ব্রহ্মানন্দমকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। পর্দায় তার উপস্থিতি মানেই দর্শকদের মাঝে হাসির রোল পড়ে যাওয়া। তেলেগু সিনেমার এই অভিনেতা জনপ্রিয়তার দিক থেকে ভারতের প্রথম সারির নায়কদের তুলনায় কোনো অংশে কম নন।

ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করলেও বর্তমানে তেলেগু ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া কৌতুকাভিনেতাদের একজন। কয়েক দিন আগে সত্তরে পা দিয়েছেন ব্রহ্মানন্দাম। সংখ্যায় বয়স বাড়লেও এখনো অভিনয়ে সরব। অভিনয় গুণে যশ-খ্যাতি যেমন কুড়িয়েছেন, তেমনি অঢেল সম্পদেরও মালিক হয়েছেন ভারতের দক্ষিণী সিনেমার এই কমেডিয়ান।

ব্রহ্মানন্দমের জন্ম ও পরিবার
১৯৫৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, অন্ধ্রপ্রদেশের সত্যেনপল্লীর ছাগান্তি ভারি পালেম গ্রামের একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ব্রহ্মানন্দম। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল বলে জানা গেছে। ব্রহ্মানন্দমের বাবা ছোট একটি চাকরি করতেন। তার আয়েই সংসার চালাতে হয়েছে। কিন্তু এই অর্থ জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট ছিল না।

ব্রহ্মানন্দম পরিবারের প্রথম এম.

এ. পাস
সেই সময়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্রহ্মানন্দম একমাত্র ব্যক্তি, যে এম. এ. পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তেলেগুর আত্তিলি কলেজে প্রভাষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। কলেজে শিক্ষকতার সময়ে প্রায়ই মিমিক্রি করে ছাত্রদের হাসানোর চেষ্টা করতেন। সেখান থেকে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হন ব্রহ্মানন্দম।

ব্রহ্মানন্দমের চলচ্চিত্রে যাত্রা
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো গডফাদার না থাকায় রুপালি দুনিয়ায় ব্রহ্মানন্দমের যাত্রা কঠিন ছিল। কিন্তু সাহস হারাননি এই অভিনেতা। ১৯৮৬ সালে পরিচালক জাধ্যালার হাত ধরে ‘ছান্তাবাঈ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন ব্রহ্মানন্দম। তাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসার দাবিদার জাধ্যালার। জানা যায়, মেগাস্টার চিরঞ্জীবী ব্রহ্মানন্দমের কমিক টাইমিং দারুণ পছন্দ করতেন। তাই তাকে সহযোগিতা করেন এবং সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগও করে দিতেন।

ব্রহ্মানন্দমের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা চিরঞ্জীবী, রজনীকান্ত, কমল হাসান থেকে শুরু করে এ সময়ের তারকা অভিনেতা আল্লু অর্জুন, রাম চরণ, প্রভাস, জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ব্রহ্মানন্দম। প্রায় চার দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম, কন্নড় ভাষার ১ হাজার ১০০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। জীবিত অভিনেতা হিসেবে সর্বাধিক সিনেমায় অভিনয়ের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন ব্রহ্মানন্দম।

ব্রহ্মানন্দমের মোট সম্পদ
দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে ১ হাজার ১০০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ব্রহ্মানন্দম। অর্থের দিক থেকে রজনীকান্তের চেয়েও ধনী তিনি। নেট ওয়ার্থ জ্ঞানের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে ব্রহ্মানন্দমের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫৫০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার বেশি)। অন্যদিকে, রজনীকান্তের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৩০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার বেশি)।

সিয়াসাত ডটকমের তথ্য অনুসারে, ব্রহ্মানন্দম কেবল ‘কমেডি কিং’ নন, ভারতের অন্যতম ধনী কমেডিয়ানও তিনি। প্রতি সিনেমার জন্য ১-২ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন, সেটা ছোট চরিত্র হলেও এই অর্থ তাকে প্রদান করতে হয়। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৮০০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বেশি)।

ব্রহ্মানন্দমের ঝুলিতে যত পুরস্কার
ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন ব্রহ্মানন্দম। তা ছাড়াও ব্রহ্মানন্দম পাঁচবার রাজ্য নন্দি অ্যাওয়ার্ড, একবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড সাউথ, ছয়বার সিনেমা অ্যাওয়ার্ডস এবং কমেডির জন্য তিনবার সাউথ ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল মুভি অ্যাওয়ার্ড জমা পড়েছে তার প্রাপ্তির ঝুলিতে।

তথ্যসূত্র: ডিএনএ

ঢাকা/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র পর ব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিষ দিয়ে তিনটি গরুকে মেরে ফেলার অভিযোগ

মাটির দেয়ালে জং ধরা টিনের চাল। সেই চালের এক পাশে পোষা তিনটি গাভি, আরেক পাশে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বসবাস। গাভির দুধ বিক্রি করে চলত সংসার। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গাভি তিনটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আজিজুল ইসলাম।

আজিজুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর গরু তিনটিকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবেশী মজনু মিয়ার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি কেন গরু মারতে যাব! আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা তথ্য রটানো হচ্ছে।’

আজিজুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁর ঘরে থাকা গাভি তিনটি মারা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মারা যাওয়া গরু তিনটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্ত করছে।

আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। দরিদ্র হওয়ায় আজিজুল ইসলামের শ্বশুর মহির উদ্দিন ১০ বছর আগে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা বাছুর দেন। সেই বাছুর লালন–পালন করার পর পূর্ণবয়স্ক হয়ে অনেকগুলো বাছুর জন্ম দেয়। এর মধ্যে তিনটি বকনা বাছুর পালন করে গাভিতে পরিণত করেন আজিজুল। সেই গাভির দুধ বিক্রি করে পাঁচ সদস্যের সংসার চলত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাড়ির অদূরেই বাঁশঝাড়ে গাভি তিনটি বেঁধে রাখার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর গতকাল শনিবার রাতে তিনটি গাভি মারা যায়। তিনটি গাভির মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।

রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একসঙ্গে তিনটি গরু মারা যাওয়া আজিজুল ইসলামের বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড়। উঠানের সামনে ময়নাতদন্ত করছে প্রাণিসম্পদের দল।

বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন আজিজুলের স্ত্রী স্বপনা বেগম। এ সময় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘হামার গ্রামের মজনুর সাথে মোর ঝগড়া চলছে। মজনু ২০ দিন আগোত হুমকি দিছিল, মোক নিঃস্ব করি দিবে, মোর সংসার ফকির করতে যা করা লাগে করবে। মজনু ওর কথা পালন করছে, মোক ফকির বানাইল। এ্যালা মুই নিঃস্ব। ওয় মোর গরু বিষ দিয়ে মারি ফেলাইছে। গরুগুলার কী দোষ? ওয় মোক মারত। মুই ওর বিচারের জন্যে থানায় অভিযোগ দিছি। মুই সঠিক বিচার চাই।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখায়ের বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর টিম নিয়ে আজিজুল ইসলামের বাড়িতে যাই। গাভিগুলোর প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনটি গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় মালিক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ