সিরামিক পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারসহ তিন দাবি বিসিএমইএর
Published: 3rd, February 2025 GMT
সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারসহ তিনটি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। জ্বালানি গ্যাসের দাম পুনরায় না বাড়িয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছে বিসিএমইএ।
বিসিএমইএর প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) মইনুল ইসলাম বলেছেন, “সিরামিক অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আমদানি বিকল্প শিল্প খাত। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রপ্তানি এবং আমদানি বিকল্প পণ্য হিসেবে দেশে ইতোমধ্যেই ৮০টির বেশি সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে যেমন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, তেমনই ধীরে ধীরে আমদানি হ্রাস পাওয়ায় বছরে অন্তত ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হচ্ছে।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বর্তমানে সকল দেশীয় টাইলস উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক এবং দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে। সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য এখন আর বিলাসদ্রব্য হিসেবে বিবেচিত হয় না, ভবন নির্মাণে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সাধারণ লোক স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এটি সরকারের ঘোষিত ‘সকলের জন্য স্যানিটেশন’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই, দেশীয় টাইলস উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।”
বিসিএমইএর প্রেসিডেন্ট বলেন, “গ্যাসনির্ভর এই শিল্পে ক্রমাগত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া প্রধান সমস্যা। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য প্রায় ৩৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ২০২৩ সালে শিল্প খাতে প্রায় ১৫০ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কেজি-প্রতি সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন ব্যয় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, বিদেশি পণ্যের সাথে মূল্য প্রতিযোগিতার কারণে দেশীয় তৈরি পণ্যের মূল্য ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি করা যায় না। ফলে, প্রতিযোগী বাজারে উৎপাদককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।”
তিনি বলেন, “সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, সরকার আরেক দফায় গ্যাসের মূল্য গড়ে ১৫২ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে, যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিরামিক শিল্প। এতে দেশীয় পণ্য বিদেশি পণ্যের সাথে মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। এ কারণে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সময়মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতায় ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাবে। এতে একদিকে যেমন শিল্প বিরোধ সৃষ্টি হবে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মামলা বৃদ্ধি পাবে, মূল্যস্ফীতির কারণে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতাসহ অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করার আহ্বান জানাই।”
মইনুল ইসলাম বলেন, “সিরামিক গ্যাসনির্ভর প্রসেস ইন্ডাস্ট্রি। সিরামিক শিল্পে গ্যাস কাঁচামালের উপকরণ হিসেবে গণ্য হয়। এই শিল্পে গ্যাসের বিকল্প কোনো জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। পণ্য প্রস্তুত করতে নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে কারখানায় ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে গ্যাসের সরবরাহের ঘাটতি হলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকা সকল পণ্য সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, কোম্পানির বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপের অভাবে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিশ্ববাজারে নামি-দামি কোম্পানি আমাদের থেকে অর্ডার বাতিল করেছে। প্রায় ১ বছর যাবৎ ঢাকা জেলার মিরপুর, সাভার, ইসলামপুর, ধামরাই ও কালামপুর; নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ ও মেঘনাঘাট; গাজীপুর জেলার টঙ্গী, কাশিমপুর, ভবানীপুর, ভাওয়াল মির্জাপুর, শ্রীপুর ও মাওনা; নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা এবং ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা ও ত্রিশাল এলাকায় অবস্থিত ২২ থেকে ২৫টি সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার সিরামিক ব্রিকস কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সিরামিক কারখানায় যেখানে গ্যাসের ১৫ পিএসআই প্রেসার প্রয়োজন হয়, সেখানে গ্যাসের প্রেসার কখনো কখনো ২-৩ পিএসআই থেকে শূন্যের কোটায় পর্যন্ত নেমে আসছে। এতে প্রতিদিন ক্ষতি হয় ২০ কোটি টাকার বেশি। ফলে, উৎপাদকরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই, দেশের সিরামিক শিল্পকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার প্রস্তাব করছি।”
ঢাকা/এনএফ/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরবর হ আর থ ক আর প ত ট ইলস
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি টাকা
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সরকারি সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১১ এর আওতায় ৫০ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানি করবে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সরকারি খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ৫০ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে। পাঁচটি প্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ অনুযায়ী রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল, সিঙ্গাপুর এসব চাল সরবরাহ করবে।
প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
চলতি অর্থবছরে চালের মোট চাহিদা ৩৯.৭৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ৭.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক