লম্বা সময় পর পাকিস্তান জাতীয় দলে ফিরেছেন খুশদীল শাহ। পাকিস্তানের হয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবেন তিনি। আছেন ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও। যে কারণে গ্লোবাল সুপার লিগ (জিএসএল) থেকে রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে থাকা স্পিন অলরাউন্ডার খুশদীল বিপিএল শেষ না করেই দেশে ফিরে গেছেন। 

তার চলে যাওয়া রংপুর রাইডার্সের জন্য বড় ধাক্কা হয়েছে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল। তার মতে, খুশদীলের জায়গা নিতে পারেননি কেউ। মিডল বা লোয়ার মিডলে ওই জায়গা পূরণ করতে টিম ডেভিডকে আনলেও তা কাজে দেয়নি। 

টানা ৮ ম্যাচে জয়ের পর হারের পর্ব শুরু হয় রংপুরের। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে এলিমিনেটর ম্যাচ দিয়ে টানা ৫টিতে হেরেছে রংপুর। আসর থেকে বিদায় নেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে আশরাফুল বলেন, ‘খুশদীল শাহ চলে যাওয়াতে বড় একটা সেটব্যাক হয়েছে। গ্লোবাল টি-২-০তে কঠিন উইকেটে তিনি ফিফটি করেছিলেন (৪৭ বলে ৫৮)। ৫টা (৪টা হবে) ছয় মেরেছিলেন। আমরা ১১৭ রান করেছিলাম। খুশদীল যাওয়ার পরে দল হিসেবে আমরা মোমেন্টাম হারিয়েছি, ওই জায়গা কেউ নিতে পারেননি। লোকাল প্লেয়ারদের কেউ খেলতে পারেনি।’

খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে রংপুর রাইডার্স। ১৫ রানে ৫ উইকেট হারায় তারা। সৌম্য সরকার ইনিংসের দ্বিতীয় বলে রান আউট হওয়ায় দল মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর রাইডার্সের কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল। তবে খুলনার স্পিনের বিপক্ষে আগ্রাসী মানসিকতা দেখাতে হতো বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

আশরাফুল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের আরেকটু বিগ হার্ট নিয়ে খেলতে হতো। প্রথম ওভারে কেউ আউট হতেই পারে। এরপর যেভাবে দল পিছিয়ে পড়েছে, আমার মনে হয়, আরেকটু আগ্রাসী খেলাই যেত। পরপর ৫ ওভার তারা স্পিন বোলিং করেছে। আরেকটু আগ্রাসী খেললে হয়তো উইকেট আরেকটা পড়ে যেত। কিন্তু আমরা আগ্রাসী খেলিনি বলেই প্রতিপক্ষ চড়ে বসেছিল। গ্লোবাল লিগে জেতার কারণ ছিল খুশদীলের ওই ব্যাটিংটা। আশা করেছিলাম সাইফউদ্দিন, শেখ মেহেদীদের একজন হয়তো ওমন একটা ইনিংস খেলবে।’ 

রংপুরের টানা ৮ জয়ে খুশদীলের সঙ্গে ভালো ভূমিকা ছিল ইফতিখার আহমেদের। পাকিস্তানি এই অলরাউন্ডার রংপুরের পরাজিত হওয়া ম্যাচেও ভালো ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু জেমস ভিন্সি, আন্দ্রে রাসেল ও টিম ডেভিড আসায় তাকে বেঞ্চে বসিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে আশরাফুল জানান, রাসেল, ডেভিডদের মতো বড় নাম আসলে তাদের জায়গা দেওয়া স্বাভাবিক। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল আশর ফ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কার্যকর করহার কমানোর যৌক্তিক পদক্ষেপ দরকার

বিগত পাঁচ বছরে কোম্পানি করের হার ৩৫ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কি কোম্পানির কর দায় কমেছে? আমাদের দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো অনলাইনে খোঁজ নিলে জানতে পারে, করহার ২৫ শতাংশ। কিন্তু আসলেই কি কার্যকর করহার সেটি? হিসাব কষে আমরা যখন বলি, কার্যকর করহার ৮০ শতাংশ, তখন অনেকেই তা বিশ্বাস করতে চান না।

বর্তমানে কোম্পানির ক্ষেত্রে কার্যকর করহার বৃদ্ধির মূল কারণ দুটি। প্রথমত, উৎসে করের হার অতিরিক্ত বেশি। দ্বিতীয়ত, কিছু খরচ বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন এবং নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা।

এ মুহূর্তে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ খুবই দরকার। তাই এখনই সময় জনস্বার্থে কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনা। বিশেষ করে কার্যকর করহার হ্রাসের যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া।

শুরুতে উৎসে করের কারণে কার্যকর করহার বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা যাক। একটি কোম্পানি কাঁচামাল আমদানি করলে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে ওই কাঁচামাল দিয়ে প্রস্তুতকৃত পণ্য যদি কোনো উৎসে কর কর্তনকারী পরিবেশক বা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়, তাহলে আবারও ৫ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আমদানি মূল্য ৫০ টাকা। তার ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর(এআইটি) প্রদান করা হয়, যার পরিমাণ ২.৫০ টাকা। অন্যান্য খরচ ৩০ টাকা। পণ্যটি ১০০ টাকায় বিক্রি করা হলো। ১০০ টাকায় বিক্রির ওপর আবার ৫ টাকা উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে, অর্থাৎ সর্বমোট ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়েছে। কোম্পানির লাভ হলো ২০ টাকা। এই ২০ টাকার ওপর ২৫ শতাংশ কর হার প্রয়োগ করলে কর দাঁড়ায় ৫ টাকা। কিন্তু কর দেওয়া হয়েছে ৭.৫০ টাকার বেশি। ২০ টাকার ওপর ৭.৫০ টাকার বেশি কর দিলে কার্যকর করহার দাঁড়ায় ৩৭.৫০ শতাংশ। যেসব কোম্পানি ২০ শতাংশ লাভ করতে পারে না, তাদের কার্যকর করহার আরও বেশি।

একটি পরিবেশক কোম্পানি সাধারণত ৫–৮ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকে। বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী, এই কমিশনের ওপর ১০ শতাংশ কর কর্তন করা হয়। ধরা যাক, কোনো এক বছর ৮ কোটি টাকা কমিশনের ওপর ৮০ লাখ টাকা কর কর্তন করা হলো। ওই বছর পরিবেশক কোম্পানির খরচ হলো ৭ কোটি টাকা। আর নিট লাভ এক কোটি টাকা। এই ১ কোটি টাকার ওপর ২৫ শতাংশ করহার প্রয়োগ করলে প্রদেয় কর দাঁড়ায় ২৫ লাখ টাকা। অথচ আগে কেটে রাখা ৮০ লাখ টাকা বিবেচনায় নেওয়া হলে ১ কোটি টাকার লাভের ওপর কার্যকর করহার দাঁড়ায় ৮০ শতাংশ। যেসব কোম্পানি সাড়ে ১২ শতাংশ লাভ করতে পারে না, তাদের কার্যকর করহার আরও বেশি।

কয়েক বছর ধরে উৎসে কর কিছুটা কমানো হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কার্যকর করহার বৃদ্ধি পায় আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন ও নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণের কারণে। আয়কর আইনের ধারা ৫৫ মোতাবেক ব্যবসার খরচ পরিশোধে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্র ব্যতীত পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীকে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হয়। উৎসে কর কর্তন ও পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী যে কর রিটার্ন দাখিল করেছেন, তার প্রমাণপত্র (পিএসআর) সংগ্রহে রাখতে হয়।

ধরা যাক, কোনো কোম্পানি এক কোটি টাকার বিল ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করল। উৎসে করও দিল, কিন্তু পিএসআর নিল না। সে ক্ষেত্রে ওই কোম্পানিকে ভবিষ্যতে ১ কোটি টাকার ওপর ২৫ শতাংশ বা ২৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত কর দিতে হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় অনেক পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী নগদে লেনদেন করেন। উৎসে কর ও পিএসআর দিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি কর সঠিকভাবে পরিচালনা করতে চায়, তাদের খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন না করলে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত উৎসে কর দিতে হয়। পিএসআর না থাকলে আরও অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর দিতে হবে।

আয়কর

সম্পর্কিত নিবন্ধ