ওড়না দিয়ে দুই হাত বাঁধা এক নারীকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। চার নারী তাকে ধরে রেখেছেন। তাদের একজন হাত বাঁধা ওই নারীর চুল কাটছেন। তাকে ঘিরে থাকা উৎসুক নারী-পুরুষ মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্যটি ধারণ করে উল্লাস করছেন। এমন দৃশ্যের এক মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম ফজিলা চম্পা। তিনি যশোরের ঝিকরগাছায় উপজেলার চাপাতলা গ্রামের তোরাব মোড়লের মেয়ে। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার বেনেয়ালি গ্রামে ডিভোর্সি পুত্রবধূকে দেখতে যান ভুক্তভোগী নারী। তখন পুত্রবধূর পরিবারের লোকজনের হাতে মারধর ও মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতন শিকার হন চম্পা। এ ঘটনায় নির্যাতিত নারী ঝিকরগাছা থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত চারজনকে আজ সোমবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  

তারা হলেন- ঝিকরগাছার বনেয়ালি কলাবাগানপাড়ার আবদুল হামিদের ছেলে শিমুল হোসেন, পদ্মপুকুর গ্রামের ইব্রাহীম খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার রুমি, বেনেয়ালি গ্রামের মফিজুরের স্ত্রী রনি বেগম ও পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের স্ত্রী রহিমা। আজ বিকেলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

ঝিকরগাছা থানার ওসি মো.

বাবলুর রহমান খান বলেন, ভুক্তভোগী ফজিলা খাতুন পুত্রবধূ বিথিকে দেখতে তার নতুন স্বামীর বাড়ি যান। বিথির স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন আটকে রেখে ফজিলা খাতুনের মাথার চুল কেটে দেয়। এসময় তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এজাহারনামীয় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। 

ফজিলা খাতুনের অভিযোগ, তার ছেলে রায়হানের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের মেয়ে বিথির দুই বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর বনিবনা না হওয়ায় সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর বিথীর একই উপজেলার গদখালি ইউনিয়নের বেনেয়ালি গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শিমুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফজিলা বেগম বেনেয়ালি গ্রামে তার সাবেক পুত্রবধূ বিথিকে দেখতে যান। এ সময় বিথির নতুন স্বামী শিমুল হোসেন, চাচি শারমিন আক্তার রুমি, চাচি শাশুড়ি রনি বেগম, মা রহিমা বেগমসহ তার স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন মিলে ফজিলা বেগমের মাথার চুল কেটে মুখে কালি লেপন করে দেয়। এসময় তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। উপস্থিত বহু নারী-পুরুষ পুরো ঘটনা ভিডিও করে। 

তিনি বলেন, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে শিমুলের বাড়ির পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং সন্ধ্যার পর দেশিয় অস্ত্র দিয়ে থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। কোথাও অভিযোগ করলে আরও বড় ধরনের ক্ষতি করার ভয় দেখায় অভিযুক্তরা। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

স্থানীয় গদখালি ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেম বলেন, তাবিজ-কবজ (যাদু) করেছে সন্দেহে ওই নারীকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে বলে শুনেছি। এভাবে একজন মানুষকে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ইয়াংওয়ানের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে

নিজের ৭৮ বছর জীবনের অর্ধেকের বেশিই তিনি জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের সঙ্গে। আশির দশকে এ দেশের পোশাকশিল্পের যাত্রার শুরুতে তিনি ছিলেন এই শিল্পের যাত্রাসঙ্গী। তা–ও আবার হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে একজন। শুধু তা–ই নয়, আশির দশকে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম বিদেশি বিনিয়োগকারী। বাংলাদেশের শিল্পের সঙ্গে সেই যে তাঁর যাত্রা শুরু করেছিলেন, এখন তা এক শিল্পসামাজ্যে রূপ নিয়েছে।

৪৫ বছর ধরে বাংলাদেশ ও এর শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং, পেলেন অন্য রকম এক স্বীকৃতি। বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, বৈদেশিক আয়ের অবদানের জন্য তাঁকে দেওয়া হয়েছে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব (অনারারি সিটিজেনশিপ)। চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী দিনে তাঁর হাতে এই স্বীকৃতি তুলে দেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এর মাধ্যমে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি পেলেন এ দেশের নাগরিক না হয়েও ‘সম্মানিত নাগরিক’ মর্যাদা।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে যাঁরা তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত ও সহজ করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পথচলা নিরাপদ ও মসৃণ করাও জরুরি। সেই সঙ্গে তাঁদের যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মাননা দিতে পারলে অন্যান্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও তাতে সম্মানিত বোধ করবেন।

এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডা। সংস্থাটি এ দেশের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘বিনিয়োগ অ্যাম্বেসেডর বা বিনিয়োগ দূত’ হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায়। এ জন্য ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে এ দেশের বিনিয়োগ দূতের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় তারা। বিডা মনে করছে, কিহাক সাংয়ের হাত ধরে এ দেশে কোরীয়সহ বিশ্বের আরও অনেক বিনিয়োগকারীর বড় ধরনের বিনিয়োগ আসবে বা আনতে কাজ করবেন।

বিডার এই ভাবনা যে একেবারে অমূলক নয়, তার প্রমাণও এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে কোরিয়ার আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল এসেছে। ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং নিজ উদ্যোগে কোরিয়া থেকে এসব বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশ সফরে নিয়ে এসেছেন। সফরকারী কোরিয়া বিনিয়োগকারীদের দলটি গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

কিহাক সাং

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেয়ের বয়স ১৮ হলে সম্পর্কে জড়াব: পবন কল্যাণের প্রাক্তন স্ত্রী
  • ঠান্ডা-কাশি হলে কি টুথব্রাশ বদলানো জরুরি
  • কিহাক সাংয়ের সম্মাননায় কেইপিজেডে আনন্দের ঢেউ
  • কামরাঙ্গীরচরে গণপিটুনিতে ২ ‘চাঁদাবাজ’ নিহত
  • চাঁদাবাজি করতে গিয়ে কামরাঙ্গীরচরে গণপিটুনিতে ২ জন নিহত
  • হিন্দু ব্যক্তির আইডি হ্যাক: ফোন জমা থানায়, তবু ইসলামবিরোধী পোস্ট
  • সাহসী, সুন্দরী যে ফিলিস্তিনি বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন
  • মহানবীর (সা.) সময়ে স্বাবলম্বী নারীদের পেশা
  • নড়াইলে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন
  • রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ইয়াংওয়ানের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে