মতিউরের মেয়ে ঈপ্সিতার আয়কর নথি জব্দসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
Published: 3rd, February 2025 GMT
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমানের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতার আয়কর নথি জব্দসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
নিষেধাজ্ঞা আবেদনে বলা হয়, ফারজানা রহমানের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা মূল্যমানের সম্পত্তির তথ্য গোপন করার এবং জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাহার ৩৯৩ টাকার মূল্যমানের সম্পত্তি অর্জন করে ভোগ দখলে রাখার অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে মামলা করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন। তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি ফারজানা রহমান ইঙ্গিতার বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক। এ ছাড়া পৃথক আবেদনে ঈপ্সিতার ২০১৩-১৪ সাল থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত মূল আয়কর নথি জব্দের আবেদন করে দুদক। আদালত তা মঞ্জুর করেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কার্যকর করহার কমানোর যৌক্তিক পদক্ষেপ দরকার
বিগত পাঁচ বছরে কোম্পানি করের হার ৩৫ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কি কোম্পানির কর দায় কমেছে? আমাদের দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো অনলাইনে খোঁজ নিলে জানতে পারে, করহার ২৫ শতাংশ। কিন্তু আসলেই কি কার্যকর করহার সেটি? হিসাব কষে আমরা যখন বলি, কার্যকর করহার ৮০ শতাংশ, তখন অনেকেই তা বিশ্বাস করতে চান না।
বর্তমানে কোম্পানির ক্ষেত্রে কার্যকর করহার বৃদ্ধির মূল কারণ দুটি। প্রথমত, উৎসে করের হার অতিরিক্ত বেশি। দ্বিতীয়ত, কিছু খরচ বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন এবং নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা।
এ মুহূর্তে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ খুবই দরকার। তাই এখনই সময় জনস্বার্থে কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনা। বিশেষ করে কার্যকর করহার হ্রাসের যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া।শুরুতে উৎসে করের কারণে কার্যকর করহার বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা যাক। একটি কোম্পানি কাঁচামাল আমদানি করলে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে ওই কাঁচামাল দিয়ে প্রস্তুতকৃত পণ্য যদি কোনো উৎসে কর কর্তনকারী পরিবেশক বা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়, তাহলে আবারও ৫ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করা হয়।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আমদানি মূল্য ৫০ টাকা। তার ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর(এআইটি) প্রদান করা হয়, যার পরিমাণ ২.৫০ টাকা। অন্যান্য খরচ ৩০ টাকা। পণ্যটি ১০০ টাকায় বিক্রি করা হলো। ১০০ টাকায় বিক্রির ওপর আবার ৫ টাকা উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে, অর্থাৎ সর্বমোট ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়েছে। কোম্পানির লাভ হলো ২০ টাকা। এই ২০ টাকার ওপর ২৫ শতাংশ কর হার প্রয়োগ করলে কর দাঁড়ায় ৫ টাকা। কিন্তু কর দেওয়া হয়েছে ৭.৫০ টাকার বেশি। ২০ টাকার ওপর ৭.৫০ টাকার বেশি কর দিলে কার্যকর করহার দাঁড়ায় ৩৭.৫০ শতাংশ। যেসব কোম্পানি ২০ শতাংশ লাভ করতে পারে না, তাদের কার্যকর করহার আরও বেশি।
একটি পরিবেশক কোম্পানি সাধারণত ৫–৮ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকে। বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী, এই কমিশনের ওপর ১০ শতাংশ কর কর্তন করা হয়। ধরা যাক, কোনো এক বছর ৮ কোটি টাকা কমিশনের ওপর ৮০ লাখ টাকা কর কর্তন করা হলো। ওই বছর পরিবেশক কোম্পানির খরচ হলো ৭ কোটি টাকা। আর নিট লাভ এক কোটি টাকা। এই ১ কোটি টাকার ওপর ২৫ শতাংশ করহার প্রয়োগ করলে প্রদেয় কর দাঁড়ায় ২৫ লাখ টাকা। অথচ আগে কেটে রাখা ৮০ লাখ টাকা বিবেচনায় নেওয়া হলে ১ কোটি টাকার লাভের ওপর কার্যকর করহার দাঁড়ায় ৮০ শতাংশ। যেসব কোম্পানি সাড়ে ১২ শতাংশ লাভ করতে পারে না, তাদের কার্যকর করহার আরও বেশি।
কয়েক বছর ধরে উৎসে কর কিছুটা কমানো হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কার্যকর করহার বৃদ্ধি পায় আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন ও নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণের কারণে। আয়কর আইনের ধারা ৫৫ মোতাবেক ব্যবসার খরচ পরিশোধে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্র ব্যতীত পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীকে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হয়। উৎসে কর কর্তন ও পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী যে কর রিটার্ন দাখিল করেছেন, তার প্রমাণপত্র (পিএসআর) সংগ্রহে রাখতে হয়।
ধরা যাক, কোনো কোম্পানি এক কোটি টাকার বিল ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করল। উৎসে করও দিল, কিন্তু পিএসআর নিল না। সে ক্ষেত্রে ওই কোম্পানিকে ভবিষ্যতে ১ কোটি টাকার ওপর ২৫ শতাংশ বা ২৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত কর দিতে হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় অনেক পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী নগদে লেনদেন করেন। উৎসে কর ও পিএসআর দিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি কর সঠিকভাবে পরিচালনা করতে চায়, তাদের খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন না করলে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত উৎসে কর দিতে হয়। পিএসআর না থাকলে আরও অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর দিতে হবে।
আয়কর