অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় মিলেছে। তাদের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর জানার পর থেকেই পরিবারসহ এলাকাজুড়ে চলছে মাতম। স্বজন ও এলাকাবাসী মানবপাচারকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

দালালদের খপ্পরে পড়ে ১ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার। তার সঙ্গে মামা গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার আকনও যোগ দেন। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় তারা ইতালির দিকে যাত্রা করেন। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান মামা-ভাগ্নে। তাদের মৃত্যুর খবর পরিবারে এসে পৌঁছালে নেমে আসে শোকের ছায়া।

আরো পড়ুন: লিবিয়া উপকূলে ২০ বাংলাদেশির মরদেহ ভেসে আসার খবর

আরো পড়ুন:

বরিশালে পৃথক দুর্ঘটনায় ৩ মৃত্যু

ধান ক্ষেতে বিএনপি নেতার মরদেহ, স্ট্রোকে মৃত্যু ধারণা পুলিশের

এছাড়াও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- রাজৈর উপজেলার গোবিন্দপুরের ইনসান শেখ, শাখারপাড়ের সজিব মোল্লা, সাদবাড়িয়ার রাজীব, সুন্দিকুড়ির সাগর বিশ্বাস, আশিষ কীর্তনীয়া, সাগর বাড়ৈ ও বৌলগ্রামের অনুপ সরদার।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহতদের প্রায় সবাই ভিটেমাটি বিক্রি করার পাশাপাশি চড়া সুদে টাকা এনে দালালদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। নিহতদের লিবিয়ায় পাঠানোর পেছনের মূলহোতা রাজৈর উপজেলার হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিক দালাল। 

নিহত টিটু হাওলাদারের বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, “আমি সামান্য চা দোকানী। আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার ছেলেকে ইতালি নেওয়ার জন্য টাকা নেয় ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিক দালাল। তাকে ১৭ লাখ টাকা দেই। এখন শুনি, ছেলে মারা গেছে। আমি দালালের বিচার চাই।”

নিহত আবুল বাসার আকনের ভাই বাচ্চু আকন বলেন, “দালালরে টাকা দিয়ে আমরা সর্বশান্ত। তাদের আমরা একবার ১৭ লাখ এবং পরেরবার ২০ লাখ টাকা দেই। এখন আমার ভাইয়ের লাশ চাই।”

রাজৈর থানার ওসি মাসুদ খান বলেন, “দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়া হবে।”

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

শুক্রবার (৩১ ফেব্রুয়ারি) লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী ব্রেগা তীরে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মরদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক থাকার আশঙ্কার কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেলেও, এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে।

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র র মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

দূষণবিরোধী অভিযানে ৪৬২ ইটভাটা বন্ধ, ২০ কোটি টাকা জরিমানা 

সারা ‌দে‌শে দূষণবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। চলতি ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ৫৯৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চা‌লি‌য়ে ১ হাজার ৩৬৩টি মামলা করা হয়ে‌ছে। জরিমানা হিসেবে ১৯ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ৩০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। এ সময় ৩০৫টি ইটভাটার চিমনি ভেঙে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে এবং ১৫৭টি ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৬০টি ভাটার কাঁচা ইট ধ্বংস করা হয়েছে। ৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৬ ট্রাক সীসা/ব্যাটারি গলানোর যন্ত্রপাতি জব্দ করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। 

অভিযানে কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন, বায়ুদূষণকারী অবৈধ ইটভাটা, স্টিল মিল, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য নির্গমন, সীসা/ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা, জলাশয় ভরাট, টায়ার পাইরোলাইসিস, চারকোল কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে‌ছে।

সোমবার (১০ মার্চ) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞ‌প্তি‌তে এসব তথ‌্য জানানো হ‌য়ে‌ছে।

বিজ্ঞ‌প্তি‌তে বলা হয়েছে, ৯ মার্চ থে‌কে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০২২ অনুসারে ঢাকার হাতিরঝিল, মগবাজার, আদাবর, আফতাবনগর, বাড্ডা ও ধানমন্ডি এলাকায় চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে‌ছে। এ সময় ১১টি মামলায় ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে সতর্ক করা হয়েছে এবং নির্মাণ সামগ্রী সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই দিনে নারায়ণগঞ্জে কঠিন বর্জ্য বিধিমালা ২০২১ অনুসারে রেডিমিক্স কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় তিন মামলায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। 

পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, নীলফামারী, ঝিনাইদহ, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, মৌলভীবাজার, পিরোজপুর, গাইবান্ধা, শরীয়তপুর, বরগুনা, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও শেরপুর জেলায় ২০টি অভিযান চালানো হয়েছে।

এসব অভিযানকালে ১৯ মামলায় ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ২২টি ইটভাটার কিলন ভেঙে, পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ও কাঁচা ইট ধ্বংস করে কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে। তিনটি ইটভাটা বন্ধের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে ব‌লেও জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে বিজ্ঞ‌প্তি‌তে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ