স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ-হত্যা, লাশ ফেলা হয় হাতিরঝিলে
Published: 2nd, February 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গাড়িচালক রবিন হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর। দেড় মাসের পরিচয় সূত্রে সাক্ষাতের জন্য তাঁকে গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালীতে ডেকে নেয় রবিন। সেখান থেকে হাজীরবাগে বন্ধুর ভাড়া করা বাসায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে পাঁচজন মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এরপর হাতিরঝিলে ফেলে দেয় তারা। ঘটনার ১৭ দিন পর রোববার হাতিরঝিল থেকে বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ধর্ষণ ও হত্যার শিকার মেয়েটি দক্ষিণখান এলাকায় মা-বাবার সঙ্গে থাকত। রবিন ও রাব্বির দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে রোববার সকালে হাতিরঝিল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে রবিন ও রাব্বি। পরে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
দক্ষিণখান থানার ওসি মোহাম্মদ তাইফুর রহমান মির্জা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে রবিনকে শনাক্ত করে ৩০ জানুয়ারি রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে গ্রেপ্তার করা হয় রাব্বিকে। ঢাকার আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দোষ স্বীকার করেছে।
পুলিশ জানায়, ১৬ জানুয়ারি দক্ষিণখানের বাসা থেকে বের হয় মেয়েটি। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তিন দিন পর দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা। ২৭ জানুয়ারি একটি মামলা করেন। ওই স্কুলছাত্রীর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে রবিনকে শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে গ্রেপ্তার করা রাব্বিকে। রিমান্ডে তারা ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে।
তাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, মগবাজারের বাসিন্দা রবিনের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয়ের পর দেখা করার কথা বলে ১৬ জানুয়ারি মহাখালী ডেকে নেয়। কৌশলে তাকে হাজারীবাগে রাব্বির ভাড়া করা এক কক্ষের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে হাত-পা বেঁধে রবিন, রাব্বিসহ পাঁচজন মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় সে চিৎকার করলে মুখের মধ্যে কাপড় গুঁজে দেয় তারা।
একপর্যায়ে সে মারা গেলে লাশ গুমের পরিকল্পনা করে। প্লাস্টিকের বস্তায় লাশ ভরে রিকশায় তুলে রাত ৩টার দিকে গুলশান পুলিশ প্লাজার পশ্চিমের ব্রিজ থেকে হাতিরঝিলে ফেলে দেয় তারা। রবিন ও রাব্বির তথ্যমতে রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দক্ষিণখান থানা পুলিশ হাতিরঝিল থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় দক্ষিণখান কবরস্থানে মেয়েটিকে দাফন করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই মেহেদী হাসান সমকালকে বলেন, হাতরঝিলে বস্তাবন্দি লাশ ফেলার পর তা একটু দূরে গাছগাছালিতে আটকে যায়। যে কারণে একই স্থানে লাশ পড়েছিল। হত্যার দায় স্বীকার করে রবিন ও রাব্বি রোববার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর স ব ক র কর
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে সালিশে ধর্ষণের মূল্য দেড় লাখ টাকা!
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নানিবাড়ি বেড়াতে গিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মাদরাসা শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘটনা ঘটলে সম্প্রতি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর স্থানীয় মাতব্বররা গ্রাম্যসালিশের আয়োজন করে অভিযুক্তকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন।
অভিযুক্ত ফিরোজ (৪৫) মির্জাপুরের কুড়িপাড়া গ্রামের নওশের আলীর ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর ভুক্তভোগী ওই শিশু এবং তার পরিবার ভয়ে মুখ না খুললেও সম্প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হয়। ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে স্থানীয় মাতব্বররা গ্রাম্যসালিশের আয়োজন করে। সালিশে অভিযুক্ত ধর্ষককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ৯২ হাজার টাকা ভুক্তভোগী পরিবার পেয়েছে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে পুলিশ ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ফিরোজ শিশুটির নানিবাড়ির পাশের জমিতে সার দিচ্ছিল। এ সময় শিশুটি বড়ই কুড়াচ্ছিল। তখন অভিযুক্ত ফিরোজ কৌশলে শিশুটিকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর ঘটনার কথা কাউকে বললে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ শিশুটিকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। ঘটনার পর বাড়ি ফিরে শিশুটি চুপচাপ থাকায় পরিবারের সন্দেহ হয়। কারণ জানতে চাইলে এক পর্যায়ে শিশুটি পরিবারকে বিষয়টি জানায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় আব্দুল মালেক, ইউনূস, বাবলু, নূরুল ইসলামসহ কয়েকজন মাতব্বর দ্রুত গ্রাম্যসালিশের আয়োজন করে। সালিশে অভিযুক্ত ধর্ষক ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মাতব্বরদের চাপের মুখে সালিশ মেনে নেয় অসহায় পরিবার। তবে জরিমানার পুরো টাকা এখনও তারা পায়নি। এদিকে ঘটনার পর থেকেই ফিরোজ আত্মগোপনে রয়েছে।
ভুক্তভোগী শিশুটির মা জানান, তার স্বামী সৌদি প্রবাসী। তিনি পোশাক শ্রমিক। শুরুতে ঘটনার কথা কাউকে ভয়ে প্রকাশ করতে পারেননি। লোকলজ্জার কারণে মাতব্বরদের করা বিচার তিনি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়ালে তিনি সাহস পেয়ে মামলা করেছেন। এখন তিনি অপরাধীদের উপযুক্ত বিচার চান।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ফিরোজকে প্রধান করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’’
কাওছার//