কুশিয়ারা নদীতীরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর নদীবন্দর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এ নৌবন্দরটি জমজমাট থাকলেও কালের পরিক্রমায় হারিয়েছে জৌলুস। নদী ভরাটে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে সড়ক ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অস্তিত্ব হারিয়েছে কুশিয়ারার ব্যস্ততম নদী বন্দরটি। 
জানা যায়, ১৯৪০’র দশকের আগে থেকে কুশিয়ারা নদীর মৌলভীবাজারের শেরপুরে জুড়িন্দা (জোড়া লাগানো দুই নৌকা) দিয়ে গাড়ি পারাপার হতো। পরবর্তীতে যানবাহন চলাচলে ফেরি সংযোজন করা হয়। তখন কলকাতা থেকে করিমগঞ্জ যাতায়াতকারী বিভিন্ন ছোট-বড় জাহাজ শেরপুর ঘাটে লাগত। ব্যবসায়ীদের প্রচুর মালপত্র ওঠানামা করা হতো। এ ছাড়া অনেক যাত্রী জাহাজে যাতায়াত করতেন। সে সময়ে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পর্যন্ত লঞ্চযোগে মানুষ যাতায়াত করতেন। এসব লঞ্চের একটি ট্রানজিট পয়েন্ট ছিল শেরপুর নদী বন্দর। ১৯৬৫ সালের দিকে শেরপুরে লঞ্চঘাটের কলেবর বৃদ্ধি ঘটে। সে সময়ে রড, সিমেন্টসহ মালপত্র বহনকারী অনেক কার্গো, সারি সারি নৌকা এ ঘাটে বাঁধা থাকত। 
শেরপুর নৌবন্দর এলাকার হোটেল মালিক ফজলু মিয়া জানান, এক সময় দিন-রাত মানুষের আনাগোনা ছিল শেরপুর নদী বন্দরে। বিকল্প যাতায়াতের পথ না থাকায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, দিরাম, শাল্লা, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গের মার্কুলী, আজমিরিগঞ্জ উপজেলার বৃহদাংশের মানুষ শেরপুর বন্দর নিয়ে চলাচল করত। এ নৌপথে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০-১২টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করত। তখন সব সময় মানুষের ভিড় লেগে থাকত। প্রচুর বেচাকেনা হতো। এখন আর লঞ্চ-নৌকা চলে না, জেটিঘাটও নাই। 
শেরপুর বন্দরের সাবেক জেটিঘাট ইজারাদার আব্দুল হেকিম (৯০) বলেন, এ নৌবন্দর থেকে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ৯০’র দশক থেকে ৮-১০ লাখ টাকা রাজস্ব পেত। কুশিয়ারা নদী ভরাটের ফলে লঞ্চ, কার্গো ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় নৌ পথে যাতায়াতের প্রতি মানুষের আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে। এতে ২০১৮ সালের পর থেকে লঞ্চঘাটটি কেউ ইজারা নেয় না। এক পর্যায়ে শেরপুর বন্দরে নৌযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।  
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, নৌবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় শতশত খেয়া নৌকার মাঝি বেকার হয়ে পড়েছেন। নৌবন্দর এলাকার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের ভাষ্য, কুশিয়ারা নদীকে গভীর খনন প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হলে শেরপুর নৌবন্দর হারানো গৌরব ফিরে পাবে। 
শেরপুর এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা খালিদুর রহমান (৮৭) বলেন, আজকের সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর অংশে কুশিয়ারা নদী যানবাহন পারাপারে ১৯৪০’র দশকে জুড়িন্দা ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর ব্যারাক ছিল শেরপুর জেটিঘাট সংলগ্ন ভূমিতে। ঐতিহ্যবাহী শেরপুর বন্দরটি চালু করতে এবং সিলেট অঞ্চলের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে নদী খনন জরুরি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালে ২২ মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৪১, গ্রেপ্তার ৫৪

পুনর্গঠনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি করা হয়েছে ১৪১ জনকে। আসামিদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৮৭ জন পলাতক।

আজ বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়ার অগ্রগতিবিষয়ক আপডেট’–বিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন হলে এখানে এখন পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৩৩৯টি। চলমান তদন্ত কার্যক্রম ৩৯টি। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে ২২টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আছেন ৮৭ জন।

১৪১ আসামির মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, ৬২ জন পুলিশ (র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর) সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত বা বরখাস্ত করা সামরিক কর্মকর্তা ৯ জন।

শেখ হাসিনাসহ চারটি মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের উপস্থাপন করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ পর্যন্ত তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে—এমন মামলা চারটি। এর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা, সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা, রাজধানীর চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা এবং রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তির ওপর গুলির ঘটনায় হওয়া মামলাটি রয়েছে।

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দাখিল করা হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।

এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিও ও ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ (এক হাজারের বেশি ভিডিও), পর্যালোচনা, যাচাই–বাছাই ও জিও লোকেশন যাচাইয়ের কাজ চলমান।

গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোডনেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫টি জেলায় তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা পর্যায়ে এ পর্যন্ত চারটি গণশুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে আট শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ