ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গার দুই যুবককে গুলি করে হত্যার পর ছবি পাঠানো হয় পরিবারের কাছে। চাহিদামতো টাকা না দেওয়ায় খুন করা হয় তাদের। মানব পাচার চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে এভাবেই দিনের পর দিন কেউ হচ্ছেন জিম্মি, কেউবা অমানুষিক নির্যাতনের শিকার, কারও ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। এই চক্র ফরিদপুরের ভাঙ্গা, মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি থানায় বিস্তৃত। গ্রামের সাধারণ মানুষকে মোটা অঙ্কের বেতনের লোভ দেখিয়ে ইতালি পাঠানোর নামে শত শত পরিবারকে সর্বস্বান্ত করছে চক্রটি।
গত শুক্রবার নিহত হৃদয়ের বাবা মিন্টু হাওলাদারের হোয়াটসঅ্যাপে হৃদয়ের লাশের ছবি পাঠায় ওই মাফিয়া চক্র। এর পর থেকেই পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। এরই মধ্যে শনিবার সকাল থেকে পাচারকারীদের স্থানীয় দালাল চক্রের পক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠেন কয়েকজন গ্রাম্য মাতুব্বর। তারা মীমাংসার জন্য বিভিন্নভাবে নিহতের পরিবারকে চাপ দিচ্ছেন। এ চক্রে রয়েছেন স্থানীয় মক্রমপুট্টি গ্রামের দবির মাতুব্বর, জলিল মেম্বার, মিরাজ মেম্বার ও বাবু আকন। দালাল চক্রের পক্ষে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তারা। একদিকে স্বজনহারা বেদনা, অন্যদিকে মীমাংসার জন্য চাপে দিশেহারা নিহতদের পরিবার। ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামে শনিবার গেলে এসব তথ্য জানান নিহতের স্বজন। তবে পাচার চক্রের অন্যতম হোতা স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার মাতুব্বর পলাতক। বন্ধ রয়েছে তাঁর মোবাইল ফোন। আনোয়ারের মাধ্যমেই লিবিয়া যান ওই দুই যুবক।
হৃদয়ের বাবা মিন্টু হাওলাদার বলেন, দু’মাস আগে স্থানীয় তারা মাতুব্বর, আলমাছ মিয়া ও মো.
কুমারখালী গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোর থেকেই শুরু হয় শোকাহত বাড়ি দুটি ঘিরে মানুষের ভিড়। গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পুরো গ্রামে এটিই আলোচনার বিষয়বস্তু। স্থানীয়রা জানান, তাদের গ্রামের নিহত দুই যুবক ও নিখোঁজ আরেক যুবকের কাছ থেকে ইতালি পাঠানোর চুক্তিতে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা নিয়েছে স্থানীয় দালাল চক্র। এদের মধ্যে ভাঙ্গার ঘারুয়ার কুমারখালীর আনোয়ার মাতুব্বর, পাশের মাদারীপুরের রাজৈর থানার শহিদ মিয়া নামে দু’জন এর মূল হোতা। এ ছাড়াও মাদারীপুর, শিবচরসহ কয়েকটি থানায় এ দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মানব পাচার চক্রটি গ্রামের সাধারণ মানুষকে অল্প দিনে বেশি টাকার মালিক হওয়ার লোভ দেখিয়ে ইতালি পাঠানোর চুক্তি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মাফিয়াদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলেই খুন করা হয় লিবিয়ায় নিয়ে। স্থানীয় রেজাউল মিয়া ও
কালাম শেখ জানান, কুমারখালি গ্রামের দালাল আনোয়ার মাতুব্বর গত দুই বছর আগে বিদেশ থেকে গ্রামে আসেন। এরপর থেকেই গ্রামের সাধারণ মানষকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যেই দু’জন খুন হলো। আরেকজন নিখোঁজ রয়েছে। আনোয়ারের সঙ্গে মানব পাচারের বড় একটি সিন্ডিকেট জড়িত, যার নেটওয়ার্ক ফরিদপুরের ভাঙ্গা, মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর; গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি থানায় সক্রিয়। মাস দেড়েক আগে ভাঙ্গার মিয়াপাড়ার শহিদুল ইসলাম ও সাওথার গ্রামের রিংকু খালাসী মারা গেছেন। তারা দু’জন পাতরাইল দিঘিরপাড়ের দালাল বাদশা ফকিরের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার চুক্তিতে লিবিয়ায় যাওয়ার পর খুন হন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
চল্লিশেও টগবগে রোনালদো
বল পায়ে এখনও তাঁর গতি অন্য অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। এখনও যখন সবাইকে ছাপিয়ে ডি বক্সে লাফিয়ে উঠে গোল করেন, মুগ্ধ হয়ে থাকেন সবাই। বিজ্ঞাপনের মডেলিংয়ে এখনও তাঁর সিক্সপ্যাক বডির আকর্ষণ বাজার কাঁপিয়ে দেয়। সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আজ জন্মদিন, পা রাখছেন চল্লিশে। এখনও তিনি স্বপ্ন দেখেন, নতুন নতুন মাইলফলক স্পর্শ করার। ইচ্ছাপূরণের তাড়নায় এখনও টগবগে তরুণ তিনি।
‘আমি যদি ৯২০-৯২৫টি গোল করে ক্যারিয়ার শেষ করি... সেটা আমার কোনো নতুন কিছু বয়ে আনবে না। আমি ইতিহাসের সেরা, সেখানে আমি যদি ১ হাজার গোল করতে পারি, তাহলে সেটা হবে মহান কিছু। যদি সেটা নাও হয়, তাহলেও ভালো। সংখ্যা নিশ্চয় মিথ্যা বলবে না। আমি ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে পরিপূর্ণ একজন। যদি কেউ বলে ক্রিশ্চিয়ানো পরিপূর্ণ খেলোয়াড় নন, তাহলে সেটা মিথ্যা বলা হবে। আপনি এ ব্যাপারে পেলে, মেসি, ম্যারাডোনার কথা বলতে পারেন। আমিও তাদের শ্রদ্ধা করি।’ স্প্যানিশ টিভি চ্যানেল লা সেকসটার ক্রীড়া সাংবাদিক এদু আগিরের নেওয়া সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজেকে মূল্যায়ন করেন রোনালদো।
হাজার গোলের মাইলফলক স্পর্শ করা থেকে এখনও ৭৭ গোল দূরে রোনালদো। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে (এসিএল) আরব আমিরাতের ক্লাব আল ওয়াসলকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে রোনালদোর সৌদি ক্লাব আল নাসর, যা ছিল রোনালদোর ক্লাব ক্যারিয়ারে ৭০০তম জয়। যার মধ্যে স্পোর্টিংয়ের হয়ে জয় ১৩টি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে দুই দফায় জয় মোট ২১৪টি, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৩১৫টি, জুভেন্টাসের হয়ে ৯২টি এবং আল নাসরের হয়ে এখন পর্যন্ত ৬৬টি। যেখানে মেসির ক্লাব ক্যারিয়ারে জয় ৬১৩টি। তবে মেসি যেখানে ম্যাচ খেলেছেন ৭৪৪, রোনালদোর সংখ্যা সেখানে হাজারের বেশি। তুলনাটা তাদের এসেই যায়।
রোনালদোকে ওই স্প্যানিশ সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, মেসির খেলা আমেরিকার মেজর লিগ সকারের মান কি সৌদি প্রো লিগের চেয়ে খারাপ? উত্তরে রোনালদো– ‘অ্যারাবিয়ান লিগের চেয়ে খারাপ এমএলএস, যদিও মানুষ এসব জানে না।’
লম্বা এই সাক্ষাৎকারের পুরোটা প্রকাশ হয়নি এখনও। তবে প্রোমোর কিছু অংশে মেসির সঙ্গে তাঁর পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে কথা বলেছেন রোনালদো। জানিয়েছেন, তাদের দু’জনের সম্পর্কে মানুষ যা ভাবে, আসলে তা নয়। ‘মেসি? আমাদের মধ্যে সুস্থ একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। আমরা ১৫টি বছর ব্যালন ডি’অরের মঞ্চ একসঙ্গে ভাগাভাগি করেছিলাম। আমার মনে আছে, ওই অনুষ্ঠানে সঞ্চালক যখন ইংরেজিতে কিছু বলত, আমি তা তাকে (মেসিকে) অনুবাদ করে শোনাতাম। সেটা মজার একটি ব্যাপার ছিল, সে আমাকে সব সময় ভালো চোখে দেখেছে। অবশ্যই সে তার ক্লাবের হয়ে লড়েছে, আমি আমার ক্লাবের হয়ে। সে তার দেশের জন্য সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, আমিও তাই করেছি। আমার মনে হয়, দুইজনের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা দুইজনের জন্য আরও ভালো খেলতে সাহায্য করেছে। আমার মনে হয়, সে সব বছর সবকিছু খেলতে চাইত, গোল করতে চাইত। আমিও ঠিক তাই চাইতাম। আমি যেমন ক্যাম্প ন্যুতে গিয়ে খেলতে ভীষণ পছন্দ করতাম, সেখানে আমাকে দুয়ো শুনতে হতো, দর্শকরা আমাকে অপমান করতে চাইত; তাও সেটা আমি ভালোবাসতাম। আসলে আমার হৃদয়ে এখনও মাদ্রিদ রয়ে গেছে। এটা এমন একটা দল, যেখানে আমি সবচেয়ে সুখি ছিলাম। সেখানে আমার সুন্দর সব স্মৃতি রয়েছে, কিছু মাইলফলক রয়েছে। সে কারণেই সেখানকার মানুষ আমাকে ভুলতে পারে না। কখনও ভুলতেও পারবে না।’ জন্মদিনের আগে পুরোনো সব স্মৃতির ঝাঁপি যেন খুলে দিয়েছিলেন রোনালদো।