পিঁড়ির আঘাতে ঘরজামাই নিহত, স্ত্রী-শাশুড়ি আটক
Published: 3rd, February 2025 GMT
ঢাকার নবাবগঞ্জে স্ত্রীর পিঁড়ির আঘাতে নিহত হয়েছেন আব্দুস সালাম (৫০) নামে এক ব্যক্তি। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার গালিমপুর ইউনিয়নের মিয়াহাটি গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে সালামের স্ত্রী সানজিদা আক্তার জোসনা (৩২) ও তাঁর মা রওশনারা বেগমকে (৬০) আটক করেছে পুলিশ।
নিহত আব্দুস সালাম (৫০) পাশের দোহার উপজেলার কাটাখালী এলাকার নিয়ামত সুকানির ছেলে। তিনি নবাবগঞ্জের মিয়াহাটি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।
এলাকাবাসীর বরাতে পুলিশ জানায়, ছেলেকে বিদ্যালয়ে নেওয়ার বিষয় নিয়ে রোববার বিকেলে স্ত্রী জোসনার সঙ্গে সালামের তর্কাতর্কি হয়; যা কিছুক্ষণের মধ্যে ঝগড়ায় রূপ নেয়। এ সময় সালাম স্ত্রীর চুল ধরে মারতে যান। জবাবে কাছে থাকা পিঁড়ি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে বসেন জোসনা। এতে অসুস্থ হয়ে সালাম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এ সময় স্ত্রী জোসনা প্রতিবেশী মিনহাজ ও রাতুলের সহায়তায় সালামকে গুরুতর অবস্থায় নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুস সালামকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংবাদ পেয়ে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে সালামের স্ত্রী সানজিদা আক্তার ওরফে জোসনা ও শাশুড়ি রওশনারা বেগমকে আটক করে পুলিশ।
গালিমপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়সাল হাসান বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় নিহত ব্যক্তির মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্নের উল্লেখ করা হয়েছে। আটক জোসনা দাবি করেছেন, তিনি পিঁড়ি দিয়ে স্বামীকে আঘাত করেননি। তবে আঘাত করতে হাতে পিঁড়ি নিয়েছিলেন। কিন্তু এতে তাঁর মা রওশনারা বাধা দেন।
এ বিষয়ে ঢাকার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (দোহার সার্কেল) আশরাফুল আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই ধারণা করছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে রক্তের দাগ
ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি সংক্রান্ত সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক খবরগুলো বড় বেদনার। স্বাভাবিক সময়েই অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। শহীদ রওশনের মায়ের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। ২০১৮ সালের সেই জুলাইয়ের সকালে তিনি তাঁর ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন স্বপ্ন নিয়ে। ফিরে পেয়েছিলেন রক্তাক্ত দেহ। একটি বেপরোয়া বাসের চাকায় শুধু একটি প্রাণই নয়, একটি পরিবারের সব স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়কে গড়ে ২২ জন প্রাণ হারান। প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একটি পরিবারের অশ্রু আর অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গত দশকে আমরা হারিয়েছি ৭৫ হাজার প্রাণ, যা একটি ছোট শহরের জনসংখ্যার সমান।
আমাদের সড়কগুলো যেন মৃত্যুর মিছিল চলার উন্মুক্ত প্রান্তর। প্রতি ১০০টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৪০ শতাংশ চালক বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালায়। এর পেছনে রয়েছে জটিল নেটওয়ার্ক– দুর্নীতি, অদক্ষতা। সর্বোপরি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়।
২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদ। কিন্তু ছয় বছর পর আমরা কতটুকু এগিয়েছি? ডিজিটাল লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু হয়েছে, কিন্তু অনেক আবেদনকারী এখনও
দালালের কারণে হয়রানির শিকার। আইন হয়েছে, কিন্তু প্রয়োগ দুর্বল।
আমাদের সমস্যা শুধু প্রযুক্তিগত নয়। এটি মূলত সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয়ের ছাপ। আমরা যেখানে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছি, সেখানে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ পিছিয়ে পড়ছে।
সরকারের নতুন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন সামাজিক বিবেককে জাগ্রত করা। প্রত্যেক চালক যেন বুঝতে পারে, তার হাতে শুধু স্টিয়ারিং নয়, অসংখ্য প্রাণের দায়িত্বও রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে গাড়ি পরিদর্শন– সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু সড়ক নয়, আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত যানবাহন ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।
২০১৮ সালের সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছিল– পরিবর্তন সম্ভব। আজ আমাদের প্রয়োজন সেই চেতনাকে আবার জাগিয়ে তোলা। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য, প্রতিটি দুর্ঘটনা অপ্রয়োজনীয়। রওশনের মায়ের মতো চোখের জল যেন আর কোনো মাকে ফেলতে না হয়। সড়কগুলো যেন আর না হয় কবরস্থান। এটি শুধু একটি স্বপ্ন নয়, অধিকার। আসুন,সবাই মিলে গড়ে তুলি এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হবে অতীতে ঘটে যাওয়া করুণ ইতিহাস, যা বর্তমানে নেই।
মো. রাইসুল ইসলাম: স্বেচ্ছাসেবক, চট্টগ্রাম