বইমেলার ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
Published: 3rd, February 2025 GMT
অমর একুশে বইমেলার প্রথম দিনে শেখ হাসিনার ছবিযুক্ত ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। মুহূর্তে সেই ছবি ভাইরাল হয়। শুরু হয় আলোচনা-সমালোচন। এবার সেই ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ওই বিষয়ে ফের স্ট্যাটাস দেন। সেখানে পয়েন্ট আকারে তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।
প্রেস সচিব লেখেন “গতকাল একুশে বইমেলা নিয়ে আমার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে অনেক হইচই হয়েছে। এ বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া উচিত বলে মনে করছি।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেবল তার অংশীদারদের প্রতি নিরপেক্ষ। শিক্ষার্থী এবং সেইসব রাজনৈতিক দল যারা শুধু জুলাই অভ্যুত্থান নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে আমাদের চুরি করা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভূমিকা পালন করেছে আমরা সরকারে তাদের অংশীদার বলে মনে করি।”
“দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নৃশংস একনায়কতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া, মানবতাবিরোধী গুরুতর অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করা দলের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান দৃঢ় ও অনমনীয়, যা হওয়াই স্বাভাবিক।”
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় যারা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছিল তাদের বিচার করা। আমাদের কাজ হলো কসাই শেখ হাসিনাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তার বিচার করা।”
“গণহত্যা, হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হাজার হাজার বলপূর্বক গুম এবং কয়েকশ বিলিয়ন ডলার লুটপাটের অপরাধে আওয়ামী লীগ, এর সমর্থক, দলটির প্রতি দয়াশীল এবং এর দালালদের জবাবদিহি করতে হবে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের ম্যান্ডেট হলো এসব অপরাধের বিচার করা।”
তিনি আরো লিখেন, “প্রধান উপদেষ্টার মুখপাত্র হিসেবে যখন আমরা কথা বলি আমরা সাধারণত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রগতি এবং অর্জন সম্পর্কে আপডেট দিই। আমরা শেখ হাসিনার অপরাধ এবং তার তৈরি ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চোরতন্ত্র ও খুনতন্ত্র সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করি, যাতে সেগুলো মানুষের মনে স্পষ্ট থাকে।”
“ যারা মনে করেন, আমি রাজনীতি নিয়ে কিংবা আওয়ামী লীগ ও এর হত্যাকাণ্ড এবং বিশাল চুরি সম্পর্কে খুব বেশি বেশি কথা বলছি তারা আওয়ামী লীগের প্রতি দয়াশীল গ্রুপ। আমরা জানি আপনারা এত বছর কী করেছেন। আমি আমার দায়িত্বের শেষদিন পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যাব, থামব না। ”
“ রুচির সংজ্ঞা কী? সুরুচি নির্ধারণ করে কে? শালীনতার সংজ্ঞা কী? কার কাছে আমাদের শালীনতা প্রদর্শন করা উচিত? এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসকদের একজন। আমি আমাদের জনগণকে বারবার মনে করিয়ে দিতে দ্বিধা করি না যে তিনি একজন খুনি এবং গুমজননী ছিলেন!! এটি একটি নৈতিক অবস্থান। তাছাড়া, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে আমাদের অবশ্যই হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলতে সক্ষম হতে হবে- গণতন্ত্রে আমরা যে ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলি, এটিই বাকস্বাধীনতা।”
“আমার ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানা আছে। আমি খুব ভালো করেই জানি যে কীভাবে সম্মিলিতভাবে আমাদের স্মৃতিবিভ্রাট ঘটছে। কীভাবে আমরা আমাদের ইতিহাসের কিছু মারাত্মক ভয়াবহতা ভুলে গেছি। বিজয়ীরা আমাদের ইতিহাস লিখেছেন, কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিত্বকে আমাদের নায়ক বানিয়েছেন। আমরা এটি ঘটতে দেব না। আমরা একজন সোশিওপ্যাথকে সোশিওপ্যাথ বলব, আমরা একজন গণহত্যাকারীকে গণহত্যাকারী বলব।”
প্রেস সচিব সেখানে লেখেন, “গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পার হলেও আওয়ামী লীগ এখনো ডিনায়ালে আছে, এখনও তাদের কৃতকর্ম অস্বীকার করছে। দলটির সমর্থক, নেতা, আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক, এর বিদেশি সমর্থক এবং পৃষ্ঠপোষকরাও ডিনায়ালে আছে। তারা একটি বিকৃত ইতিহাস তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের বয়ানে, তারাই ভুক্তভোগী আর পুলিশের কোনো দায় নেই।”
“সাংবাদিকতার ভাষায়, তারা একটি ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাইছে যে এই অভ্যুত্থান কেবল একটি ইসলামপন্থী দখল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এটি ‘ওয়ার অন টেরর’ এর ন্যারেটিভ, যা আওয়ামী লীগ ২০০৭ সাল থেকে ব্যবহার করে আসছে। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলেই তাকে ইসলামী মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত করাটাই হলো এর মূলমন্ত্র। আওয়ামী লীগ বিদেশে বসে লাখ লাখ টাকা ঢালছে এবং এই ন্যারেটিভ তৈরির জন্য কিছু শীর্ষ ভারতীয় মিডিয়াকে সঙ্গী হিসেবে খুঁজে পেয়েছে।”
“এটা একটা বিপজ্জনক খেলা। যদি তারা সফল হয়, তাহলে তারা আমাদের যে কাউকে হত্যা করার লাইসেন্স পাবে এবং বিশ্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখ বন্ধ করে থাকবে। আমাদের কাজ হলো যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগের এই বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটিকে ব্যর্থ করা। আমাদের যে কোনো উপায়ে লড়াই করতে হবে। অন্যথায়, আমাদের সাথে এমন আচরণ করা হবে যেমনটা সারা দেশের জেনেভা ক্যাম্পে উর্দুভাষী মানুষদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছিল।”
“আমার সমস্ত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু যারা আওয়ামী লীগের ট্রল বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়েছেন, আমি আপনাদের কাছে গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি আমার আরামদায়ক, লাভজনক চাকরি ছেড়ে এসেছি শুধুমাত্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করব বলে। আমি দুঃখিত যে আমার শেয়ার করা ছবির জন্য আওয়ামী লীগের ট্রলবাহিনী আপনাদের টার্গেট করেছে। আপনারা আমাকে আনফ্রেন্ড করতে পারেন, সবচেয়ে ভালো হয় যদি ব্লক করেন। একইসঙ্গে, আপনাদের ধৈর্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি জানি আমি কী করছি। আমার কাজের পরিণতিও আমি মেনে নিতে প্রস্তুত।”
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য অপর ধ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
হাত বেঁধে নারীর চুল কেটে মুখে কালি
ওড়না দিয়ে দুই হাত বাঁধা এক নারীকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। চার নারী তাকে ধরে রেখেছেন। তাদের একজন হাত বাঁধা ওই নারীর চুল কাটছেন। তাকে ঘিরে থাকা উৎসুক নারী-পুরুষ মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্যটি ধারণ করে উল্লাস করছেন। এমন দৃশ্যের এক মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম ফজিলা চম্পা। তিনি যশোরের ঝিকরগাছায় উপজেলার চাপাতলা গ্রামের তোরাব মোড়লের মেয়ে। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার বেনেয়ালি গ্রামে ডিভোর্সি পুত্রবধূকে দেখতে যান ভুক্তভোগী নারী। তখন পুত্রবধূর পরিবারের লোকজনের হাতে মারধর ও মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতন শিকার হন চম্পা। এ ঘটনায় নির্যাতিত নারী ঝিকরগাছা থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত চারজনকে আজ সোমবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন- ঝিকরগাছার বনেয়ালি কলাবাগানপাড়ার আবদুল হামিদের ছেলে শিমুল হোসেন, পদ্মপুকুর গ্রামের ইব্রাহীম খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার রুমি, বেনেয়ালি গ্রামের মফিজুরের স্ত্রী রনি বেগম ও পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের স্ত্রী রহিমা। আজ বিকেলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
ঝিকরগাছা থানার ওসি মো. বাবলুর রহমান খান বলেন, ভুক্তভোগী ফজিলা খাতুন পুত্রবধূ বিথিকে দেখতে তার নতুন স্বামীর বাড়ি যান। বিথির স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন আটকে রেখে ফজিলা খাতুনের মাথার চুল কেটে দেয়। এসময় তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এজাহারনামীয় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
ফজিলা খাতুনের অভিযোগ, তার ছেলে রায়হানের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল বিশ্বাসের মেয়ে বিথির দুই বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর বনিবনা না হওয়ায় সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর বিথীর একই উপজেলার গদখালি ইউনিয়নের বেনেয়ালি গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শিমুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফজিলা বেগম বেনেয়ালি গ্রামে তার সাবেক পুত্রবধূ বিথিকে দেখতে যান। এ সময় বিথির নতুন স্বামী শিমুল হোসেন, চাচি শারমিন আক্তার রুমি, চাচি শাশুড়ি রনি বেগম, মা রহিমা বেগমসহ তার স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন মিলে ফজিলা বেগমের মাথার চুল কেটে মুখে কালি লেপন করে দেয়। এসময় তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। উপস্থিত বহু নারী-পুরুষ পুরো ঘটনা ভিডিও করে।
তিনি বলেন, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে শিমুলের বাড়ির পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং সন্ধ্যার পর দেশিয় অস্ত্র দিয়ে থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। কোথাও অভিযোগ করলে আরও বড় ধরনের ক্ষতি করার ভয় দেখায় অভিযুক্তরা। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয় গদখালি ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেম বলেন, তাবিজ-কবজ (যাদু) করেছে সন্দেহে ওই নারীকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে বলে শুনেছি। এভাবে একজন মানুষকে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।