শরীয়তপুরে হাতুড়ি নিয়ে সাংবাদিকের ওপর হামলা, আহত ৪
Published: 3rd, February 2025 GMT
শরীয়তপুরে দৈনিক সমকাল পত্রিকার সাংবাদিক সোহাগ খান সুজনের উপর হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়েছে। এ সময় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে বাঁচাতে এলে আরো তিন সাংবাদিক আহত হয়েছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তার ওপর হামলা করা হয়।
আহত অন্য তিন সাংবাদিক হলেন, নিউজ২৪ টেলিভিশন ও জাগো নিউজটুয়েন্টিফোর ডটকমের শরীয়তপুর প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস ও অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডিডটকম ও দেশ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আকাশ। গুরুতর আহত সোহাগ খান সুজনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
সেনাবাহিনীকে নিয়ে আনন্দবাজারের সংবাদ মিথ্যা: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
গ্রিন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগে নবীনবরণ অনুষ্ঠিত
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। এ বিষয়ে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এদিকে, স্থানীয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নুরুজ্জামান শেখ ওই চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে নাম সর্বস্ব অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করে। এ বিষয়টি নিয়ে রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নুরুজ্জামানের সঙ্গে সোহাগ খান সুজনসহ বেশ কয়েকজনের সংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ সোমবার দুপুরে সোহাগ খান সুজন তাঁর অফিসে যাওয়ার পথে নুরুজ্জামান শেখ, তাঁর ভাই শামীম শেখ, পালং মেডিকেল সেন্টারের মালিক ইব্রাহিম মোল্লা, তার ছেলে জিহাদ মোল্লাসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে ছুরি, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তাকে বাঁচাতে অন্য তিন সাংবাদিক এগিয়ে এলে তারাও আহত হয়।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। গুরুতর আহত সুজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর অন্য তিন সাংবাদিক প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন জানান, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তার প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন ক্লিনিক ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান শেখ। আজ অফিসে যাওয়ার পথে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা নুরুজ্জামান শেখ ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিযেছে। তিনি এই হামলার বিচার দাবি করেন।
সাংবাদিক বিধান মজুমদার জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নুরুজ্জামান শেখসহ ১০ থেকে ১২ জন সুজনের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিন সাংবাদিক বাঁচাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আরটিভির শরীয়তপুর প্রতিনিধি আবুল হোসেন জানান, সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শরীয়তপুর পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, হামলা ঘটনা শুনে তিনি হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/আকাশ/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স হ গ খ ন স জন ব যবস র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের অবস্থা ছিল ধ্বসংপ্রাপ্ত, যেন আরেকটি গাজা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ এবং সেসময় দেশের পরিস্থিতি কেমন ছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘শেখ হাসিনা যে ক্ষতি করেছেন, তা বিশাল। এটি একটি সম্পূর্ণ ধ্বসংপ্রাপ্ত দেশ ছিল, যেন আরেকটি গাজা। তবে এখানে ভবন নয়, পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস করা হয়েছে।’’
সাক্ষাৎকারটি সোমবার (১০ মার্চ) প্রকাশিত হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, শেখ হাসিনার পতন এবং তার স্বৈরাচারী কাঠামো ধসে পড়ার পর ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব নেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আরো পড়ুন:
চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজড করার নির্দেশ দিল সরকার
পতিত স্বৈরাচার নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে: প্রধান উপদেষ্টা
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুরোধেই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন। তিনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন পুরো বাংলাদেশ ছিল রক্তে রঞ্জিত। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে গেছেন। এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত একটি দেশ, আরেকটি গাজার মতো। তবে গাজার মতো সেখানে ভবন ধ্বংস করা হয়নি বরং পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধসে পড়েছিল।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা ব্যাপক নৃশংসতা ঘটান। তবে বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতার প্রতিশোধের ভয়ে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন।
শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হাসিনার শাসনামলে কোনো সরকার ছিল না, ছিল দস্যুদের একটি পরিবার। সরকারপ্রধানের যে কোনো আদেশই তখন সম্পন্ন করা হতো। বিষয়টা এরকম যে, কেউ সমস্যা তৈরি করছে? আমরা তাদের উধাও করে দেব।
এ ছাড়াও নির্বাচন করতে চান? আমরা নিশ্চিত করব, আপনি যেন সব আসনে জয়ী হন। আপনি টাকা চান? এই যে ব্যাংক থেকে এক মিলিয়ন ডলার ঋণ, যা আপনাকে কখনোই ফেরত দিতে হবে না।
ভারতে হাসিনার আশ্রয় নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভারত তাকে আশ্রয় দিলে তা সহ্য করা হবে, কিন্তু ‘তিনি আমাদের করা সবকিছু বাতিল করার চেষ্টা করতে ভারতকে তার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া, বিপজ্জনক। এটি দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলে’।
গার্ডিয়ান বলছে, বাংলাদেশে হাসিনার শাসনামল ছিল স্বৈরাচার, সহিংসতা এবং দুর্নীতির অভিযোগে ভরপুর। জুলাই ও আগস্ট মাসে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর সমাপ্তি ঘটে। জাতিসংঘের মতে, ওই সময় বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।
ঢাকা/এনএইচ