বিশ্ব সংগীতের সবচেয়ে বড় পুরস্কারের আসর ৬৭তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। এবার এই আসরের পুরস্কারের জন্য ১১ শাখায় মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিয়ন্সে। তবে পুরস্কারের দিন বিয়ন্সে কারিশমা দেখাতে পারেনি। ‘অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার’ এবং সেরা ‘কান্ট্রি অ্যালবামের’ দুই পুরস্কার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। 

তবে তবে বিয়ন্সে রেকর্ড করেছেন ‘বেস্ট কান্ট্রি অ্যালবাম’ শাখায় পুরস্কার পেয়ে। আর এর মধ্য দিয়ে এই প্রথমবার কোনো কৃষাঙ্গ নারী সংগীতশিল্পী হিসেবে ‘বেস্ট কান্ট্রি অ্যালবামের’ পুরস্কার জিতলেন তিনি।

পুরস্কার প্রাপ্তিতে বিয়ন্সেকে ছাড়িয়ে শীর্ষস্থান নিয়েছেন গায়ক কেনড্রিক লামার। যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ এই র‍্যাপার ‘নট লাইক আস’ গানের জন্য ‘রেকর্ড অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতেছেন। একই গানের জন্য লামারের ঝুড়িতে গেছে ‘সং অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারও।

সব মিলিয়ে এবারের গ্র্যামিতে সর্বোচ্চ পাঁচ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন লামার।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্রিপ্টোডটকম অ্যারিনায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় জমকালো ওই আসর বসে। এবারের গ্র্যামি সঞ্চালনা করেছেন কমেডিয়ান ট্রেভর নোয়া।

‘রেকর্ড অব দ্য ইয়ার’, ‘বেস্ট র‍্যাপ পারফরমেন্স’, ‘বেস্ট র‍্যাপ সং’, ‘বেস্ট মিউজিক ভিডিও’, এবং ‘সং অব দ্য ইয়ারের’ পুরস্কার হাতে নিয়ে লামার হাতে বলেন ‘দারুণ, ভালো লাগছে, আবার কেমন লাগছে বলতে পারছি না ঠিক করে’।

দুহাতে পাঁচটি গ্র্যামির ট্রফি আগলে ধরে তিনি বলেন, “এই পুরস্কার আমার আগুনে পোড়া শহরটির জন্য।”

গ্র্যামির গুরুত্বপূর্ণ তিন শাখার পুরস্কার ‘সং অব দ্য ইয়ার’, ‘অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার’, ‘রেকর্ড অব দ্য ইয়ার’ এর মধ্যে একটি কেবল বিয়ন্সের দখলে থাকল।

তবে দেড় দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের গায়িকা টেইলর সুইফট তার সহশিল্পী বিয়ন্সেকে পরাজিত করে ‘অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার’ জিতে নিয়েছিলেন গ্র্যামির আসরে, এবার ওই গায়িকা বিয়ন্সের হাতেই এই শাখার পুরস্কার তুলে দিলেন সুইফট।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র কর ড র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যুত্থানের শহীদদের জীবনীগ্রন্থ তৈরি করেছে জামায়াত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শহীদদের জীবনী স্মারক গ্রন্থ তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামী। ১০ খণ্ডের এই স্মারকগ্রন্থের আড়াই হাজার পৃষ্ঠায় রয়েছে ৭৭০ শহীদদের নাম-পরিচয়, ছবি, জীবনের বর্ণনা। কীভাবে কোথায় তাঁরা শহীদ হয়েছেন, তা তুলে ধরা হয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীর জবানীতে।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদদের জীবনী স্মারকগ্রন্থ উন্মোচন করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। এতে দেশের ১০টি অঞ্চল থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যরা যোগ দেন। রংপুর থেকে শহীদ আবু সাইদের বাবা গাজিউর রহমান রংপুর থেকে সংযুক্ত হয়ে বলেন, শেখ হাসিনা গুম খুন করেছে। ‘আয়নাঘর’ তৈরি করেছে। এর বিচার হতে হবে। 

মিরপুরে শহীদ নাসিব রায়হানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংস্কার আর বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা আবারও আন্দোলনে নামব। আর ফ্যাসিস্ট সরকার চায় না। 

ধানমন্ডিতে ১৯ জুলাই শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা বলেন, এত ত্যাগের পরও ভারতের খবরদারি থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। দ্রুত নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছে অনেকে। শহিদরা কী তা চেয়েছিলেন? তারা চেয়েছিল ব্যাংক লুট হবে না, দুর্নীতি হবে না, গুম খুন হবে না। এই দেশটা যাতে শান্তিতে থাকে। শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে ভাষণ নয় বরং দেশে আসুন। সরাসরি কথা বলতে আসুন।’ 

যাত্রীবাড়িতে শহীদ ইমাম হাসান তাইনের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, আপনারা দেখেছেন কতটা নির্মমভাবে মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। এত হত্যার পর কীভাবে বিচার না করে ভোটের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে কেউ কেউ? ভোট হবে তবে বিচারের আগে নয়। গণহত্যার বিচার আগে এরপর ভোট।

সরকারি হিসাবে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটানো অভ্যুত্থানে অন্তত ৮৬৫ জন জীবন দিয়েছেন। তাঁদের নাম গেজেটে রয়েছে। 

জামায়াত আমির বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় স্মারকগ্রন্থ তৈরি করা হয়েছে। তবে পরিপূর্ণ কাজ হয়নি। শহীদ পরিবার, আহতরা বিভিন্নভাবে হতাশ। এজন্য অসমাপ্ত রেখেই স্মারকের প্রাথমিক পর্ব প্রকাশ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের তালিকা হয়নি, ভাষা আন্দোলনের শহীদদেরও পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। চব্বিশের শহীদের তালিকাও থমকে আছে। তাই জামায়াত উদ্যোগ নিয়েছে। 

যাদের নাম এখনও আসেনি তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দিলে বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পৃথিবীর প্রধান সকল ভাষায় অনুবাদ করা হবে, যাতে বিশ্ববাসী আমাদের বীরদের সম্পর্কে জানতে পারে। তাঁদের কৃতিত্ব ও গৌরবগাঁথা যেন অনুপ্রাণিত করতে পারে। শহীদের জীবনী জামায়াতের নয়, জাতীয় সম্পত্তি। আরও সুন্দর, নিখুঁতভাবে জীবনী তুলে আনতে সবাই এগিয়ে আসুক। 

ঢাকা ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে একযোগে শহীদদের জীবনীর সংকলন প্রকাশ করা হয়। শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের জাতির ইতিহাস বিস্মৃতির ও বিকৃতির। 

শেখ হাসিনার আমলে শুধু জামায়াত নয় সাধারণ মানুষসহ সকলেই মজলুম ছিলেন জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরাও ফ্যাসিবাদের থাবা থেকে মুক্ত ছিলেন না। নারীদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। এদের রুচি কত নিম্নস্তরের ছিল এখান থেকে উপলব্ধি করা যায়। সেই শ্বাসরুদ্ধকর বন্দিদশার অবস্থা থেকে শহীদরা মুক্ত করেছে, জামায়াত কৃতজ্ঞ। 

জামায়াত আমির বলেন, শহীদরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। এখন দায়িত্ব আমাদের ঘাড়ে।  কিন্তু কিছু লোক নাগরিকদের শান্তি কেড়ে নেওয়ার অপকর্মে লিপ্ত। অপকর্ম যারা করে, তারা এটাকে পেশা হিসেবে বিবেচনা করে। বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অপকর্ম মেহেরবানি করে কেউ করবেন না। যদি করেন শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, তাদের রক্তকে অপমান করা হবে। আর যারা জীবিত শহীদ; পঙ্গু হয়ে আছেন তারা ভীষণ কষ্ট পাবেন। অভিশাপ দেবেন। মজলুম দেশবাসী অভিশাপ দেবে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থাকলেও বিএনপি এবং এবি পার্টির কাউকে দেখা যায়নি। জামায়াতের নায়েবে মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি কিন্তু ভাতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করা হয়। শেখ হাসিনা মাঝেমাঝে বলেন, আমার কি অপরাধ। এর চেয়ে জঘন্য আর কি হতে পারে।

বক্তৃতা করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পররওয়ার, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ