Samakal:
2025-04-11@06:06:45 GMT

তিন জেলায় মানব পাচার চক্রের জাল

Published: 2nd, February 2025 GMT

তিন জেলায় মানব পাচার চক্রের জাল

ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গার দুই যুবককে গুলি করে হত্যার পর ছবি পাঠানো হয় পরিবারের কাছে। চাহিদামতো টাকা না দেওয়ায় খুন করা হয় তাদের। মানব পাচার চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে এভাবেই দিনের পর দিন কেউ হচ্ছেন জিম্মি, কেউবা অমানুষিক নির্যাতনের শিকার, কারও ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। এই চক্র ফরিদপুরের ভাঙ্গা, মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি থানায় বিস্তৃত। গ্রামের সাধারণ মানুষকে মোটা অঙ্কের বেতনের লোভ দেখিয়ে ইতালি পাঠানোর নামে শত শত পরিবারকে সর্বস্বান্ত করছে চক্রটি। 
গত শুক্রবার নিহত হৃদয়ের বাবা মিন্টু হাওলাদারের হোয়াটসঅ্যাপে হৃদয়ের লাশের ছবি পাঠায় ওই মাফিয়া চক্র। এর পর থেকেই পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। এরই মধ্যে শনিবার সকাল থেকে পাচারকারীদের স্থানীয় দালাল চক্রের পক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠেন কয়েকজন গ্রাম্য মাতুব্বর। তারা মীমাংসার জন্য বিভিন্নভাবে নিহতের পরিবারকে চাপ দিচ্ছেন। এ চক্রে রয়েছেন স্থানীয় মক্রমপুট্টি গ্রামের দবির মাতুব্বর, জলিল মেম্বার, মিরাজ মেম্বার ও বাবু আকন। দালাল চক্রের পক্ষে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তারা। একদিকে স্বজনহারা বেদনা, অন্যদিকে মীমাংসার জন্য চাপে দিশেহারা নিহতদের পরিবার। ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামে শনিবার গেলে এসব তথ্য জানান নিহতের স্বজন। তবে পাচার চক্রের অন্যতম হোতা স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার মাতুব্বর পলাতক। বন্ধ রয়েছে তাঁর মোবাইল ফোন। আনোয়ারের মাধ্যমেই লিবিয়া যান ওই দুই যুবক। 

হৃদয়ের বাবা মিন্টু হাওলাদার বলেন, দু’মাস আগে স্থানীয় তারা মাতুব্বর, আলমাছ মিয়া ও মো.

আনোয়ারের মাধ্যমে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠাই। প্রথমে দুবাই, সেখান থেকে সৌদি আরব, তারপর লিবিয়ায় নিয়ে যায় দালাল চক্র। গত জানুয়ারির ২৪ তরিখে শেষ কথা হয় ছেলের সঙ্গে। তখন হৃদয় জানায়, দালাল আনোয়ারসহ কাউকেই যেন ছাড় দেওয়া না হয়। এর পর আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। 

কুমারখালী গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোর থেকেই শুরু হয় শোকাহত বাড়ি দুটি ঘিরে মানুষের ভিড়। গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পুরো গ্রামে এটিই আলোচনার বিষয়বস্তু। স্থানীয়রা জানান, তাদের গ্রামের নিহত দুই যুবক ও নিখোঁজ আরেক যুবকের কাছ থেকে ইতালি পাঠানোর চুক্তিতে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা নিয়েছে স্থানীয় দালাল চক্র। এদের মধ্যে ভাঙ্গার ঘারুয়ার কুমারখালীর আনোয়ার মাতুব্বর, পাশের মাদারীপুরের রাজৈর থানার শহিদ মিয়া নামে দু’জন এর মূল হোতা। এ ছাড়াও মাদারীপুর, শিবচরসহ কয়েকটি থানায় এ দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মানব পাচার চক্রটি গ্রামের সাধারণ মানুষকে অল্প দিনে বেশি টাকার মালিক হওয়ার লোভ দেখিয়ে ইতালি পাঠানোর চুক্তি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মাফিয়াদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলেই খুন করা হয় লিবিয়ায় নিয়ে। স্থানীয় রেজাউল মিয়া ও 
কালাম শেখ জানান, কুমারখালি গ্রামের দালাল আনোয়ার মাতুব্বর গত দুই বছর আগে বিদেশ থেকে গ্রামে আসেন। এরপর থেকেই গ্রামের সাধারণ মানষকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যেই দু’জন খুন হলো। আরেকজন নিখোঁজ রয়েছে। আনোয়ারের সঙ্গে মানব পাচারের বড় একটি সিন্ডিকেট জড়িত, যার নেটওয়ার্ক ফরিদপুরের ভাঙ্গা, মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর; গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি থানায় সক্রিয়। মাস দেড়েক আগে ভাঙ্গার মিয়াপাড়ার শহিদুল ইসলাম ও সাওথার গ্রামের রিংকু খালাসী মারা গেছেন। তারা দু’জন পাতরাইল দিঘিরপাড়ের দালাল বাদশা ফকিরের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার চুক্তিতে লিবিয়ায় যাওয়ার পর খুন হন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

শজনে–উচ্ছে দিয়ে ডালের রেসিপি

ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ