকে ধরে রেখেছেন। তাদের একজন হাত বাঁধা ওই নারীর চুল কাটছেন। তাকে ঘিরে থাকা উৎসুক নারী-পুরুষ মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্যটি ধারণ করে উল্লাস করছেন। এমন দৃশ্যের এক মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম ফজিলা চম্পা। তিনি যশোরের ঝিকরগাছায় উপজেলার চাপাতলা গ্রামের তোরাব মোড়লের মেয়ে। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার বেনেয়ালি গ্রামে ডিভোর্সি পুত্রবধূকে দেখতে যান ভুক্তভোগী নারী। তখন পুত্রবধূর পরিবারের লোকজনের হাতে মারধর ও মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতন শিকার হন চম্পা। এ ঘটনায় নির্যাতিত নারী ঝিকরগাছা থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত চারজনকে আজ সোমবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন- ঝিকরগাছার বনেয়ালি কলাবাগানপাড়ার আবদুল হামিদের ছেলে শিমুল হোসেন, পদ্মপুকুর গ্রামের ইব্রাহীম খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার রুমি, বেনেয়ালি গ্রামের মফিজুরের স্ত্রী রনি বেগম ও পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের স্ত্রী রহিমা। আজ বিকেলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
ঝিকরগাছা থানার ওসি মো.
ফজিলা খাতুনের অভিযোগ, তার ছেলে রায়হানের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের মেয়ে বিথির দুই বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর বনিবনা না হওয়ায় সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর বিথীর একই উপজেলার গদখালি ইউনিয়নের বেনেয়ালি গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শিমুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফজিলা বেগম বেনেয়ালি গ্রামে তার সাবেক পুত্রবধূ বিথিকে দেখতে যান। এ সময় বিথির নতুন স্বামী শিমুল হোসেন, চাচি শারমিন আক্তার রুমি, চাচি শাশুড়ি রনি বেগম, মা রহিমা বেগমসহ তার স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন মিলে ফজিলা বেগমের মাথার চুল কেটে মুখে কালি লেপন করে দেয়। এসময় তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। উপস্থিত বহু নারী-পুরুষ পুরো ঘটনা ভিডিও করে।
তিনি বলেন, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে শিমুলের বাড়ির পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং সন্ধ্যার পর দেশিয় অস্ত্র দিয়ে থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। কোথাও অভিযোগ করলে আরও বড় ধরনের ক্ষতি করার ভয় দেখায় অভিযুক্তরা। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয় গদখালি ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেম বলেন, তাবিজ-কবজ (যাদু) করেছে সন্দেহে ওই নারীকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে বলে শুনেছি। এভাবে একজন মানুষকে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সামরিক বিমানে করে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসন ও অনুপ্রবেশের মতো ইস্যু নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারই অংশ হিসেবে এবার সামরিক বিমানে করে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক পরিবহনে করে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী ফেরত পাঠানোর মধ্যে সবচেয়ে দূরত্ব গন্তব্য হলো ভারত।
সোমবার একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, “সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে ভারতীয় অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।”
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল অবৈধ অভিবাসী সমস্যা সমাধান। নির্বাচনে জয়লাভের পর সেই প্রতিশ্রতি রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এরইমধ্যে, কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটির অধীনের পরিচালিত কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে বন্দিশালা সম্প্রসারণে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন এ বন্দিশালায় অবৈধ অভিবাসীদের রাখার কথা জানান।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সহায়তা নিচ্ছে সামরিক বাহিনীর। আটক অবৈধ অভিবাসীদের রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক ঘাঁটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “সামরিক বাহিনীর সি-১৭ বিমানে করে অভিবাসীদের একটি ফ্লাইট ভারত রওনা দিয়েছে। যেটি পৌঁছাতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে।”
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনও টেক্সাসের এল পাসো এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগোতে আটক ৫ হাজারের বেশি অভিবাসীকে বহিষ্কারের জন্য ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সামরিক বিমানে করে অভিবাসীদের গুয়াতেমালা, পেরু এবং হন্ডুরাসে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সামরিক বিমানে করে অভিবাসী ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া যদিও ব্যয়বহুল। রয়টার্স জানিয়েছে, গত সপ্তাহে গুয়াতেমালায় একটি সামরিক বিমানে করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে জনপ্রতি কমপক্ষে ৪ হাজার ৬৭৫ ডলার খরচ হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। অভিষেক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ বন্ধ করে দেবেন। তাদেরকে ‘অপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এমন লাখো অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে।”
একই সঙ্গে ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান নিয়মকানুনে পরিবর্তন আনার কথা জানান। নতুন নিয়মের আওতায় নথিবিহীন অর্থাৎ অবৈধ কোনো অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান প্রসব করলে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশেও সই করেছেন তিনি।
ঢাকা/ইভা