ডিজিটাল মাধ্যমে যে কোনো ধরনের ভিডিওচিত্র দেখার কথা বললে প্রথমে যে মিডিয়া সামনে আসে, তা হচ্ছে ইউটিউব। পরিসংখ্যান বলছে, ইন্টারনেট গ্রাহকের এক-চতুর্থাংশ প্রতি সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা বা এর বেশি সময় ইউটিউব ভিডিওতে সময় দেন। তাই অনেকেই, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ইউটিউবের জন্য ভিডিও কনটেন্ট তৈরিকে পেশা হিসেবে বিবেচনা করে কাজ করছেন। শুধু ভিডিও তৈরি করলেই হবে না, ভিডিওর দর্শক (ভিউ) বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশল জানা প্রয়োজন। ইউটিউবে ভিডিওর ভিউ বাড়াতে কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করতে পারেন।
আকর্ষণীয় টাইটেল
নির্বাচিত ভিডিও কনটেন্টে টাইটেল খুবই জরুরি। কারণ দর্শক প্রায়ই টাইটেল দেখে ভিডিওতে ক্লিক করেন। টাইটেল অবশ্যই সংক্ষিপ্ত, আকর্ষণীয় ও তথ্যবহুল হতে হবে। দর্শক যেসব কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্চ করেন, সেসব বিষয় বুঝেই তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। টাইটেলের শব্দসীমা সর্বোচ্চ ৬০ শব্দের মধ্যেই রাখা শ্রেয়।
ভিডিও ডেসক্রিপশনে তথ্য
ভিডিওর ডেসক্রিপশন দর্শক টানতে ও সার্চ ইঞ্জিনের জন্য জরুরি। প্রথম দুই থেকে তিন লাইনে প্রধান কিওয়ার্ড ও ভিডিওচিত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকতে হবে।
ডেসক্রিপশনে ভিডিওর মূল বিষয়, লিঙ্ক, ট্রান্সক্রিপ্ট, অন্যসব সোশ্যাল মিডিয়ার লিঙ্ক ও তিনটি পর্যন্ত হ্যাশট্যাগ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
উপযুক্ত ট্যাগ
ট্যাগ ভিডিওকে একই ধরনের অন্যান্য ভিডিওর সঙ্গে যুক্ত করতে সহায়তা করে। ফলে রিচ বেড়ে যায়। নির্বাচিত কিওয়ার্ডগুলো প্রথম সারিতে রাখতে হবে। প্রয়োজনে লং টেইল কিওয়ার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।
যথাযথ ক্যাটেগরি
ভিডিও আপলোড করার পর ‘ম্যানেজ ভিডিও’ অপশন থেকে সঠিক ক্যাটেগরি নির্বাচন করতে হবে। ইউটিউবের কয়েকটি ক্যাটেগরি, যেমন– ফিল্ম ও অ্যানিমেশন, মিউজিক, নিউজ, এডুকেশন, কমেডি, এন্টারটেইনমেন্ট; এসব থেকে যথার্থ ক্যাটেগরি নির্বাচন করতে হবে।
বৈচিত্র্যপূর্ণ থাম্বনেইল
দর্শকদের প্রথম নজর কাড়ে থাম্বনেইল, যা ভিডিওতে ক্লিক করার হার (সিটিআর) বাড়ায়। ভালো মান ও দৃষ্টিনন্দন থাম্বনেইল তৈরি করতে হবে, যেন তা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণে অব্যর্থ হয়।
টাইমস্ট্যাম্পস কী
দর্শকের সুবিধার জন্য ভিডিওর কয়েকটি অংশকে আলাদা করে টাইমস্ট্যাম্প যুক্ত করা যেতে পারে। ফলে দর্শক ভিডিওর নির্দিষ্ট অংশ সহজে খুঁজে পাবেন, যা ইউটিউব অ্যালগরিদমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কমেন্টের সদুত্তর
ইউটিউব যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, তাই দর্শকদের কমেন্টের যথাযথ উত্তর দেওয়া জরুরি। এটি শুধু এনগেজমেন্ট বাড়ায় না, দর্শক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সম্পর্কের উন্নয়ন করে। কমেন্টের উত্তরে তাদের মতামতের প্রশংসা করা ও বার্তা বিনিময়ে যুক্ত রাখা কার্যকর উপায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কনট ন ট ট ইট ল র জন য ক ত কর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি সেই শিশুর, কাটেনি শঙ্কা
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুর জ্ঞান পাঁচ দিনেও ফেরেনি। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ।
সিএমএইচের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়ায় শিশুটির ফুসফুসের বিভিন্ন জায়গায় বাতাস জমে গেছে। রোববার দুপুরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অতিরিক্ত বাতাস বের করে বুকে টিউব বসানো হয়েছে। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তার মস্তিষ্কেও ক্ষতি হয়েছে।
শিশুটির মা ফোনে সমকালকে জানান, হাসপাতালে মেয়ের শয্যাপাশে আছেন তিনি। কোনো নড়াচড়া নেই। সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
গতকাল রোববার সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শিশুটিকে দেখতে সিএমএইচে যান। খোঁজখবর নিয়ে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। দোষীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন উপদেষ্টা।
জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ
ধর্ষণে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গতকাল মাগুরা আদালত চত্বরের সামনে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করেন। ফলে নিরাপত্তা শঙ্কায় আসামিদের আদালতে হাজির এবং রিমান্ড আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব হোসেন।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, বোনের স্বামী, ভাশুর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে জেলা আদালত চত্বরের সামনে অবস্থান নেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটকে অবস্থান নেন। তারা আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মূল ফটকে তারা বিক্ষোভ করেন। যৌথ বাহিনীর আশ্বাসে বেলা ৩টার দিকে সেখান থেকে সরে ভায়নার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এখানে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে কর্মসূচি।
আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। এর ব্যত্যয় হলে আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
শিশুটির ছবি-ভিডিও অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশ
হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম, অনলাইন পোর্টালসহ যেসব জায়গায় শিশুটির ছবি ও ভিডিও ছড়িয়েছে, তা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব মাধ্যমে শিশুটির ছবি প্রকাশ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও তিন দিনের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ১৩ মার্চের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এসব নির্দেশনা দেন। আদেশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই আদেশে ভুক্তভোগী শিশু ও তার ১৪ বছর বয়সী বড় বোনের স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আট বছরের শিশুটি গত বুধবার (৫ মার্চ) বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। শিশুটিকে আরও উন্নত চিকিৎসার শনিবার বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) স্থানান্তর করা হয়।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম সমকালকে জানান, শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার ৪ আসামি আগেই হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত শনিবার (৮ মার্চ) দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে শিশুটির মা উল্লেখ করেন, বড় মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি হিটুর স্ত্রী ও আরেক ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, চার মাস আগে বড় মেয়ের সঙ্গে সজিবের বিয়ে হয়। এর পর থেকে বড় মেয়েকে তার শ্বশুর অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি ওই পরিবারের সবাই জানলেও প্রতিবাদ করেননি।
মামলায় বলা হয়েছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে শিশুটি ঘুমায়। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই। মেঝেতে পড়ে আছে। তখন সে বড় বোনকে জানায়, গোপনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। বিষয়টি হালকাভাবে নেন তিনি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে একই কথা জানান। তখন তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে শিশুটি জানায়, রাতে দুলাভাই দরজা খুলে দিয়েছিল। তখন তার বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় চিৎকার করার চেষ্টা করলে গলা চেপে ধরা হয়েছিল। পরে তাকে বোনের কক্ষে ফেলে রেখে যায় হিটু শেখ। বোন বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মাকে জানাতে গেলে সজীব ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন। পরে দুই বোনকে দুই কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে সজিবের মা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তিনি।
মেয়েটির বড় বোন সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার ২০ দিন আগে সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। তিনি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যান। সেখান থেকে ফিরে দেখেন ঘরে আলো বন্ধ। এ সময় হঠাৎ একজন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে তিনি বুঝতে পারেন, জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি তার শ্বশুর হিটু শেখ। বিষয়টি স্বামী সজিবকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। পরে বাবার বাড়ি চলে যান। আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন না। বাবা-মা বুঝিয়ে ছোট বোনকে সঙ্গে করে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়ি।