হাতকড়া উঁচিয়ে কামাল আহমেদ বললেন, ‘এটাই কি বীর মুক্তিযোদ্ধার অলংকা
Published: 3rd, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি. এম. ফারহান ইসতিয়াকের আদালত পুলিশ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। শুনানিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
শুনানির সময় কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতের অনুমতি নিয়ে কিছু বলতে চান। আদালত অনুমতি দেন।
তিনি বলেন, “এভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, নির্যাতন করা হচ্ছে। এই সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশে আইনের শাসন থাকলে এমনটা হতো না। মামলা করছে, বাদীর খবর নাই। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করছে। পরিবারের সদস্যদেরও নির্যাতন করছে। তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না। জায়গা-জমি দখল করে নিচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।” এসময় হাতকড়া পরা হাত উচিয়ে আদালতকে দেখিয়ে বলেন, “এটাই কি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার অলংকার। এজন্যই কি দেশ স্বাধীন করেছিলাম।” এসময় কেঁদে ফেলেন তিনি। শেখ হাসিনার সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, “কোনো অন্যায়, দুর্নীতি করিনি। অথচ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এর বিচার চাই। আদালতের প্রতি আমাদের সম্মান, শ্রদ্ধা রয়েছে। যারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করছি।”
পরে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “তিনি একজন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা না। রাজস্ব ফাঁকি দিতে রাজনীতিতে নাম লেখান। এলাকায় অবৈধভাবে বিশাল ব্যবসা তৈরি করে নিয়েছেন। আন্দোলনের সময় মিরপুরে জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, তিনি কোনো নতুন গ্রহ থেকে এসেছেন।”
এরপর কামাল আহমেদ মজুমদারের বক্তব্যের জবাব দেন তিনি।
বাদীর খবর নাই এ বিষয়ে বলেন, “এখন বাদী আসবে কেন। বিচারের সময় বাদী আসবেন।”
মিথ্যা মামলার বিষয়ে বলেন, “এমন নিষ্ঠুর, নির্মমভাবে বাচ্চাদের খুন করা হয়েছে আর উনি বলছেন মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। গাজায় মুসলিমদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে। এরাও তাই করেছে। পেট্রোল দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে। আর উনি বলছেন মিথ্যা মামলা।”
পরিবার হয়রানি হচ্ছে কামাল মজুমদারের এমন অভিযোগে তিনি বলেন, “অবৈধ অর্থ তো শুধু আপনার নামে রাখেননি। আর ভোগ করছে পরিবারের সদস্যরা। চিন্তা করেন, এমন কাজ করলে পরিণাম তো পরিবারকে ভোগ করতেই হবে। সম্পত্তি লুট করেছেন। সরকারের সম্পদ তো রাখেননি। দখল করে নিয়েছেন।”
বীর মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে বলেন, “যারা মুক্তিযোদ্ধা , আপনাদের কারণে তাদের সম্মানহানি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মাটির নিচে মিশিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কি একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের এজেন্সি। কেন মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করলেন। আর আজ বলছেন মুক্তিযোদ্ধা। আমি বলছি, আপনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলবেন না। গুম, খুন, আয়নাঘর এগুলো কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো। মুক্তিযুদ্ধকে কলংকিত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।”
এর জবাবে কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, আমি ব্যবসায়ী। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। আর গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, সরকারের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে কোনো সম্পর্ক নাই। কোনো কারচুপির আশ্রয় নেয়নি। ট্যাক্স দিয়েছি নিয়মিত।”
তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্বিত, আইনজীবী যা বলছেন সত্য না। এলাকায় স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট করেছি। উন্নয়ন করেছি। কোনো লোকের কাছ থেকে এক কাপ চাও খায়নি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। বাজার সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি।”
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি সব সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষে বলেছি। শেখ হাসিনাকে বলেছি, দাবি মেনে নেন। বারবার বলেছি। যার কারণে আমার গণভবনে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিলো। আর চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, সরকারি জমি দখল করিনি বা কোনো জমি বরাদ্দ নেয়নি।”
পরে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট মিরপুর মডেল থানার সামনে আন্দোলন করছিল ছাত্রজনতা। মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ওই সময় রাস্তা পার হওয়ার পথে আসামিদের গুলিতে আহত হন। পরে ৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই গত ১২ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় একটি মামলা করেন৷
এদিকে, আজ রাকিব হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায়ও কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ঢাকা/মামুন/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র জ র কর পর ব র ব যবস ন করছ বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পটুয়াখালীতে সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় জহিরুল ইসলাম মিরন নামের এক সাংবাদিককে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাসার সামনে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুয়াকাটার তুলাতলী ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জহিরুল ইসলাম মিরন কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাভিশনের কুয়াকাটা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাস থেকে নেমে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেন জহিরুল। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক বরিশালে পাঠান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রেফার করা হয়েছে।
মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ফিলিং স্টেশন ও আশেপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে চিহ্নিত করতে না পারলেও শিগগিরই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘একজন সাংবাদিকের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনও ব্যথিত। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশকে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’’
ঢাকা/ইমরান/রাজীব