নরসিংদী ছাত্রলীগের একাধিক ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে নরসিংদী সদর মডেল থানা থেকে পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় তারা বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
 
গ্রেপ্তারকৃ নেতারা হলেন– পলাশ উপজেলার ছোট তারগাও গ্রামের বাসিন্দা জিনারদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি তারেক আকন্দ, পলাশ শিল্পাঞ্চল কলেজ শাখার সভাপতি গড়পাড়া গ্রামের জাহিদ হাসান, একই উপজেলার সোকান্দরদি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ ও উপজেলার সদস্য কাজীরচর গ্রামের মো.

রাজু মিয়া।

এ ছাড়া শিবপুর উপজেলার আশ্রাবপুর গির্জাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফাজায়েল ভূঁইয়া রয়েল, কমিটির সদস্য গির্জাপাড়ার ফরহাদ আফ্রাদ, মনোহরদী পৌরসভার চন্দনবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা শাখার সদস্য জাহিদ মোল্লা, সদর উপজেলার মাধবদীর পাঁচদোনা গ্রামের বাসিন্তা থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন মনির (২৮) ও পলাশ উপজেলা শাখার সদস্য জয়নগর গ্রামের মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ বিশেষ অভিযান চালায়। একপর্যায়ে রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় একটি গাড়ি আটকে তাদের গ্রেপ্তার করে। 

নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি মো. এমদাদুল হক বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ফেস্টুন, লিফলেট ও ব্যানার উদ্ধার করা হয়। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নরস দ গ র প ত র কর র সদস য উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

সুইস কোম্পানির নামে প্রতারণা

সুনামগঞ্জের কয়েকশ গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০-৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। তারা এ জন্য ব্যবহার করেছিল ‘অক্সট্রেড ডটকম’ নামে একটি কোম্পানির নাম। চক্রটি কোম্পানিটি সুইজারল্যান্ডে নিবন্ধিত বলে প্রচারও চালিয়েছিল।

বর্তমানে এ নামের ডোমেইনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। চক্রের সদস্যরা বিপুল অঙ্কের মুনাফা দেওয়ার নাম করে টাকা সংগ্রহ করে। এ জন্য তারা ব্যবসায়ী, ডাক্তার, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের টার্গেট করেছিল। তারা সবাই বিপুল অঙ্কের টাকা হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন। 

সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ডা. আশুতোষ দাস। সাবেক এই সিভিল সার্জনও প্রতারণার শিকার। তিনি নিজের ও আত্মীয়স্বজনের প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়েছিলেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অক্সট্রেড ডটকমের নামে অনলাইনে প্রচার চালানো হয়। সুনামগঞ্জে কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের হিরাঝিলের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, নরসিংদীর শিবচরের তরিকুল ইসলাম ও কুমিল্লার হুমায়ুন আহমেদ। তারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন মেটলাইফ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অভিজিৎ সরকারকে। প্রতারণার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর থেকে লাপাত্তা তিনি। শহরের নতুনপাড়ার বাসভবনে তাঁর স্ত্রী ছাড়া কেউ নেই। ঈদের পর থেকে মেজর ইকবাল রোডে অবস্থিত মেটলাইফের বিশাল অফিসে তালা ঝুলছে। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সে দুটি পলিসি আপডেট হয়েছিল ডা. আশুতোষ দাসের। তিনি সেখান থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা পান। পাশাপাশি দিরাইয়ে বিক্রি করা জমির টাকা, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শ্যালিকাসহ কয়েক আত্মীয়ের প্রায় দুই কোটি টাকা অক্সট্রেডে বিনিয়োগ করেন। ডা. আশুতোষ বলেন, ‘আমাদের বলেছিল, ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানি ব্যবসা করবে। ১ হাজার ডলারের বিপরীতে দিনে ৮ ডলার করে দিত। এই মেসেজ আসত গ্রাহকের মোবাইলে। অভিজিৎ সরকারের কাছে তা পাঠালে তিনি ক্যাশ দিতেন। ১৫-২০ দিন হয় মেসেজ এলেও টাকা ক্যাশ করা যায়নি। অভিজিৎসহ সংশ্লিষ্টদের ফোন নম্বরও বন্ধ।’ 

বিশ্বম্ভরপুরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার কাছ থেকে ডলারের মেসেজ পাঠিয়ে ক্যাশ করতেন অভিজিৎ সরকার। এ ছাড়া ‘বাইনান্স’ নামে আরেকটি হিসাবে গ্রাহক মেসেজ পাঠালেও তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ সাড়ে সাত লাখ টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার হিসাবে জমা করেছেন ৪ মার্চ। এরপর থেকেই লেনদেন বন্ধ। 

ওই ব্যবসায়ী জানান, প্রতি লাখে মাসিক মুনাফা ১৬ হাজার টাকা, ছয় মাস পরে একসঙ্গে জমা টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ এক লাখ থাকলে গ্রাহকদের মুনাফাসহ দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই কোম্পানি। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের সুনামগঞ্জ কার্যালয় বুধবার বিকেলেও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কোম্পানির বীমা প্রতিনিধি লিংকন তালুকদার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি নিজেও ভিক্ষুক হয়ে গেছি। বাড়ি-জমি সব বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন মরে যাওয়া ছাড়া পথ নেই।’ আরেক কর্মী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলির পাঁঠা। জমিজমা বিক্রি করে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। জাহাঙ্গীর ও তরিকুলের বাড়িতে ১০-১২ জন গিয়েও পাইনি।’

অভিজিতের শ্বশুর দীপু তালুকদারের ভাষ্য, সুমন, সাইফুল, শাহজাহান সুনামগঞ্জে এই কোম্পানি নিয়ে আসেন। অভিজিৎ যুক্ত হতে চাননি। ১০-১৫ দিন বোঝানোর পর অভিজিৎ অ্যাকাউন্ট খোলেন। ৫০০ ডলারের অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি হলেও সাইফুল, সুমনেরা জোর করে ৫ হাজার ডলারের অ্যাকাউন্ট করান। অভিজিতের নাম ব্যবহার করে এরা ব্যবসা করেছে। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের জিএম লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ সুনামগঞ্জ সদর থানায়ও এমন কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ