ঘন কুয়াশায় যমুনা সেতুতে দুর্ঘটনা, যান চলাচল বন্ধ
Published: 3rd, February 2025 GMT
ঘন কুয়াশার কারনে যমুনা সেতুর উত্তর লেনের ওপর আজ সোমবার সকালে দুটি যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এর ফলে উত্তরাঞ্চল-ঢাকা অভিমুখে উত্তর লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে পশ্চিমপাড়ের টোল কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রেখেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঢাকা অভিমুখে উত্তরাঞ্চলের হাজারো যাত্রী।
জানা যায়, আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় সেতুর বাম লেনে পেছন থেকে ট্রাককে ধাক্কা দিলে লেনটি বন্ধ হয়ে যায়। যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ খবর পেয়ে লেনটি চালুর জন্য চেষ্টা করছে। দুর্ঘটনার কারণে সেতুর পশ্চিম পাড়ে সায়দাবাদ থেকে কড্ডার মোড় পর্যন্ত ঢাকা- রংপুর- রাজশাহী মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল জলিল মুঠোফোনে সমকালেকে জানান, ‘আমরা পিকনিক করতে কাজিপুর থেকে নরসিংদী যাচ্ছিলাম। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে আমাদের গাড়ি আটকে রয়েছে। কখন লেনটি চালু হবে বুঝতে পারছি না।’
যমুনা সেতু পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল ৭টার পর না সেতুর উপরে ২০ নম্বর পিলারের কাছে ফোর এক্সেল ভেহিকল পেছন থেকে একটি যানবাহনকে ধাক্কা দিলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরপর পেছনে আরও দুই তিনটি যানবাহন কুয়াশার কারণে ধাক্কা লেগে লেনটিতে আটকে যায়। সেতু কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন সরিয়ে ফেললেও দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকলেও থেকে উত্তরাঞ্চল অভিমুখে দক্ষিণ লেনটি চালু রয়েছে।’
যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেলকে বারবার কল করা হলেও সাড়া মেলেনি। তবে যমুনা সেতু ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মাহবুর রহমান সকাল সাড়ে ৯টায় জানান, ‘ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সেতুর উপর দুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে টোল বন্ধ রাখা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হলে টোল কার্যক্রম শুরু হবে। ঢাকার অভিমুখে যানচলাচল সাময়িক ব্যাহত হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশা করছি, স্বাভাবিক হবে।’
সকাল সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। সেতুর পশ্চিম পাড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘন ক য শ স র জগঞ জ দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ডিলারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ব্যবসা গুটিয়েছেন ৫১ বিক্রেতা
সাদুল্লাপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলন আসার আগ পর্যন্ত জমিতে তিনবার ইউরিয়া সার দিতে হবে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্বে সার পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এ কৃষককে।
জাহিদুল ইসলাম জানান, ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে ইউরিয়া সার কিনতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয় হয়।
জাহিদুল ইসলামের মতো সার কিনতে অনেক কৃষককে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এলাকাভিত্তিক খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য তারা ডিলারদের অসহযোগিতার কথা বলছেন।
খুচরা ইউরিয়া সার বিক্রেতা বড় জামালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম মিঠু ও নলডাঙ্গার দশলিয়া বাজারের বিপুল হোসেন জানান, এ ব্যবসায় প্রাপ্য সম্মানটুকু নেই। তাদের প্রতিপক্ষ মনে করেন বিসিআইসি ডিলাররা। তারা কমিশন দিতে টালবাহানা করেন। নানা ছুতোয় সার দিতে দেরি করেন। নানা ঝক্কি পোহানোর পর সার নিয়ে নির্ধারিত পয়েন্টে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ দিতে হয়। এতে লাভ থাকে না।
অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভাতগ্রাম ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মণ্ডলসহ কয়েকজন ডিলার। তাদের ভাষ্য, খুচরা বিক্রেতারা বাকিতে সার নেওয়ার আশায় থাকেন। বিনা পয়সায় সার নিয়ে মজুত করে রাখেন। সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। তাদের এ সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে ব্যবসায় টিকতে পারেননি। এসব কারণে আমরাও কৃষকের কাছে সরাসরি সার বিক্রি করতে আগ্রহী।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ হয়েছে। এসব জমির জন্য চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৫০০ টন। উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ১৮ জন ডিলার আছে। তারা এগারো ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে সার বিক্রি করেন। বরাদ্দ সারের ৭৫ ভাগ থাকবে ডিলারের কাছে। ২৫ ভাগ পাবেন খুচরা বিক্রেতারা। কৃষকদের সুবিধার জন্য এখানে ৯৯ জন খুচরা সার বিক্রেতা (সাব ডিলার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা কৃষি বিভাগের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জামানত রেখে ডিলারদের কাছ থেকে কমিশনে ইউরিয়া নেন। সেই সার নির্ধারিত পয়েন্টে নিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। ডিলারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা ছেড়ে জামানত ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মাত্র ৪৮ জন খুচরা বিক্রেতা আছেন। তারাও ব্যবসা ছেড়ে জামানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছেন। এসব কারণে কৃষকের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সার বিক্রির বিধান রাখা হয়েছে। এখানে ডিলারের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্ব প্রকট। তাদের ঝামেলায় কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারের জন্য দূরে যেতে হচ্ছে কৃষকদের।
জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ইউনিয়নটি বড় এলাকাজুড়ে। অথচ এখানে সার বিক্রির জন্য ডিলার মাত্র একজন। তিনি দোকান খুলে বসেন নির্ধারিত একটি বাজারে। দূরের গ্রামের অনেক কৃষক ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সার নিতে আসেন। এখানে সার বিক্রির জন্য খুচরা বিক্রেতা বাড়ানো প্রয়োজন।
কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের সরবরাহ আছে। ডিলার আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলে কৃষক পর্যায়ে সহজে সার পৌঁছানো যেত।