মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীর তীর থেকে আবারও অবৈধভাবে বালু তোলা শুরু হয়েছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে তীরের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রশাসনের বারবার অভিযানের পরও এই বালুদস্যুদের ঠেকাতে না পারায় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। 
স্থানীয় সূত্র জানায়, শিবালয় উপজেলা প্রশাসন ১৭ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে যমুনার বালু লুটে জড়িত ১২ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে ছয়জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮-১০ দিন বালু তোলা বন্ধ ছিল উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া এলাকায়। কিন্তু আবারও বালু লুট শুরু করে একটি চক্র। 
সংবাদ পেয়ে গত শুক্রবার উপজেলা প্রশাসন আরেক দফা অভিযান চালায়। তারা শিবালয়ের ত্রিলোচানপট্টি গ্রামের রাকিব হোসেন, সিরাজগঞ্জ জেলার সাদাতপুর এলাকার রাহুল শেখ, নারায়ণগঞ্জের রিয়াদ হোসেন, শাহ আলী ও বিপ্লব হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। সব মিলিয়ে জানুয়ারিতে  ১৮ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এর পরও আলোকদিয়া এলাকায় বালু তোলা বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বালু তোলার জন্য ওই গ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) ৭ নম্বর বৈদ্যুতিক টাওয়ার থেকে ৮ নম্বর টাওয়ার পর্যন্ত ৬টি ড্রেজার বসানো হয়েছে। 
গ্রামবাসীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার বালু তোলার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাশার। ৫ আগস্টের পর তিনি পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর ব্যবসা এখন দেখাশোনা করছেন বাবু শেখ, জামাল উদ্দিন, মুক্তার হোসেন নামের তিন ব্যক্তি। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। 
আলোকদিয়ার বাসিন্দা আলমগীর হোসেনের ভাষ্য, যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে বালু তোলায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তাদের এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এতে ঘরবাড়িসহ শত শত একর ফসলি জমি নদীতে তলিয়ে যায়। ইতোমধ্যে যমুনা ভাঙতে ভাঙতে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন টাওয়ার, আলোকদিয়া চরের মুজিব কেল্লা, কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাট-বাজারের বিভিন্ন স্থাপনার কাছাকাছি চলে এসেছে।
এলাকাবাসী জানান, বিদ্যুতের ৭ ও ৮ টাওয়ারের পাশে ৬টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। পরে সেখান থেকে বাল্কহেডে করে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া জাতীয় গ্রিডের ৩৩ কিলো ভোল্টের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় টাওয়ারের তলদেশ থেকে মাটি সরে যেতে পারে। 
তেওতা ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোতালেব হোসেন বলেন, মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের টোকেন দিয়ে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল বাশার। তিনি ৫ আগস্টের পর মামলার আসামি হয়ে পলাতক। কিন্তু নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে তাঁর নাম ভাঙিয়েই। 
তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, দ্রুত বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এগুলো আগামী বর্ষায় নদীতে তলিয়ে যেতে পারে।
শিবালয়ের ইউএনও মো.

বেলাল হোসেন বলেন, কাউকেই নদী থেকে বালু তুলতে দেওয়া হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে আবারও অভিযানে যাবেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২

শেরপুরের নকলায় গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায়র আহত হয়েছেন আরো চারজন। 

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে দক্ষিণ নকলা এলাকায় তাদের মারধর করেন এলাকাবাসী।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নকলা থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান। গতকাল রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম।

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে আদালত প্রাঙ্গণে আ.লীগের লিফলেট বিতরণের চেষ্টা, আটক ১

গণপিটুনি দিয়ে ৫ অপহরণকারীকে পুলিশে সোপর্দ

নিহতরা হলেন- ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের গোমড়া এলাকার মৃত মইজ উদ্দিনের ছেলে মুসলিম উদ্দিন (৪৫) ও একই এলাকার মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে আমির হোসেন (৩০)। 

আহতরা হলেন- গোমড়া এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আজি রহমান (১৯), সুরুজ মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া (২৫), আবুল হোসেনের ছেলে আয়নাল হক (৩৪) ও পার্শ্ববর্তী সন্ধ্যাকুড়া এলাকার মো. শাহজাদার ছেলে মো. সাদ্দাম (৩০)।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, গতকাল রাত ১১টার দিকে নকলা পৌর এলাকার শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ছয়জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গরুচোর বলে সন্দেহ করেন স্থানীয়রা। পরে তাদের চিৎকারে লোক জড়ো হয়। এসময় ওই ছয়জনকে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনি দেন স্থানীয়রা। পরে নকলা থানার পুলিশ সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতেই একজনের মৃত্যু হয়। 

অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বাকিদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো একজনের মৃত্যু হয়। তার নাম আমির হোসেন।

শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আব্দুল করিম বলেন, ‍“নিহত মুসলিমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের রাতে ময়মনসিংহ পাঠানোর পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা গেছেন। ওই ঘটনায় নকলা থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।”

নকলা থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ‍“তারা (গণপিটুনির শিকার) চোর কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।”

ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেরপুরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২