হামলায় বিএনপি নেতার তিন আঙুল বিচ্ছিন্ন
Published: 3rd, February 2025 GMT
বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক বিরোধের জেরে হামলায় এক বিএনপি নেতার হাতের তিন আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রোববার বিকেলে উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়ির সামনে হামলার শিকার হন আবুল হোসেন ফুয়াদ জমাদ্দার (৪৫) নামের ওই ব্যক্তি। তাঁর স্বজনরা জানিয়েছেন, প্রতিবেশী ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মাওলা জমাদ্দারের নেতৃত্বে ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফুয়াদ জমাদ্দারকে কুপিয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।
আহত ফুয়াদ জমাদ্দার পাথরঘাটার কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত হালিম জমাদ্দারের ছেলে। তিনি কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁর ওপর হামলায় নেতৃত্বদানকারী গোলাম মাওলা জমাদ্দার ছাত্রলীগের কাকচিড়া সাংগঠনিক থানার প্রচার সম্পাদক পদে আছেন।
ঘটনার প্রতাক্ষদর্শী ফুয়াদের চাচাতো বোন শাহানা বেগমের ভাষ্য, গোলাম মাওলা ও ফুয়াদ প্রতিবেশী। রোববার আসরের নামাজের কিছুক্ষণ আগে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় ফুয়াদকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় গোলাম মাওলা। আধা ঘণ্টা পর বাড়ির সামনের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ফুয়াদ বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় গোলাম মাওলার নেতৃত্বে ৭-৮ জন মিলে ফুয়াদের ওপর হামলা করে। তারা ধারালো রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে।
শাহানা বেগম তখন গোলাম মাওলাকে জাপটে ধরে ফুয়াদকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তাদের চাপাতি ও বঁটি দায়ের কোপে ফুয়াদের হাতের তিনটি আঙুল ঘটনাস্থলেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়– জানিয়ে শাহানা বলেন, এ সময় তাঁর শরীরের ৮-১০টি জায়গায় কোপের চিহ্ন দেখতে পান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গোলাম মাওলাকে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তাঁর বেশিরভাগ স্বজনই ঘটনার পর থেকে পলাতক বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। গোলাম মাওলার ফুফু তাসলিমা বেগম বলেন, ‘তাঁর ভাই ইউসুফ জমাদ্দার (গোলাম মাওলার বাবা) ও ফুয়াদ জমাদ্দারের মধ্যে টাকা ও জমিসংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তিন-চার দিন আগে ইউসুফ ও তাঁর ছোট ছেলে অনিক জমাদ্দারকে মারধর করেন আবুল হোসেন জমাদ্দার। এ ঘটনার জেরে আবুলের ওপর হামলা হতে পারে বলে তাঁর ধারণা।’
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মো.
এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গোলাম মাওলার বাবা ইউসুফ জমাদ্দার বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আবুল হোসেনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আটকে পুলিশের অভিযান চলছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত কেউ মামলা করেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ঘটন র প এ সময় ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, অন্য পণ্যের দামও বাড়তি
রাজশাহীর বাজারে সবজিসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাজারে সয়াবিন তেলেরও সংকট রয়েছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। যদিও রমজান মাস শুরুর আগেও বাজারে স্বস্তি ছিল। রোববার রাজশাহী নগরের সাহেববাজার কাঁচাবাজার ও বিনোদপুর কাঁচাবাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে কাঁচা সবজির সংকট রয়েছে। বেগুন, ফুলকপি, আলু, মরিচ, পেঁয়াজের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। এ ছাড়া মুরগির দামও রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কাঁচা সবজির সরবরাহ কিছুটা কমেছে, এ কারণে কিছুটা বেড়েছে। তবে গত বছর রমজান মাসের তুলনায় বাজার এবার অনেকটা ক্রেতার জন্য ভালো।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজা শুরু হওয়ার পর ৩৫ টাকা কেজির বেগুন ৫০ টাকা, ৩০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা, ১৬ থেকে ২০ টাকা কেজির আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, ২০ টাকার পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭ থেকে ১০ টাকার প্রতিটি ফুলকপি ২০ টাকা, ১০ টাকার বাঁধাকপি ২০ টাকায়, ১০ টাকা আঁটির লালশাক ও পালংশাক ১৫ টাকায়, ২৫ টাকার লাউ ৫০ টাকায় উঠেছে। প্রকারভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা হালির লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ টাকায়। বাজারে টমেটো ও শসার দাম কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া বাজারে নতুন আসা সবজির মধ্যে পটোল ১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে রমজানের আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে। এখন সেই মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। বাজারে ডিমের দামও হালিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। দাম বেড়ে লাল ডিম ৪০ ও সাদা ডিম ৩৬ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজার ঘুরে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাজারে সরকার নির্ধারিত খোলা সয়াবিন ১৫৭ টাকা লিটারে বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। এ ছাড়া ১ লিটার ও ২ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে। সরকার নির্ধারিত বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে তা ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
নগরের বিনোদপুর কাঁচাবাজার থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন এলাকার বেশির ভাগ ক্রেতা শিক্ষক, শিক্ষার্থী। একটি সবজির দোকান থেকে বেগুন কিনতে এসে শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেন বলেন, দুইটা বেগুনের দামই পড়ল ১৮ টাকা। কয়েকজন মিলে আজকে ইফতারের আয়োজন করেছেন। আগে ১৮ টাকায় আধা কেজি বেগুন কেনা যেত। রমজানে এসে দাম বেড়ে গেছে।
একই বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসেও হোঁচট খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সাবিনা খাতুন নামের এক ক্রেতা বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম রমজানের আগে ১৬০ বা ১৭০ টাকায় ছিল। এখন সেই মুরগি কিনতে হচ্ছে বাড়তি দাম দিয়ে। ওই বাজারের ব্যবসায়ী রায়হান আলী বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। নতুন সবজিও এখনো আসছে না। এ কারণে দাম বেড়েছে। তবে গত রমজানের চেয়ে অনেক কম।
নগরের সাহেববাজার কাঁচাবাজার থেকে ইফতারের আগে বাজার করছিলেন নগরের আলুপট্টি এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী। লেবুর দোকানে দাঁড়িয়ে দামদর করছিলেন তিনি। রমজান বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। এ ছাড়া মুরগির দামও চড়া। লেবুর কাছে তো ভেড়াও যায় না। তখন লেবু ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, উৎপাদন এলাকা থেকে লেবু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে দাম বেশি।
সয়াবিনের পাঁচ লিটারের বোতল না পেয়ে কয়েকটা দুই লিটারের বোতল কিনলেন হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দোকানগুলোতে লিখেই দেওয়া হয়েছে, অমুক কোম্পানির পাঁচ লিটারের তেল নেই। বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান আছে। তাই বেশি সয়াবিন তেল কিনতে হয়েছে। ব্যবসায়ী রতন আলী বলেন, রোজা শুরুর আগে থেকেই বাজারে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। কোম্পানিগুলোই তেল দিচ্ছে না। বাজারে সংকট রয়েছে। তাঁদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে দাম একটু বেশি।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলার সহকারী পরিচালক বিপুল বিশ্বাসের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি করা হয়েছে। অন্য পণ্যগুলো মোটামুটিভাবে নাগালের মধ্যে। তবে কয়েক দিন কিছু সবজির দাম বেড়েছে। সরবরাহ কমবেশি হওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। বাজার মনিটরিং জোরদার করে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।