যতদিন সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা না দেওয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত কলেজের সব ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ঘোষণা অনুযায়ী, আজ সোমবার সকাল থেকে শাটডাউন থাকবে কলেজ। এর আওতায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, অর্থাৎ ১১ ঘণ্টা আমতলী, মহাখালী এবং গুলশান লিংক রোড অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রোববার রাত ১১টার দিকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতুমীর ঐক্যের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, আগে আমাদের আন্দোলন শিথিল করা হলেও এবার তা করা হবে না। 

এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো– তিতুমীর কলেজকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করা, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাহার এবং আইন উপদেষ্টার ক্ষমা প্রার্থনা।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে রোববার টানা পঞ্চম দিনের মতো শিক্ষার্থীদের অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। গত শুক্রবার ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। রোববার সন্ধ্যায় তারা মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ব্যস্ত এ সড়কে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটের সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিসফেরত মানুষ।  সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাখালীর আমতলী মোড়ে যান শিক্ষার্থীরা। মহাসড়ক অবরোধ করে তারা হুঁশিয়ারি দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। এর আগে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে তারা কলেজের প্রধান ফটকে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে ফটকের সামনে গুলশান-মহাখালী সড়কে বাঁশ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় অনেক যাত্রী ও চালক শিক্ষার্থীদের এক পাশের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তাতে সায় দেননি শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়। কলেজের সামনে কয়েক শিক্ষার্থী আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।

বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতের বিষয়টি বিবেচনা করে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিথিল করেন শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, মহাখালীতে রেলপথ, মহাসড়ক ও গুলশান-১-এর গোলচত্বর অবরোধ করার কথা ছিল। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ‘আলটিমেটাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবির যৌক্তিকতা নেই’ বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া জনদুর্ভোগ হয়, এমন কর্মসূচি পরিহার করার আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে। এদিকে গতকাল দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি অযৌক্তিক। তাদের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনাও করা হচ্ছে না। 
সাত কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। আলটিমেটাম দিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আদায় করা যাবে না। তিতুমীর কলেজকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে হলে অনেক ঐতিহ্যবাহী কলেজ আছে, সেগুলোকে বিবেচনা করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে রাজশাহী কলেজ, খুলনা বিএল কলেজ, বরিশাল বিএম কলেজের নাম উল্লেখ করেন তিনি। 

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় করা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। কমিশন গঠন করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সেই প্রক্রিয়া মেনেই বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। 

উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ব্রিফিং করে ঘোষণা দেন, এখন থেকেই সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি হবে। এর পরই তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আমতলী মোড়ে গিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে রাত ৮টার পর তারা অবরোধ তুলে নিয়ে মিছিল করতে করতে ক্যাম্পাসে ফিরে যান। প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের ওই অবরোধে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ত ম র কল জ অবর ধ ত ত ম র কল জ র ধ কর ন কল জ র স উপদ ষ ট র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

পায়রার বুকে শত শত ডুবোচরে ভোগান্তি

আমতলীর পায়রা নদীর গুলিশাখালী এলাকাজুড়ে শত শত ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। ওই পথে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে মাছ ধরা নৌকা, লঞ্চ ও জাহাজ। সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে যাত্রী, চালক ও জেলেদের সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 
বংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে আমতলী, বরগুনা ও পাথরগাটা উপজেলার অবস্থান। বরগুনা ও আমতলীর মাঝখান দিয়ে এলাকাজুড়ে প্রবাহিত পায়রা নদী। নদীটি পটুয়াখালীর লোহালিয়া ও লেবুখালী নদী  হয়ে বরিশালের কীর্তনখোলার সঙ্গে মিশেছে। চলাচলের জন্য এ নদীটির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবসা-বাণিজ্যের মালপত্র পরিবহনে এ নদী  দিয়ে হাজার হাজার ট্রলার, কার্গো ও জাহাজ চলাচল করে। নদীকে কেন্দ্র করে বরগুনা, আমতলী ও তালতলীতে গড়ে উঠেছে কয়েকশ জেলেপল্লি ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। হাজার হাজার ট্রলার নিয়ে জেলেরা এ নদী পাড়ি দিয়ে সাগর মোহনায় মাছ ধরতে যায়। 
পায়রা ছিল এক সময় প্রমত্তা। সিডরের পর থেকেই নদীটি নাব্য হারাতে থাকে। তখন থেকেই পায়রার বুকে জমে ওঠে বিশাল বালুর স্তূপ। বিশাল এলাকাজুড়ে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। চরের কারণে অনেক জায়গায় নৌচলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। গুলিশাখালীর চরে জেলেরা এখন চরগড়া দিয়ে মাছ ধরছেন। পায়রার মোহনায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা শত শত  ডুবোচর। ভাটার সময়  পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত  নদীর মাঝখানে জাহাজ এবং ফিশিং বোটগুলোকে নোঙর করে থাকতে হয়। এ সময়টাতে মাঝেমধ্যেই জলদস্যুদের কবলে পড়তে হয় জেলে, পথচারী ও ব্যবসায়ীদের।  
স্থানীয়রা জানান, ভাটার সময় চরে পানি থাকে এক থেকে দেড় ফুট। ওই সময় কোনো ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারে না। নিরুপায় হয়ে নদীর মাঝখানে নোঙর করে থাকতে হয়। এ সুযোগে জলদস্যুরা হামলা চালিয়ে টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। জেলেদের শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। 
শুক্রবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর বুকে জেগে ওঠা বিশাল চরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে ছৈলার বন। পাশেই চরগড়া দিয়ে সকাল-বিকেল মাছ ধরছেন জেলেরা। চারদিকে পানি। মাঝখানে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চর জেগেছে। 
গুলশাখালী জেলেপল্লির রুবেল বলেন, ‘জোয়ারের সময় এই নদীর দিকে তাহাইলে কইলাজা কাঁইপা উঠত। মনডার মধ্যে ডর লাগত। এহন জোয়ার আহে মিনমিনাইয়া। তেমন জোর নাই।’
পায়রা নদীতে তিন যুগ ধরে মাছ ধরেন দুলাল। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘এই নদীতে এক সময় ৮০-৯০ আত পানি ছিল, এহন আর হেই পানি নাই। এহন জোয়ারের সময় ২০-২৫ আত পানি অয়। বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষ এই নদীতে মাছ ধইরা খাইত। এহন আর আগের লাহান মাছ পাওয়া যায় না।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঁশ ফেলে গুলশানে সড়ক অবরোধ তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের
  • পায়রার বুকে শত শত ডুবোচরে ভোগান্তি