জবিতে বীণাপাণির আরাধনায় নারী পুরোহিত
Published: 3rd, February 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগে নারী পুরোহিতের মাধ্যমে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর প্রথমবারের মত এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল বিভাগটির শিক্ষার্থীরা, এবারও অব্যাহত রেখেছেন তারা।
গতবারের মতো পূজার পৌরোহিত্য করেছেন ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সমাদৃতা ভৌমিক। প্রথাগত ব্রাহ্মণ পুরুষদের পরিবর্তে নারী পুরোহিতের পৌরোহিত্যে সরস্বতী বন্দনা নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবন-১ এর সামনে ইংরেজি বিভাগের পূজা মণ্ডপে এ চিত্র দেখা যায়।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিভাগের ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী মহাশ্বেতা রায় মিতু বলেন, “আমাদের পূজার অন্যতম উদ্দেশ্য বিদ্যার দেবীর আরাধনা। বিদ্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোন ভেদাভেদ নেই। তাই পূজার ক্ষেত্রেও থাকা উচিত নয়।”
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়।
সাদা রাজহাঁস এ দেবীর বাহন। ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যার দেবীর মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যা পাঠের হাতেখড়ির আয়োজন করেন।
এবার জগন্নাথে ৩৭টি মণ্ডপে হচ্ছে সরস্বতী পূজা। প্রতি বছরের মত এবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ছাড়া অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে পূজা উদযাপন করছেন।
সে হিসেবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩টি বিভাগ, দুইটি ইনস্টিটিউট, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং চারুকলা অনুষদের তিনটি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগে পূজা হচ্ছে।
পূজা উপলক্ষে আলপনা ও আলোকসজ্জায় রঙিন হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শান্ত চত্বর, শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের নিচতলা, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কলাভবন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে নিজ নিজ বিভাগের মণ্ডপ সাজিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমাক চিনো না, মাদারগঞ্জের আন্ডারগ্রাউন্ডটা আমিই নিয়ন্ত্রণ করি’
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম খানের কণ্ঠসদৃশ কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের অডিওতে ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত উপজেলা শহরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তাঁকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতে শোনা যায়। আজ বুধবার সকালে অডিওটি ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ব্যবসায়ীর নাম মো. মনোহর। তিনি উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা শহরের মুঠোফোন ব্যবসায়ী। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে।
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কথোপকথনে চাঁদা দাবির বিষয়ে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অডিওটি যাচাই করাও সম্ভব হয়নি।
ছড়িয়ে পড়া অডিওতে ছাত্রদল নেতার কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তিকে ব্যবসায়ীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি যদি মেল হও, তাহলে তুমি মদ্দা মানুষের মতো বুক ফুলিয়ে চলবা। যেদিক মন চাই, সেই দিক যাবা। তুমাক নিয়ে থানাত যামু, এসপি অফিস যামু, ডিবি অফিস যামু। ব্যাক (সব) মিলতাল করমু। তুমি সম্ভবত আমাক চিনো না। হয়তো আমার সম্পর্কে আইডিয়া নাই। মাদারগঞ্জের আন্ডারগ্রাউন্ডটা আমিই নিয়ন্ত্রণ করি।’
এ সময় ব্যবসায়ী ওই নেতার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম? সাক্ষাতে কথা হবে। আর দুই (দুই লাখ টাকা) কালকে সকালবেলায় দিয়ে দিবা। শুনো, এখানে কোনো কথা হবে না, কোনো প্যাঁচাল হবে না, সাক্ষাতে এসে ডাইরেক্ট দিয়ে দিবা। তুমি তোমার সুবিধামতো জায়গায় থাকবা, আমাক ফোন দিবা। আমি যামু, সাক্ষাতে চা খামু, কথা কমু।’
এ সময় ব্যবসায়ী কথা বলতে উদ্যত হলে থামিয়ে দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘শুনো, আর কোনো কথা বলবা না। তুমি তো বুঝছ, তোমাকে আমি কোনডা থেকে কী করবার পারছি? ৫০০ পোলাপানের মধ্য থেকে তোমাকে আমি কিন্তু ছোঁ মেরে নিয়ে এসে পড়ছি। তখন কেউ কথা কইবার পারছে?’ এ সময় ব্যবসায়ী বলেন, ‘তা ঠিক আছে। সেটা আমি স্বীকার করি।’ ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘তাহলে? উনতি (ওখানে) কত বড় বড় নেতারা আছিল। আমার কাছে ওল্লের (ওদের)...টাইম নাই। শুনো, সাক্ষাতে কথা হবো, পরে চিনবা। বিভিন্ন জায়গা থেকে খোঁজ নিবা। আমি কিন্তু কারোরে হিসাব করি না, ওল্লের টাইম নাই। আমি আমার মতো চলি আগে থেকেই।’
এরপর ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘আরেকটা কথা মনে রাইখ, দু-এক দিনের মধ্যে আরও একজনকে ফুল টাইম বিছানায় ফালায়ে দিমু। এটা মনে রেখো, দেখবা এবং শুনবাই।’ এ সময় ব্যবসায়ীকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাইজান, কালকে আল্লাহ যদি বাঁচায়ে না রাখে, তাহলে তো সমস্যা। আমার এক জায়গায় পিটুনি দিছে। ভাই, কিডনির সাইডে।’ এরপর ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘চিকিৎসা করাবাম। ঢাকাত বড় চিকিৎসক আছে। একদম ফ্রি চিকিৎসা করাই দিমু। সমস্যা নাই।’
কথোপকথনের শেষের দিকে ব্যবসায়ীর উদ্দেশে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তাহলে এক. কথা সাক্ষাতে হবে, দুই. কালকে (চাঁদা) রেডি কইরা দিয়া দিবা। এর আগে আওয়ামী লীগের আমলে যা করছ, তা-তো করছই। এখন থেকে বেশি করে করবা। ঠিক আছে না, দুই ভাই...ভরে সবকিছু করমু। তাহলে কালকে ১০টা–১১টার দিকে ফোন দিয়ো। তোমাদের ওখানে সাইট আছে, আমি যামু, ফোন দিয়ো।’ শেষে ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘তুমি, আমি, আল্লাহ—তিনজনের বাইরে চারজন যেন এসব না জানে। না হলে কিন্তু একদম কাউন্টার অ্যাটাক হবে।’
জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদারগঞ্জে গ্রুপিং রাজনীতি চলে। অডিওটি আমিও শুনেছি। ওই কণ্ঠ আমার না। গ্রুপিংয়ের কারণে ফেসবুকে আমার ছবি ব্যবহার করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও না ধরায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোশারফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অডিওটি আমি কিছুক্ষণ আগেই পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপর যদি ওই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’