স্থানীয়রা আন্তরিক না হলে সড়কের পাশের গাছ রক্ষা করা কঠিন: ভূমি উপদেষ্টা
Published: 3rd, February 2025 GMT
ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, “ভূমি অধিগ্রহণে সামাজিক বানায়নের গাছ যতদূর সম্ভব মেয়াদপূর্ণ হলেই না কেটে এর মূল্য নির্ধারণ করে উপকার ভোগীদের দেওয়া যেতে পারে। সড়কের পাশের গাছগুলো রোপন, পরিচর্যায় তাদের একটা ভূমিকা থাকে। গাছগুলো তাদের উপকারে লাগে বেশি। স্থানীয়রা আন্তরিক না হলে এসব গাছ রক্ষা করা কঠিন।”
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ১৪৫তম কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “ঢাকা শহর বাঁচাতে পাতাল রেল অত্যন্ত প্রয়োজন। পাতাল রেল ঢাকার যানজট হ্রাস করে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।”
আরো পড়ুন:
নাটোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসিল্যান্ড অফিস ঘেরাও
জমি চলে যায় অন্যের নামে
দিয়ারা জরিপের বিরুদ্ধে একাট্টা চর আষাড়িয়াদহ
তিনি বলেন, “জনস্বার্থে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে ভূমি মালিকরা যেনো ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার না হন। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কেউ ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত না হন।”
সভায় ছয়টি প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এর মধ্যে ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ উপজেলার "গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে’র আওতায় ৩টি সড়ক প্রশস্তকরণের নিমিত্তে মোট ৮টি মৌজার ২৭.
রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন "মাদানী অ্যাভিনিউ হতে বালু নদী পর্যন্ত প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী হতে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ও নাওড়া মৌজায় বিভিন্ন দাগে ০.৯৮৯৬১ একর ভূমি অধিগ্রহণ। ইতিপূর্ব এই প্রকল্পে ৩৪.৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের বাস্তবায়নাধীন "ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় ‘আফতাবনগর ও বাড্ডা পাতাল মেট্রোরেল স্টেশনের Entry-Exit,Fair Exit,Ventilation Duct ও Line-5 : Southern Route এর সাথে সংযোগ করিডর নির্মাণ' এর জন্য ২.৪৪৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ।
‘সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প। ইতিমধ্যে ৩০.৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত ০.১৮২৩৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
বিশ্বমানের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গাজীপুর সদরে ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন Accelerating and strengthening skill for economic transformation(ASSET)' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৪.৪৯১ একর ভূমি অধীগ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, কৃষি সচিব ড. মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, রাজউক এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকরা। এছাড়া প্রত্যাশিত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র একর ভ ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ মে থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় তিনটি দল ও সংগঠন পৃথক জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি ঘিরে ছুটির তিন দিনে রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।
১ মে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। পরদিন ২ মে শুক্রবার আওয়ামী লীগের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। ৩ মে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বেলা দুইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এই সমাবেশ আয়োজনে যুক্ত রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। ঢাকা মহানগরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সমাবেশে অংশ নেবেন।
নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সমাবেশটি অনেক বড় করার। আশা করি, আপনারা সেদিন উপস্থিত থাকলে দেখতে পাবেন।’
পরদিন শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এই কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারও দাবি করা হবে।
২১ এপ্রিল থেকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিলের মতো কর্মসূচি করছে এনসিপি। শুক্রবারের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।
এনসিপির সমাবেশের পরদিন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের দিকে অনেকের দৃষ্টি। এক মাস ধরে সংগঠনটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদনসহ কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও আঞ্চলিক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টায় মহাসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এই মহাসমাবেশে তাঁদের মুখ্য দাবি হবে মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। কারণ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলাগুলোকে পুঁজি করে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও একই কাজ করতে পারে। তাই মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে তাঁদের মুখ্য দাবি। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।
উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের ঘটনা ঘটে।
আগামী ৫ মে সোমবার সরকারি কর্মদিবস। সপ্তাহের মাঝখানে রাজধানীতে সমাবেশ করলে বড় ধরনের জনদুর্ভোগে সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সে জন্য হেফাজতে ইসলাম ছুটির দিনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া হেফাজত ৫ মে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করে না। এ ধরনের দিবস পালন ইসলামের নীতিবিরোধী। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ৩ মে মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংগঠনের নেতাদের নামে থাকা অতীতের মামলা-মোকদ্দমাগুলো প্রত্যাহারে সরকারের ওপর চাপ তৈরি, একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য করারও একটি লক্ষ্য রয়েছে।