‘ঔঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে, বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে’ এই মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে কুড়িগ্রামে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজায় মেতেছেন সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীরা। 

দিনটি বাঙালি হিন্দু সমাজে বসন্ত উৎসব হিসেবে পালিত হওয়ায় আবির রঙে ছেয়ে গেছে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে । 

সোমবার সকালে জেলা শহরের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, সরস্বতী পূজা ঘিরে দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্রদান, সংগীত প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠ, প্রসাদ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বাসাবাড়িগুলোতেও পূজা হচ্ছে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর। 

সনাতন পঞ্জিকা মতে, এ বছর সরস্বতী পূজার তিথি ২ দিন পড়েছে। অনেকে গতকাল রোববার বিকেল থেকে মেতেছেন জ্ঞানেশ্বরীর আরাধনায়।

দেবী সরস্বতী বিদ্যা ও জ্ঞান দান করেন বলে তাকে জ্ঞানেশ্বরী, সংগীত ও কলা দান করেন বলে বাগ্বদেবী হিসেবেও পূজা করা হয়ে থাকে। 

প্রতি বছর বাংলা বর্ষপঞ্জির মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সনাতন ধর্মের বিশ্বাসমতে, দেবী এই দিন পৃথিবীতে তার বাহন রাজহংসে চড়ে আসেন। ভক্তদের দান করেন জ্ঞান, সংগীত ও কলা বিদ্যা। শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে এই পূজার বিধি পালন করেন। প্রচলিত আছে, সরস্বতী পূজা না হওয়া পর্যন্ত কেউ কুল (বরই) খান না।

কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নন্দিতা দাস নিঝুম বলেন, মায়ের কাছে প্রার্থনা করলাম সবার অশুভ বুদ্ধির বিনাশ ঘটুক, উদয় হোক শুভ বুদ্ধির।

কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্নেহা সরকার বলেন, আজ বিদ্যার দেবীর পূজাতে খুব সকালে স্নান করে হলুদ শাড়ি পরে আসছি। পূজা শেষে বছরের প্রথম বরই খেলাম। খুব ভালো লাগছে।

জেলা শহরের পুরোহিত নিতু গোস্বামী বলেন, সরস্বতী পূজার দিনটি শ্রীপঞ্চমীর দিন হিসেবেই খ্যাত। এইদিন উষালগ্ন থেকে সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা হয়। যারা নতুন শিক্ষার্থী আছেন তারা মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি ও হাতেখড়ির মাধ্যমে পড়ালেখা শুরু করেন। আর যারা অধ্যয়নরত আছে, মায়ের কাছে বই-খাতা নিবেদন করায় আজ তাদের জন্য পড়ালেখা নিষিদ্ধ।

তিনি আরো বলেন, দিনটি বসন্ত পঞ্চমী হিসেবে বেশি পরিচিত। এদিন প্রকৃতির বিশেষ সামগ্রী প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে অভ্র-আবির, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম, পলাশ ফুল ও যব বা গমের শিষ এবং বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল অন্যতম।

কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী রবি বোস বলেন, এ বছর জেলায় ৫ হাজারের অধিক অস্থায়ী মণ্ডপ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন কর ন

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা

গাজীপুরের টঙ্গীতে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ২৭ মিনিটে প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত শেষ হয়। আখেরি মোনাজাতের পরপরই ইজতেমার বয়ান মঞ্চ থেকে ২০২৬ সালের দুই ধাপের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয়।

ঘোষণা মতে, ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপ এবং ৯ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার বেলা ১২টা ২৭ মিনিট মোনাজাত শেষে মওলানা যোবায়ের সাহেব এ ঘোষণা দেন। 

তিনি বলেন, “শুরায়ি নেজামের অধীনে ওলামায়ে কেরামে তত্ত্বাবধানে ২০২৬ সালের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ২, ৩ ও ৪ জানুয়ারি। ৪ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ৯, ১০ ও ১১ জানুয়ারি।”

এদিকে দ্বিতীয় ধাপে ১৯ মিনিটব্যাপী চলা মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। এ সময় লাখো মুসল্লির আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনিতে তুরাগতীর মুখরিত হয়ে ওঠে। মোনাজাত শেষে বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়েছেন মুসল্লি ও সাধারণ মানুষ। 

এর আগে, বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ভাই ফারুক সাহেব। এরপর হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। এ সময় যারা চিল্লার জন্য বের হবেন, তারা জামাতে গিয়ে কী আমল করবেন এবং মহল্লায় যারা এখান থেকে ফিরে যাচ্ছেন তারা নিজ এলাকায় গিয়ে কী আমল করবেন তার দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করা হয়। 

এদিকে, আখেরি মোনাজাত শেষে সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা ও সফরে বের হওয়া মুসুল্লিদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতে টঙ্গী স্টেশনে ১১টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি বাদ মাগরিব টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম জমায়েত শুরু হয়। এবার ইজতেমার প্রথম পর্ব হয়েছে দুই ধাপে। এর মধ্যে, ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হয় প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মানুষ। এরপর ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি হয় দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এই ধাপে অংশগ্রহণ করেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মানুষ। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

ঢাকা/রেজাউল/ইমন

সম্পর্কিত নিবন্ধ