‘প্রলোভন দূরে সরিয়ে ক্রিকেট সাধনা কর’
Published: 3rd, February 2025 GMT
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) আজীবন সম্মাননা পেলেন শচীন টেন্ডুলকার। গত শনিবার মুম্বাইয়ে বিসিসিআইর বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সিকে নাইডু পদক তুলে দেওয়া হয় কিংবদন্তি এ ব্যাটারের হাতে। এই সম্মাননা নিতে গিয়ে খেলোয়াড়ি জীবনের কথা মনে পড়েছে শচীন টেন্ডুলকারের। মনে পড়েছে অবসর জীবনের কথা। সেদিনগুলোর আলোকে তরুণদের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। সব প্রলোভন দূরে সরিয়ে একমনে ক্রিকেট সাধনা করার পরামর্শ দিয়েছেন টেন্ডুলকার।
১৯৮৯ সালে অভিষেক হওয়া শচীন অবসর নেন ২০১৩ সালে। দুই যুগের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ২০০ টেস্ট ও ৪৬৩টি ওয়ানডে; যা দুই ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ। এই দুই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি রান এবং একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ১০০ সেঞ্চুরি আছে তাঁর। সেই শচীন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, তাঁর জীবনে মূল্যবোধের গুরুত্ব কতটা।
নিজের উদাহরণ দিয়ে তরুণদের পরামর্শও দিয়েছেন লোভ-লালসা দূরে সরিয়ে ক্রিকেট সাধনার, ‘নব্বইয়ের দশকে দুই বছর আমার ব্যাটের কোনো স্পন্সর ছিল না। তার পরও মদ কিংবা তামাকের বিজ্ঞাপন করিনি। কারণ, আমার জীবনে মূল্যবোধের বড় ভূমিকা রয়েছে। পারিবারিক শিক্ষা সব সময় আমাকে সামনে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’ উঠতি ক্রিকেটারদের মূল্যবোধ মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেকের পর থেকে ক্রিকেটই নাকি পথ দেখাচ্ছে। আর যেই ব্যাট দিয়ে তিনি বিশ্বের তাবড় তাবড় বোলারকে শাসন করেছেন, সেই ব্যাটকে এখনও ভীষণ যত্নে রাখেন তিনি। এখনও সেই ব্যাটকে প্রণাম করেন। অবশ্য জীবনে কোনো কিছুকেই হালকাভাবে নেননি তিনি। গুরুত্ব দিয়েছেন সবকিছুতে।
তবে সবকিছুর আগে রেখেছেন ক্রিকেটকে, ‘ক্রিকেট না থাকলে এই ঘরে আমরা বসে থাকতাম না। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার। আমাদের কাছে ব্যাট-বল আছে। শক্ত করে তাদের ধরে রাখতে হবে। মুঠো আলগা করলে চলবে না। যদি মুঠো আগলা হয়ে যায়, তাহলে ক্যারিয়ারও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে।’
সে কারণে মনোসংযোগ ধরে রাখার কথা বলেছেন শচীন। কোনো প্রলোভনে পা না বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন, ‘আমি শুধু বলব, মনোসংযোগ ধরে রেখে এক লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। ক্যারিয়ারে অনেক প্রলোভন আসবে। তাতে পা দিলে হবে না। সবার আগে দেশ। দেশের জন্য সবটুকু দিয়ে খেলতে হবে। আর অবসরের পর বোঝা যায় খেলার মাঠ কত আনন্দের ছিল।’
২০১৩ সালে ছেলেবেলার স্মৃতিবিজড়িত মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে উইন্ডিজের বিপক্ষে বিদায়ী টেস্ট শেষে একটা ভাষণ দিয়েছিলেন শচীন। সেদিনের কথা নাকি এখনও মনে পড়ে তাঁর, ‘ওই মুহূর্ত জীবনে একবারই আসে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ধোনি বলল, ওরা আমার জন্য কিছু ব্যবস্থা করেছে। তার পর দেখলাম, মাঠে আমাকে ঘিরে উল্লাস হলো, আমাকে গার্ড অব অনার দিল। বুঝতে পারছিলাম, এটাই শেষবার। এর পর আর দেশের হয়ে নামা হবে না। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কবিতা
মৌন ভঙ্গি
মাসুদুর রহমান মাসুদ
দেয়ালে তৈলচিত্র–
ফুলমুখী শত ডানার প্রজাপতি।
মৌনতার ভঙ্গিতে শালিক
নম্রতা মেখে শ্যেন দৃষ্টিতে।
আকাশে একঝাঁক শকুন,
বক্রতা ভেঙে পৃথিবী দাপিয়ে চলে।
সকালের রেখার মতো কিছু শান্তিকামী।
নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন বুনে,
শকুনের চোখ থেকে ঝরে পড়ে আগুন!
ভস্ম হয় নতুন স্বপ্ন।
অভিমানে পোড়াও ফাগুন তুমি
নিষাদ আফসারী খানম
বোশেখেও কাটে না আমাদের জ্বর
নরক-ঈশ্বরী কি আমি তবে
তাই কি সাজবে না কবিতার বাসর!
কদম ছুঁয়ে কবিতা লিখিনি এখনও
বর্ষা এখনও আসেনি এখানে
চৈত্রের খরা সয়ে যাচ্ছি
আগুনে পুড়ছে বাসর।
পলাশ ফুলে নিবেদিত হয়েছি,
কদম কেশর মাখিনি এখনও
জারুল বনে কি আগুন লেগেছে!
খরতাপে পুড়ছে ফাগুন, বোশেখী
বর্ষায়ও সিক্ত হয় না মন-প্রাণ, দেহ
শীতলতা নামে না মনে।
আসন্ন শ্রাবণে হোক সবকিছু সুন্দর
কবিতা ছুঁয়ে সাজাও বাসর কাব্যিক ঈশ্বর,
বর্ষার জলে কবিতার গায়ে প্রাণ ঢেলে দাও তুমি!
অচেনা কেউ
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম
সেদিন অচেনা কেউ কাছে এসে বলে
নীলাদ্রির রূপে এই গগনের তলে!
ভোরের নদীর মতো নীরব নিথর;
বাংলার মাঠ-ঘাট ও ঘাসের ভেতর।
দোয়েলের শিস আর কোকিলের সুর,
শুনেছ কি কেউ থেকে বহুদূর।
তারপর শুধুই আঁধার
শারমিন নাহার ঝর্ণা
হাঁটছি আঁধারের সিঁথি বেয়ে
আকাশে জোছনার আলো নেই
নক্ষত্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
গভীর অরণ্য ঘন আঁধার,
চোখে পড়ছে না হিংস্র হায়েনার হাসি।
অকস্মাৎ সারি সারি জোনাকির আলো
আলোর রশ্মি ধরে হাঁটতে চেয়েছিলাম বহুদূর।
বৈরী দমকা হাওয়ায় উড়ে গেল জোনাকি
তারপর শুধুই আঁধার!
জানি না কবে উঠবে জোছনা আবার।
কেন আড়ালে থাকো
মহসিন আলম মুহিন
আশা দিয়ে তুমি আড়ালে চলে গেলে,
কীসের ছুতায়, কী দোষ খুঁজে পেলে।
ভরা ভাদ্রে বলো কেন আছো দূরে সরে,
নদী যৌবনা, তবুও মিশে না কেন সাগরে।
নয়নের জলে বেদনারা ভিজে ভিজে সিক্ত–
ফল নাহি মেলে, সবই লাগে যেন রিক্ত।
ফুল আসে, কেন ফল নাই গাছের ডালে,
ঘুঙুর পরা পাখিরা বসে না কেন চালে।
কেন আড়ালে থেকে বিরহের দাও জ্বালা,
তোমারই বিহনে অন্তর পুড়ে হলো কালা।
মেঘে ঢাকা চাঁদ যায় না দেখা চোখ ভরে,
বিষাদ লাগে, সারাক্ষণ মনটা শুধুই পোড়ে।
বিশৃঙ্খল বেঁচে থাকা
ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়
বেঁচে থাকা আজকাল; বিশৃঙ্খলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হৃদয়ের বেদি ব্যথা, ঘুমের অসুখ, আহারের অরুচি,
বিছানায় ছন্নছাড়া অনিয়মের ছড়াছড়ি–
বয়সের ক্লান্ত লোমে বেড়ে চলেছে ক্রমাগত।
দিনরাত কবিতার টেবিলে তৈরি হচ্ছে
তোমাকে নিয়ে বাঁচার গল্প!
তবুও স্বপ্নের মধ্যে জেগে থাকার স্মৃতি
তোমার নেপথ্যে নিশীথের হট্টগোল।
ভাঙা চুড়ির আওয়াজ, মোলায়েম স্পর্শ,
দুঃখের ভরসমেত একটি শরীর–
আর বলো ক’জন নারীই বা নিতে চাইবে?
সস্তা প্রেমের মূল্য দিয়ে বলো, আজকাল আর
ক’জন প্রেমিকা দামি দামি স্বপ্ন কিনে?
কে জানে–
কবে শেষ হবে আমার এ দুর্ভেদ্য জীবন!