ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ব‌লে‌ছেন, “ভূমি অধিগ্রহণে সামাজিক বানায়নের গাছ যতদূর সম্ভব মেয়াদপূর্ণ হলেই না কেটে এর মূল্য নির্ধারণ করে উপকার ভোগীদের দেওয়া যেতে পারে। সড়কের পাশের গাছগুলো রোপন, পরিচর্যায়  তাদের একটা ভূমিকা  থাকে।  গাছগুলো তাদের উপকারে লাগে বেশি। স্থানীয়রা আন্তরিক না হলে এসব গাছ রক্ষা করা কঠিন।”

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের  সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ১৪৫তম কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “ঢাকা শহর বাঁচাতে পাতাল রেল অত্যন্ত প্রয়োজন। পাতাল রেল ঢাকার যানজট হ্রাস করে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।”

আরো পড়ুন:

নাটোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসিল্যান্ড অফিস ঘেরাও 

জমি চলে যায় অন্যের নামে
দিয়ারা জরিপের বিরুদ্ধে একাট্টা চর আষাড়িয়াদহ

তিনি বলেন, “জনস্বার্থে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে ভূমি মালিকরা যেনো ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার না হন। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কেউ ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত না হন।”

সভায় ছয়টি প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এর মধ্যে ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ উপজেলার "গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে’র আওতায় ৩টি সড়ক প্রশস্তকরণের নিমিত্তে মোট ৮টি মৌজার ২৭.

৮০৯৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ।

রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন "মাদানী অ্যাভিনিউ হতে বালু নদী পর্যন্ত প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী হতে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ও নাওড়া মৌজায় বিভিন্ন দাগে ০.৯৮৯৬১ একর ভূমি অধিগ্রহণ। ইতিপূর্ব এই প্রকল্পে ৩৪.৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের বাস্তবায়নাধীন "ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় ‘আফতাবনগর ও বাড্ডা পাতাল মেট্রোরেল স্টেশনের Entry-Exit,Fair Exit,Ventilation Duct ও Line-5 : Southern Route এর সাথে সংযোগ করিডর নির্মাণ' এর জন্য ২.৪৪৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ।

‘সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প। ইতিমধ্যে ৩০.৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।  খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত  ০.১৮২৩৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

বিশ্বমানের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গাজীপুর সদরে ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন  Accelerating and strengthening skill  for economic transformation(ASSET)' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৪.৪৯১ একর ভূমি অধীগ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, কৃষি সচিব ড. মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, রাজউক এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকরা। এছাড়া প্রত্যাশিত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র একর ভ ম

এছাড়াও পড়ুন:

সুইস কোম্পানির নামে প্রতারণা

সুনামগঞ্জের কয়েকশ গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০-৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। তারা এ জন্য ব্যবহার করেছিল ‘অক্সট্রেড ডটকম’ নামে একটি কোম্পানির নাম। চক্রটি কোম্পানিটি সুইজারল্যান্ডে নিবন্ধিত বলে প্রচারও চালিয়েছিল।

বর্তমানে এ নামের ডোমেইনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। চক্রের সদস্যরা বিপুল অঙ্কের মুনাফা দেওয়ার নাম করে টাকা সংগ্রহ করে। এ জন্য তারা ব্যবসায়ী, ডাক্তার, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের টার্গেট করেছিল। তারা সবাই বিপুল অঙ্কের টাকা হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন। 

সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ডা. আশুতোষ দাস। সাবেক এই সিভিল সার্জনও প্রতারণার শিকার। তিনি নিজের ও আত্মীয়স্বজনের প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়েছিলেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অক্সট্রেড ডটকমের নামে অনলাইনে প্রচার চালানো হয়। সুনামগঞ্জে কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের হিরাঝিলের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, নরসিংদীর শিবচরের তরিকুল ইসলাম ও কুমিল্লার হুমায়ুন আহমেদ। তারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন মেটলাইফ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অভিজিৎ সরকারকে। প্রতারণার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর থেকে লাপাত্তা তিনি। শহরের নতুনপাড়ার বাসভবনে তাঁর স্ত্রী ছাড়া কেউ নেই। ঈদের পর থেকে মেজর ইকবাল রোডে অবস্থিত মেটলাইফের বিশাল অফিসে তালা ঝুলছে। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সে দুটি পলিসি আপডেট হয়েছিল ডা. আশুতোষ দাসের। তিনি সেখান থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা পান। পাশাপাশি দিরাইয়ে বিক্রি করা জমির টাকা, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শ্যালিকাসহ কয়েক আত্মীয়ের প্রায় দুই কোটি টাকা অক্সট্রেডে বিনিয়োগ করেন। ডা. আশুতোষ বলেন, ‘আমাদের বলেছিল, ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানি ব্যবসা করবে। ১ হাজার ডলারের বিপরীতে দিনে ৮ ডলার করে দিত। এই মেসেজ আসত গ্রাহকের মোবাইলে। অভিজিৎ সরকারের কাছে তা পাঠালে তিনি ক্যাশ দিতেন। ১৫-২০ দিন হয় মেসেজ এলেও টাকা ক্যাশ করা যায়নি। অভিজিৎসহ সংশ্লিষ্টদের ফোন নম্বরও বন্ধ।’ 

বিশ্বম্ভরপুরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার কাছ থেকে ডলারের মেসেজ পাঠিয়ে ক্যাশ করতেন অভিজিৎ সরকার। এ ছাড়া ‘বাইনান্স’ নামে আরেকটি হিসাবে গ্রাহক মেসেজ পাঠালেও তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ সাড়ে সাত লাখ টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার হিসাবে জমা করেছেন ৪ মার্চ। এরপর থেকেই লেনদেন বন্ধ। 

ওই ব্যবসায়ী জানান, প্রতি লাখে মাসিক মুনাফা ১৬ হাজার টাকা, ছয় মাস পরে একসঙ্গে জমা টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ এক লাখ থাকলে গ্রাহকদের মুনাফাসহ দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই কোম্পানি। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের সুনামগঞ্জ কার্যালয় বুধবার বিকেলেও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কোম্পানির বীমা প্রতিনিধি লিংকন তালুকদার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি নিজেও ভিক্ষুক হয়ে গেছি। বাড়ি-জমি সব বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন মরে যাওয়া ছাড়া পথ নেই।’ আরেক কর্মী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলির পাঁঠা। জমিজমা বিক্রি করে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। জাহাঙ্গীর ও তরিকুলের বাড়িতে ১০-১২ জন গিয়েও পাইনি।’

অভিজিতের শ্বশুর দীপু তালুকদারের ভাষ্য, সুমন, সাইফুল, শাহজাহান সুনামগঞ্জে এই কোম্পানি নিয়ে আসেন। অভিজিৎ যুক্ত হতে চাননি। ১০-১৫ দিন বোঝানোর পর অভিজিৎ অ্যাকাউন্ট খোলেন। ৫০০ ডলারের অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি হলেও সাইফুল, সুমনেরা জোর করে ৫ হাজার ডলারের অ্যাকাউন্ট করান। অভিজিতের নাম ব্যবহার করে এরা ব্যবসা করেছে। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের জিএম লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ সুনামগঞ্জ সদর থানায়ও এমন কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ