চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৭১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। ক্যাটাগরিভিত্তিক ভুল তথ্য শনাক্ত ছাড়াও গেল মাসে দুইটি পরিসংখ্যান এবং একটি ফ্যাক্ট ফাইলও প্রকাশ করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (১১৪) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৪২ শতাংশ। এছাড়া, জাতীয় বিষয়ে ৬৭টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২৯টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৮টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ১৫টি, শিক্ষা বিষয়ে নয়টি, প্রতারণা বিষয়ে ছয়টি, খেলাধুলা বিষয়ে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে জানুয়ারিতে। 

এসব ঘটনায় তথ্যভিত্তিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি, ১১৫টি। এছাড়া ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৪টি এবং ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল ছিল ১০২টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৭৫টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৫টি এবং বিকৃত হিসেবে ৩১টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবু্কে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যার হিসেবে যা ২২৫টি। এছাড়া, এক্সে ৫৬টি, টিকটকে ৪৪টি, ইউটিউবে ৪২টি, ইন্সটাগ্রামে ১৯টি, থ্রেডসে অন্তত একটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।  

গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল জানুয়ারিতে এই ধারাবাহিকতা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে সাতটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া নয়টি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল কিছু মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। জানুয়ারিতে এমন ৩২টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ২৫টি ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৩টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুলতথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে।

জানুয়ারিতে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও। এর মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য তার পক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। অন্যদিকে ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল তথ্যগুলো তার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে।

সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে তিনটি (সবগুলোই বিপক্ষে), জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে নিয়ে দুইটি (৫০ শতাংশ বিপক্ষে) এবং নাহিদ ইসলাম ও আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে একটি করে (দুটিই পক্ষে) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার গেল মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (১৬)। এর মধ্যে দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ। এই সময়ে দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ১০টি ভুল (সবগুলোই বিপক্ষে) তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান এই সময়ের মধ্যে দুইটি ভুল তথ্যের (সবগুলোই বিপক্ষে) শিকার হয়েছেন।

গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে গত মাসে ছয়টি অপতথ্য (সবগুলোই দলটির পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে) শনাক্ত করা হয়েছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এই সময়ে ২০টি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। রিউমর স্ক্যানার দেখেছে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য তার পক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। অন্যদিকে মাত্র ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল তথ্যগুলো তার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। আওয়ামী লীগের দুই অঙ্গ ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে জড়িয়ে এই সময়ে যথাক্রমে তিনটি (৬৭ শতাংশ বিপক্ষে) ও চারটি (সবগুলোই পক্ষে) করে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) জড়িয়ে গত মাসে তিনটি (সবগুলোই বিপক্ষে) ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এই সময়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুইটি (সবগুলোই বিপক্ষে), ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে চারটি (২৫ শতাংশ বিপক্ষে) এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে তিনটি (৬৭ শতাংশ বিপক্ষে) ভুল তথ্যের প্রচার করা হয়েছে।

ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে দুইটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা মেট্রোপলিটনের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীকে জড়িয়ে একটিসহ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো চারটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জড়িয়ে দুইটি ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল জানুয়ারিতে।

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। এই সংগঠনকে জড়িয়ে পরবর্তী মাসগুলোয় নিয়মিতই ভুয়া তথ্যের প্রচার লক্ষ্য করা গেছে। জানুয়ারিতেও সংগঠনটিকে জড়িয়ে সাতটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে একই সময়ে ১৮টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে পাঁচটি, সারজিস আলমকে নিয়ে সাতটি, খান তালাত মাহমুদ রাফি ও নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে দুইটি করে এবং হাসিব আল ইসলাম ও তিলোত্তমা ইতিকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

গেল মাসের ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, গেল কয়েক বছরে শনাক্ত হয়েছে এমন ভুল তথ্যগুলো আবার ফিরে আসছে। ফেসবুকে মেমোরিজ বলে একটি অপশন রয়েছে যা পূর্বের বছরগুলোর নির্দিষ্ট দিনের অ্যাক্টিভিটি আপনাকে জানাবে৷ ফিরে আসা এসব ভুল তথ্যের ক্ষেত্রে এই মেমোরিস অপশন ভূমিকা রাখছে৷ দেখা গেছে, পূর্বের বছর জানুয়ারিতে একটি ভুল তথ্য প্রচার হলে পরের বছর ঠিক একই সময়েই তা আবার ছড়ায়। অথচ, এই ভুল তথ্যটি ইতোমধ্যেই শনাক্ত হয়েছে৷ রিউমর স্ক্যানার গত মাসে এমন ১৪টি ভুল তথ্য নতুন করে প্রচার হতে দেখেছে যেগুলো কিনা পূর্বেই শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে বিভিন্ন অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ১০টি মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে জানুয়ারির শুরুর দিকে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি গণমাধ্যমেও ভুল তথ্যের প্রচার দেখা গেছে। এই ঘটনায় রিউমর স্ক্যানার অন্তত ১০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। গেল মাসে একক কোনো ঘটনায় এটিই সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা। এছাড়া, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্লাটফর্ম এটিমের আহ্বানে ১৮ জানুয়ারির ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে পাঁচটি এবং ২৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৩টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ২০টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৩৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে জাতীয় দৈনিক যমুনা টিভি’র নাম সবচেয়ে বেশি (৭) ব্যবহার করা হয়েছে। যমুনা’র পর আরেক জাতীয় গণমাধ্যম আমার দেশ এর নাম বেশি (৫) ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার৷

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র উমর স ক য ন র দ সরক র র গত ম স দলট র ইসল ম ঘটন য সবচ য

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে ২৭১টি ভুয়া তথ্য প্রচারিত: রিউমর স্ক্যানার

ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের ২৭১টি প্রমাণ মিলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এসব ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে সংস্থাটি। ক্যাটাগরিভিত্তিক ভুল তথ্য শনাক্ত ছাড়াও বিদায়ী মাসে দুইটি পরিসংখ্যান এবং একটি ফ্যাক্ট ফাইলও প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

রোববার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাটি জানায়, গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ১১৪টি ভুল তথ্যে ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে। যা মোট ভুল তথ্যের ৪২ শতাংশ। এছাড়াও জাতীয় বিষয়ে ৬৭টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২৯টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৮টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ১৫টি, শিক্ষা বিষয়ে নয়টি, প্রতারণা বিষয়ে ছয়টি, খেলাধুলা বিষয়ে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে।

ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাটি জানায়, এসব ঘটনায় তথ্যভিত্তিক ভুলই ছিল ১১৫টি। ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৪টি এবং ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল ছিল ১০২টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৭৫টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৫টি এবং বিকৃত হিসেবে ৩১টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

রিউমার স্ক্যানারের  অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। যা সংখ্যার হিসেবে ২২৫টি। এছাড়াও এক্সে ৫৬টি, টিকটকে ৪৪টি, ইউটিউবে ৪২টি, ইন্সটাগ্রামে ১৯টি, থ্রেডসে অন্তত একটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে।

রিউমার স্ক্যানার জানায়, ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমার স্ক্যানার।

ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাটি জানায়, গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল জানুয়ারিতে এই ধারাবাহিকতা দেখেছে রিউমার স্ক্যানার। সংস্থাটি জানায়, গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে সাতটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। নয়টি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি কয়েক মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। জানুয়ারিতে এমন ৩২টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এর মধ্যে ২৫টি ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রিউমার স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৩টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুল তথ্যগুলোর ধরন বুঝতে এগুলোকে রিউমার স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে। 

সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে, ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। জানুয়ারিতে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও। সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নাহিদ ইসলাম ও আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার।

রিউমার স্ক্যানার গেল মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ। এই সময়ে দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) জড়িয়ে ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমার স্ক্যানার। এই সময়ে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা।

ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাটি জানায়, গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে গত মাসে অপতথ্য শনাক্ত করেছে। তবে এসব অপতথ্য  তাদের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে বলে রিউমার স্ক্যানার শনাক্ত করেছে।

ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাটি জানায়, ভুল তথ্যের রোষাণল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে দুইটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমার স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা মেট্রোপলিটনের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীকে জড়িয়ে একটিসহ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো চারটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এর বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জড়িয়ে দুইটি ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল জানুয়ারিতে।

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়কে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। 

এ সংগঠনকে ও নেতাদের জড়িয়ে নিয়মিতই ভুয়া তথ্যের প্রচার শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৩টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ২০টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৩৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব প্রচার মিথ্যা ও ভুল তথ্যের বলে সনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।

সূত্র: বাসস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে ২৭১টি ভুয়া তথ্য প্রচারিত: রিউমর স্ক্যানার