ট্রাক আটকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ছাত্রলীগ নেতার
Published: 3rd, February 2025 GMT
নবীগঞ্জে মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের বালুর ট্রাক আটকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ছাত্রলীগের এক নেতা ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। রোববারের ওই ঘটনায় প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ অংশে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ করছে মা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কাজের জন্য বরাদ্দকৃত বালু আনা হয় জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ থেকে। ঘটনার দিন এ কাজের জন্য কুশিয়ারা নদী থেকে উত্তোলন করা সাত ট্রাক বালু আসছিল নবীগঞ্জে। ঘটনার দিন সকালে সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি বাইপাস মহাসড়ক পার হয়ে কামারগাঁওয়ের মুচিবাড়ি এলাকায় পৌঁছলে ট্রাকগুলো আটক করেন উপজেলার ৪ নম্বর দীঘলবাক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হক ও তাঁর লোকজন। এ সময় তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে নবীগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় সেগুলো উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগে মা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক সাঈদ আলী জানান, সাসেক প্রজেক্টের এশিয়ান হাইওয়ে সিক্স লাইনের উন্নয়ন কাজের জন্য সাতটি ট্রাকে করে বরাদ্দের ওই বালু আনা হচ্ছিল। মুচিবাড়ির ব্রিজ-সংলগ্ন রাস্তায় ট্রাকগুলো আটকে ১০ লাখ টাকার জন্য চাপ দেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তাঁর ৭ থেকে ৮ অনুসারী। তাদের মধ্যে ছিলেন– স্বস্তিপুর গ্রামের জগলু মিয়া, কামারগাঁওয়ের মুকিদ মিয়া ও শিপন মিয়া, বহরমপুরের রউফ মিয়া এবং নগরকান্দির জয়নাল মিয়া। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা হক ও তাঁর লোকজন ট্রাকের সঙ্গে থাকা লোকজনকে মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুর করে বলেও জানান সাঈদ আলী।
এ ব্যাপারে দীঘলবাক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হক জানান, চাঁদা আদায়ের জন্য তারা ট্রাকগুলো আটক করেননি। নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত বালু বহন করায় সেগুলো আটক করা হয়।
মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান জানান, বৈধভাবে মহাসড়কের কাজের জন্য বালু আনা হয়েছে। একটি চক্র অনেক দিন ধরেই বালুর ট্রাক আটকে চাঁদাবাজি করে আসছে। রোববার ওই চক্রের সদস্যরা তাঁর প্রতিষ্ঠানের বালুর ট্রাক আটকে চাঁদা দাবি করলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, এ বিষয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ট্রাকগুলো উদ্ধারের পর গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ র জন য ট র ক আটক
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ মে থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় তিনটি দল ও সংগঠন পৃথক জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি ঘিরে ছুটির তিন দিনে রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।
১ মে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। পরদিন ২ মে শুক্রবার আওয়ামী লীগের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। ৩ মে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বেলা দুইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এই সমাবেশ আয়োজনে যুক্ত রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। ঢাকা মহানগরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সমাবেশে অংশ নেবেন।
নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সমাবেশটি অনেক বড় করার। আশা করি, আপনারা সেদিন উপস্থিত থাকলে দেখতে পাবেন।’
পরদিন শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এই কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারও দাবি করা হবে।
২১ এপ্রিল থেকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিলের মতো কর্মসূচি করছে এনসিপি। শুক্রবারের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।
এনসিপির সমাবেশের পরদিন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের দিকে অনেকের দৃষ্টি। এক মাস ধরে সংগঠনটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদনসহ কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও আঞ্চলিক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টায় মহাসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এই মহাসমাবেশে তাঁদের মুখ্য দাবি হবে মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। কারণ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলাগুলোকে পুঁজি করে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও একই কাজ করতে পারে। তাই মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে তাঁদের মুখ্য দাবি। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।
উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের ঘটনা ঘটে।
আগামী ৫ মে সোমবার সরকারি কর্মদিবস। সপ্তাহের মাঝখানে রাজধানীতে সমাবেশ করলে বড় ধরনের জনদুর্ভোগে সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সে জন্য হেফাজতে ইসলাম ছুটির দিনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া হেফাজত ৫ মে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করে না। এ ধরনের দিবস পালন ইসলামের নীতিবিরোধী। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ৩ মে মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংগঠনের নেতাদের নামে থাকা অতীতের মামলা-মোকদ্দমাগুলো প্রত্যাহারে সরকারের ওপর চাপ তৈরি, একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য করারও একটি লক্ষ্য রয়েছে।